Alapon

আসুন জেনে নেই, দুআ কবুল হওয়ার সহজ ফর্মূলা...



কিছুদিন আগেই এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। বিশ্বময় করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারে রেজাল্ট নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পরেই প্রকাশিত হয়েছে। রেজাল্টের এক সপ্তাহ পর এলাকার এক ছোট ভাই আমাকে ম্যাসেজ করল এবং বলল, ‘ভাইয়া, আমি আল্লাহর কাছে আর কোনোদিনই কিছু চাইবো না। পরীক্ষার পর থেকেই আল্লাহর কাছে অবিরত দুআ করে যাচ্ছিলাম যেন এ প্লাসটা পাই। কিন্তু আল্লাহ আমার দুআ কবুলই করলেন না। তাই আমি আর দুআ করব না।’

ওর কথা শুনে হাসলাম। আল্লাহর সাথে এমন মিছেমিছি অভিমান আমিও জীবনে বহুবার করেছি। আব্বার এক প্রফেসার বন্ধু ছিল। বড়ই অদ্ভুদ মানুষ ছিলেন। উনি একবার আল্লাহর সাথে অভিমান করে তিনদিন নামাজ পড়েননি। কারণ, তিনি তার বড় ছেলের বিসিএসের জন্য আল্লাহর কাছে খুবই দুআ করেছিলেন। কিন্তু সেবার তার ছেলের বিএসএস হয়নি। যার কারণে তিনি আল্লাহর সাথে বিরাট অভিমান করলেন।

আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অহরহ পাওয়া যাবে। দুনিয়ায় হয়তো এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না, যে কখনো হতাশ হয়ে বলেনি, ‘আল্লাহ আমার দুআ কবুলেই করেন না।’

আল্লাহ দুআ কবুল করেন না, এ কথাটি আদৌত সত্য নয়। আল্লাহ সব দুআই কবুল করেন। কোনো দুআ তিনি ইহকালের জন্য কবুল করেন, আবার কোনো দুআ পরকালের জন্য কবুল করেন।

খেয়াল করে দেখুন, যখন আপনি অফিসের বসের কাছে ইনক্রিমেন্ট অথবা অন্য কোনো আবদার নিয়ে যান তখন কিন্তু আপনাকে বেশ কিছু ফর্মূলা অনুসরণ করেই যেতে হয়। যেন কোনো কিছু আবদার করলে তা ফিরিয়ে না দেয়। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহর দরবারে দুআ করার জন্য কিছু ফর্মূলা অনুসরণ করতে হয়। এই ফর্মূলাগুলো অনসুরণ করলে দুআ কবুল হবার সম্ভাবনা বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। চলুন তাহলে দুআ কবুল হওয়ার ফর্মূলাগুলো জেনে নেই-


পবিত্র অবস্থায় দুআ করা: পবিত্র অবস্থায় দুআ করলে অর্থাৎ অজুর মাধ্যমে পবিত্র হওয়ার মাধ্যমে দুআ করলে সেই দুআ অনেক বেশি ফলপ্রসু হয়। সেই সাথে উত্তম পোশাক পরা। আল্লাহ নিজে সুন্দর তাই তিনি সুন্দর সবকিছুই পছন্দ করেন। পবিত্র অবস্থায় উত্তম পোশাক পরে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে দুআ করলে, সেই দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুনে বৃদ্ধি পায়।

বিনয়ের সাথে দুআ করা: খেয়াল করে দেখুন, আপনি যখন মাদ্রাসার সুপারের কাছে ফর্ম ফিলাপের টাকা কমানোর আবদার নিয়ে যান, তখন কতটা কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে থাকেন। এখন আপনি আছেন এই পৃথিবীর অধিপতির সামনে। তারমানে আপনাকে আরও অনেক বেশি বিনয়ী হতে হবে। বিনয়ের সাথে হাত তুলে দুআ করতে হবে। হাত তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন ‘আল্লাহর নিকট হাত তুলে হাতের তালু সামনে রেখে দুআ কর। হাত উল্টো করো না। দু্আ শেষে উত্তোলিত হাত মুখে বুলিয়ে নাও।’ -আবু দাউদ

