Alapon

কৃষিতে কোটিপতি ১০ কৃষকের গল্প!



কৃষিতে কোটিপতি ১০ কৃষকের গল্প!

হ্যাঁ কৃষিকাজ করেও যে কোটিপতি হওয়া যায় তার কিছু প্রমাণ পাবেন এই লেখায় এবং সংশ্লিষ্ট ভিডিওতে। করোনার কারণে কৃষিখাতই সবচেয়ে কার্যকরী ও টেকসই হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এখন।

ভিডিও: :https://youtu.be/Kf3y0Xwcj68

১. খামার করে কোটিপতি নুরুন্নাহার
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী নুরুন্নাহার। কৃষি কাজ করে নিজের ভাগ্য উন্নয়ন করে দেশজুড়ে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন। তিনি মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেছিলেন তার এই কৃষি কাজ। এখন তার প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার সম্পত্তি। কৃষিতে বিপুল অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। সবজি, ফলমূল, পোল্ট্রি এবং গাভির খামার করে নিজের সফলতার পাশাপাশি এলাকার ১ হাজারের বেশি নারীকে সংগঠিত করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে টিভি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলা শুরু করেন। এরপর আর থেমে থাকেননি নুরুন্নাহার।

২. ঘাস চাষে কোটিপতি গাইবান্ধার আব্দুল গফুর
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সুলতানপুর বড়ইপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর। বয়স ৫০। এক সময় নুন আনতে যার পান্তা ফুরাত, এখন তিনি কোটিপতি। নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ ও বিক্রি করে বর্তমানে ১০ বিঘা জমি, পাকা বাড়িসহ সোয়া কোটি টাকার মালিক আব্দুল গফুর। ২০০৫ সালের কথা, তখন দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে টাকা দিয়েছিলেন দালালকে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আব্দুল গফুরের । পরে স্ত্রীর পরামর্শে সমিতি থেকে সাত হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গাভী কেনেন। পরে গাভীর ভালো খাবার যোগাড় করতে গিয়ে জানতে পারেন নেপিয়ার ঘাসের কথা। সেই নেপিয়ার ঘাসই তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। প্রথমে নিজেই পাঁচ শতক জমিতে ঘাস লাগান। ধীরে ধীরে তিনি ঘাস চাষের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভিত্তিতে নিজের ১০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেন। খামারের আয় ছাড়াও প্রতিমাসে ঘাস বিক্রি করছেন প্রায় ৮০- ৯০ হাজার টাকা।

৩. সবজি চাষে কোটিপতি আমির হোসেন
সবজি চাষে কোটিপতি হয়েছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমীর হোসেন। ৬ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ শুরু করে এখন কোটি টাকার ওপরে সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। সবজি চাষ করে নিজ প্রচেষ্টায় শূন্য থেকে কোটিপতি হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা । বর্তমানে বসতবাড়ির চারপাশে বর্গাসহ মোট ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছেন তিনি। শুধু সবজি নয়, মালটা চাষেও তিনি সফলতা পেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫ শতক জমিতে ১০০টি পেঁপের চারা লাগান আমির হোসেন। ওই জমিতেই সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেন আদা। এভাবে বছর খানেক চলার পর সবজি বিক্রির টাকা জমিয়ে ১ বিঘা জমি কিনে নেন। সেখানেও একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি পেঁপে, হলুদ, কলা, লেবু, কচু, মরিচ, ধান, আঁখ, আদা, নেপিয়ার ঘাস, কুমড়া, শসা, ধনচে, পটলসহ বিভিন্ন ফসলের সমন্বিত চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। পাশাপাশি ১ একর জমিতে করেছেন উন্নত জাতের মালটার বাগান। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে চাষে সফল চাষী হিসেবে এভাবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

৪. লঞ্চের কলা বিক্রেতা থেকে কোটিপতি চাষী
একসময়ের লঞ্চের কলা বিক্রেতা আজ কোটি টাকার সবজি ও মৎস্যচাষী। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিবুপদ রায়। ২৬৭ একর জমিতে করেছেন সমন্বিত সবজি ও মৎস্য খামার। তার খামার থেকে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার কৃষিপণ্য ও মাছ বিক্রি করা হয়। পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় যে মানুষকে সফলতা এনে দেয়, নড়াইলের শিবুপদ রায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ৭১’সালে তার বয়স যখন ১১ বছর, মুক্তিযুদ্ধে বাবাকে হারান শিবুপদ। এরপর থেকেই মা ও দুই বোনকে নিয়ে শুরু জীবনযুদ্ধ। নড়াইলের কালিয়া থেকে বড়দিয়া এবং খুলনার দৌলতপুর পর্যন্ত লঞ্চে কলা বিক্রি করতেন শিবুপদ। ৩০০ টাকা বেতনে দোকান কর্মচারীর কাজও করেন কিছুদিন। উপার্জনের জমানো ১৬ হাজার ৬০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ১৯৭৮ সালে কালিয়া বাজারে নিজে একটা দোকান শুরু করেন। এরপর ১০ একর জমি লিজ নিয়ে করেন চিংড়িমাছের ঘের। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি শিবুপদকে। কালিয়া উপজেলার ভক্তডাঙ্গা বিলে গড়ে তুলেন বিশাল এই কৃষি খামার। ঘেরের পাশাপাশি করেছেন রাইসমিলও।

৫. হাঁসের খামার করে কোটিপতি জাকির:
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলচারা গ্রাম। এই গ্রামে জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্স অ্যাগ্রো ফার্ম হ্যাচারি গড়ে তুলেছেন খামারি জাকির হোসেন। স্বপ্নের গল্পটা শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। পুঁজি ছিল মাত্র দেড় হাজার টাকা। সেই টাকায় ১১৫টি হাঁস কিনে খামারটির যাত্রা শুরু করেন তিনি। ১৭ বছর পর আজ সেই খামারটি জেলার সবচেয়ে বড় হাঁসের খামারে রূপ নিয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি হাঁস। পাশাপাশি জাকিরের খামারে আছে ৮০টির মতো ভেড়া। করেছেন মাছের চাষও। সফল খামারি হিসেবে জাকির হোসেন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার। খামার থেকে প্রতিদিনি ৮-৯ হাজারের বেশি ডিম সংগ্রহ করেন জাকির। প্রতিটি ডিম সাড়ে সাত টাকা দরে প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার এবং মাসে প্রায় ১৮ লাখ টাকা আয় হয় জাকিরের। এছাড়া হাঁসের মাংস বিক্রি করে মাসে আয় হয় আরও প্রায় লাখ টাকা। যা থেকে হাঁসের খাবার, কর্মচারীদের বেতন দিয়ে প্রতি মাসে জাকির হোসেনের লাভ থাকে প্রায় ১০ লাখ টাকা। শুনতে স্বপ্নের মতো মনে হলেও এটাই বাস্তব।

৬. শৌখিন মাছে কোটিপতি রংপুরের মৃদুল:
রংপুরের ব্যবসায়ী ও শৌখিন মাছ চাষী রবিউল ইসলাম মৃদুল। শখের বশে মাছের খামার গড়ে কয়েক বছরে রূপ দিয়েছেন কোটি টাকার বাণিজ্যে। ঘরোয়া পরিবেশে ছোট পরিসরেই গড়ে তুলেছিলেন শৌখিন অ্যাকুরিয়ামের মাছের পোনা উৎপাদনের খামার। বাড়ির সামনে স্বল্প পানির কিছু চৌবাচ্চা বানিয়ে প্রাকৃতিকভাবে রঙিন সব মাছের পোনা উৎপাদন করেন মৃদুল । ক্ষুদ্র মাছগুলোর একেকটি পোনার দামই ৭০-১০০ টাকা । শখের বশে শুরু করেই আজ এই শৌখিন মাছের খামার কোটি টাকায় নিয়ে পৌঁছেছেন উদ্যোক্তা মৃদুল রহমান। প্রতিবছর কাটাবনের লাখ লাখ টাকার মাছের পোনা সরবরাহ করা হয় তার এই খামার থেকে।

৭. সাধারণ মাছ চাষী থেকে কোটিপতি হ্যাচারি মালিক আব্দুল্লাহ:
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার খামারি আব্দুল্লাহ। শুরু করেছিলেন পুকুরে মাছ চাষ দিয়ে। একদিন পুকুর থেকে ধরা ডিমওয়ালা মাছ দেখে তার চিন্তা মাথায় আসে মাছের ডিম থেকে পোনা উৎপাদনের। শুরু করেন গবেষণা অবশেষে সফলও হন। আজ থেকে ১৫ বছর আগে শুরু করা এই হ্যাচারি আজ প্রায় ৩০ বিঘা জমির উপর। হ্যাচারির পাশাপাশি মাছ চাষের জন্য আছে বিশালাকৃতির কয়েকটি পুকুর। তার খামার থেকে পাবদা, গুলশা, রুই কাতলাসহ বিভিন্ন মাছের পোনা কিনে নিয়ে যান নীলফামারীসহ পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, রংপুর ও লালমনিরহাটের ব্যবসায়ী ও খামারিরা।