কাতর কণ্ঠে দুআ করা: মিনতি ও কাতরতার সঙ্গে দুআ করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। রাসূলে (সা.) বলেছেন, ‘দুআ সব ইবাদতের মজ্জা ও সারাংশ।’

আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ পাঠ করা : আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফ পাঠ করার মধ্য দিয়ে দুআ করা। এছাড়াও মহান আল্লাহর গুনবাচক নামগুলো সম্বোধন করে দুআ করলে সেই দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে মহান আল্লাহও বান্দার মুখে নিজের সিফাতি নাম শুনতে ভীষণ পছন্দ করেন। যেমন, ইয়া মালিক, ইয়া খালিক, ইয়া রাজ্জাক, ইয়া মতুকাব্বির, ইয়া মুগনি, ইয়া মালিকু, ইয়া রাহিমু। এছাড়া ইসমে আজমের সাথে দুআ করা উত্তম। হজরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইসমে আজম এই আয়াতদ্বয়ে রয়েছে-

১. ‘ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদুন লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানুর রাহিম।’ -সূরা বাক্বারা : ১৬৩
২. ‘আলীফ লাম মীম। আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম।’ -সূরা আল ইমরান : ১

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূলে কারিম (সা.)-এর নিকট বসেছিলাম। একজন লোক সেখানে নামাজ পড়ছিল। সে তার দুআর মধ্যে আরজ করল, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আমার প্রয়োজন প্রার্থনা করছি এই ওসিলায় যে, প্রশংসা ও গুনকীর্তণ আপনার জন্যই উপযুক্ত। আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি পরম দয়ালু ও অসীম অনুগ্রহদাতা এবং পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলীর স্রষ্টা। আমি আপনার কাছেই আপনার অনুগ্রহ চাই। ইয়া হাইয়্যু ইয়া কাইয়্যু! ইয়া জালজালালী ওয়াল ইকরাম! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ বান্দা আল্লাহর ইসমে আজমের ওসিলায় দুআ করেছে। এ উসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করলে দুআ কবুল হয় এবং আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে, আল্লাহ তা দান করেন। -তিরমিজি

হজরত ফুজালা ইবনে উবায়দা (রা.) বর্ননা করেন, রাসূলে কারিম (সা.) একবার এক ব্যক্তিকে দুআ করতে শুনলেন। সে দুআয় আল্লাহপাকের প্রশংসা করল না এবং রাসূল (সা.)-এর ওপর দরুদও পাঠ করল না। এতে রাসূলে আকরাম (সা.) বললেন, লোকটি তড়িঘড়ি করে দুআ করেছে। তিনি লোকটিকে ডেকে আনলেন এবং তাকে অথবা উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নামাজ পড়ে তখন দুআ করার পূর্বে তার উচিত আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করে নেয়া ও রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠ করা। এরপর যা ইচ্ছা তা চাওয়া। -তিরমিজি ও আবু দাউদ

অপর এক হাদিসে এসেছে হজরত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুআ করার পূর্বে দরুদ শরীফ পড়ে, তার দুআ অবশ্যই কবুল হয়। মহান আল্লাহতায়ালা অসীম দয়ালু; দুআর কিয়দাংশ কবুল করে অপর অংশ কবুল না করা তার স্বভাব নয়।

হজরত আবু সোলায়মান দারানী (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কোনো দুআ করে, তার উচিত, প্রথমে দরুদ পড়া এবং দরুদ পড়ে দু শেষ করা। কেননা আল্লাহ উভয় দরুদ কবুল করেন। -কিমিয়ায়ে সাআদাত

পঠিত : ৪৭৫ বার

মন্তব্য: ০