৮. ছাগলের খামার করে কোটিপতি মধুখালীর সাবিনা
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামের সাবিনা ইয়াসমিন। শৈশব থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার ভিতর দিয়ে বড় হওয়া সাবিনার জীবনের গল্পটা মোটেও সরল নয়। অভাবের বোঝা ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো খুব কঠিন ছিল তার পক্ষে। কৃষিই যে জীবন পাল্টে দিতে পারে এ বিশ্বাস তিনি পেয়েছিলেন পাশের বাসার টিভিতে কৃষি অনুষ্ঠান দেখেই। শুরুটা একেবারেই শূন্য থেকে। গোটা কয়েক ছাগল দিয়ে শুরু করে আজ চার বিঘা আয়তনের বিশাল এক সমন্বিত পশু খামারের মালিক তিনি। ফরিদপুরের কামারখালীতে গড়ে তুলেছেন তার আলিফ এগ্রোভেট কোম্পানি লিঃ। তার খামারে ৪৫টি গরু রয়েছে। ছাগল আছে ২০০টি। দিন দিন বেড়েই চলেছে তার এই কৃষি কার্যক্রম। ৩২টি গাভী থেকে প্রতিদিন ২২০ লিটার দুধ পাচ্ছেন। ছাগল, গরু, দুধ ও বাছুর মিলিয়ে প্রতিবছর তার আয় প্রায় কোটি টাকা।

৯. ৪টি মুরগির ডিম দিয়ে শুরু করে কোটিপতি খামারি
ফুল আর পাটালিগুড়ের জেলা যশোরের কেশবপুর উপজেলার খামারী নাজমুল হুদা। ১৯৮৩ সালে ইমাম প্রশিক্ষণের সময় পোল্ট্রি খামারের ধারণা পেয়েছিলেন নাজমুল। সেই চিন্তা থেকে ১৯৮৫ সালে ৪টি মুরগীর ডিম দিয়ে শুরু হয় স্বপ্ন বোনা। আজ তার কোটি টাকার খামার ও হ্যাচারি আজাদ পোল্ট্রি এন্ড ব্রীডার্স। বলা যায় তার মাধ্যমেই যশোরে পোল্ট্রি শিল্প যাত্রা শুরু করে। মাংস উৎপাদনের ব্রয়লার, ক্রয়লার ও সোনালী মুরগির খামারের পাশাপাশি নিজস্ব ইনকিউবেটর মেশিনে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করেন ফরিদপুরসহ পার্শবর্তী জেলাগুলোতে। শুধু বাচ্চা উৎপাদনই নয় নিজেই মুরগির খাবারও উৎপাদন করে থাকেন নাজমুল। শুধু নিজেই ধনী হওয়া নয় বেকারত্ব দূরীকরণের মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নাজমুল হুদা।

১০. গরুর খামার করে কোটিপতি সাহিদুল
১৯৭৮ সালের ৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মশুরাকান্দা গ্রামে সাহিদুলের জন্ম। বাবা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম। সম্বল ছিল ১৬ কাঠা জমি। অনেক কষ্টে লেখাপড়া করেছেন সাহিদুল। কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মেসে থাকতেন। নিজের খরচ যোগাতেন টিউশনি করে। মেস মালিকদের খারাপ আচরণে তার ভেতরে একসময় ক্ষোভ জাগে। স্বপ্ন দেখেন একদিন নিজেই একটি বাড়ি করবেন তাও ব্যবসা করে। ছাত্রাবস্থায় জমানো টাকায় গ্রামে গরু কিনে লাভ ভাগাভাগির শর্তে বর্গা দিতেন। একসময় ভালো চাকরিও পেয়ে যান কিন্তু কৃষির শখ তার মাথা থেকে যায় নি। ২০১১ সালে চাকরি ছেড়ে জমানো বেতনের টাকায় শুরু করেন গরুর খামার। সেবছর ভালো লাভও পান। এরপর বাড়তে থাকে তার খামার। কিনে ফেলেন পাশের ৩ বিঘা জমি। গরুকে খাওয়ানোর জন্য ঘাস ও ভুট্টা চাষও শুরু করেন। এখন প্রতিবছর ৭০টিরও বেশি গরু পালন করেন সাহিদুল। যা থেকে প্রতিবছর তার লাভ হয় ৩০-৩৫ লাখ টাকা।

১. https://youtu.be/ghrA5xsd6uE
২. https://www.prothomalo.com/special-supplement/article/673504
৩. https://www.jagonews24.com/country/news/504313
৪. https://www.ekushey-tv.com
৫. https://youtu.be/TbdlMGLPj9Y
৬. https://youtu.be/MrXu0QJA5hk
৭. https://youtu.be/NZ30DfhmpgE
৮. https://youtu.be/www0hkL17QE
৯. https://youtu.be/Ewn2NxY5R38
১০. https://www.prothomalo.com/bangladesh/article
https://youtu.be/6H1Dwz93dvg

Pixabay, News Videos & Creative Commons

পঠিত : ১৪২৩ বার

মন্তব্য: ০