Alapon

ইসতেগফার-এর ফজিলত এবং কিছু কথা...


ইসতেগফার এমন এক নিয়ামত, যা মানুষকে আল্লাহর কাছে বান্দাকে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ হিসেবে কবুল করে নেয়। ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ হলো এমন ব্যক্তি, যে দোয়া করতে দেরি; কবুল হতে মুহূর্ত দেরি হয় না।

আর ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ হিসেবে নিজেকে তৈরির অন্যতম আমল হলো আঠার মতো ইসতেগফারের সঙ্গে লেগে থাকা। ওঠতে বসতে চলতে ফিরতে সদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পার্থনার নিয়তে ‘আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ; পড়তে থাকা।

এ ইসতেগফারের কারণেই ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ এক রুটিওয়ালার শেষ দোয়াটিও আল্লাহ তাআলা অভিনবভাবে কবুল করলেন এবং যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের সঙ্গে দেখা করালেন। রুটিওয়ালার সে ঘটনা মুমিন মুসলমানকে মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ হতে আগ্রহী করে তুলবে ইনশাআল্লাহ।

যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হজরত আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহমাতুল্লাহি আলাইহির জীবনে রয়েছে এমন এক স্মরণীয় ঘটনা। ইসতেগফারের কারণে যেভাবে আল্লাহ তাআলা এক রুটি বিক্রেতাকে মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ হিসেবে কবুল করেছেন

জগৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি সারাজীবন হাদিস সংগ্রহে কাটিয়ে দিয়েছেন। একবার তিনি বৃদ্ধ বয়সে শেষ জীবনে হাদিস সংগ্রহে এক সফরে বের হয়েছেন।

সফরের সময় একদিন এক মসজিদে মাগরিব আর ইশা নামাজ আদায় করেন। সময়টি ছিলো শীতকাল। তিনি চিন্তা করলেন ফজরের নামাজ পড়েই এ মসজিদ থেকে বিদায় গ্রহণ করবেন।

সে লক্ষ্যে তিনি মসজিদে বসে শীতের কাপড় মুড়ি দিয়ে তিনি হাদিস পড়া শুরু করলেন। এমন সময় মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণকারী ব্যক্তি এসে বললেন, রাতে মসজিদে থাকা যাবে না।

মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল অনেক বিনয়ের সঙ্গে বলার পরও মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণকারী ব্যক্তি শুনলেন না। নিরুপায় হয়ে তিনি মসজিদ বের হয়ে পড়লেন। শীতের রাতে তিনি এক বাজারে পৌছলেন। সেখানে এক যুবক রুটিওয়ালার দোকান খুঁজে পেলেন।

মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল যুবক দোকানদারকে সালাম দিয়ে বললেন, হে যুবক! শীতের রাত, আমি কি তোমার কাছে আগুন পোহাতে পোহাতে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারি?

দোকানদার যুবক বললেন, ‘আহলান, ওয়া সাহলান! আপনাকে স্বাগতম। এটা আমার খোশ নসিব। আপনি এখানে আগুন পোহাতে পোহাতে রাত কাটিয়ে দিলে আমার সমস্যা কী?

মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল চুলার কাছে বসে বসে হাদিস পড়া শুরু করে দিলেন। কিন্তু তিনি যুবকের একটা জিনিস লক্ষ্য করলেন যে-

যুবক রুটি খামির তৈরি করতে বলেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, বেলুন দিয়ে রুটি বানাতে গিয়ে বলেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, ক্রেতার হাতে রুটি তুলে দিতে গেলে বলেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’, টাকা নিতে গিয়েও বলেন, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ অর্থাৎ সব কাজেই যুবকটি শুধু পড়ছে, ‘আসতাগফিরুল্লাহ’।

যুবকের ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ পড়ার এ বিষয়টি দেখে মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বলের কৌতুহল বেড়ে গেল। তিনি ভাবনায় পড়ে গেলেন। তিনি হাদিসের কিতাব বন্ধ করে যুবককে বললেন, হে যুবক! তোমার হয়েছি কী? আসার পর থেকেই দেখছি তুমি কিছুক্ষণ পর পর শুধু পড়ছো- ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ ‘আসতাগফিরুল্লাহ’।

মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বলের প্রশ্ন- ঘটনাটা কী? কেন তুমি এত বেশি ইসতেগফার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ পড়ছো?

এবার যুবক বলল, এটা আমার চিরাচরিত আমল। এ আমলটা আমি সব সময় করে থাকি। আমি সব সময় ইসতেগফারের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকি। আর এ আমলের ফলে আল্লাহ তাআলা আমাকে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’ বানিয়ে দিয়েছেন। আমি দোয়া করলেই তা কবুল হয়ে যায়। এ জীবনে আমি হাত তুলে যত দোয়া করেছি, যখনই আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নিয়েছেন।

যুবকের এ কথা শুনে মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল একেবারেই অবাক। তিনি যুবককে আবারও প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’? তুমি দোয়া করলেই কবুল?

যুবক বললেন, ‘হ্যাঁ’, আমি দোয়া করলেই কবুল। তবে আমার একটা দোয়া এখনো কবুল হয়নি। সেটি ছাড়া আল্লাহ আমার সব দোয়া কবুল করে নিয়েছেন।

এবার মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বলের আগ্রহ-কৌতুহল আরো বেড়ে যায়। তিনি যুবককে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার সে দোয়াটা আবার কী? যা এখনো কবুল হয়নি।

এবার যুবক রুটিওয়ালা বললেন, আমার যে দোয়াটা কবুল হয়নি, আমি আল্লাহর কাছে অনেকবার দোয়া করেছি যে, আয় আল্লাহ! আমি শুনেছি এ জামানার সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস, তার নাম নাকি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল।

আল্লাহ তোমার কাছে আমার আকুতি ও মিনতি, আমি যেন এত বড় মুহাদ্দিস-এর হাতে হাত রেখে মোসাফাহ করতে পারি আর তাঁর কপালে একটা চুম্বন করতে পারি।’ আমার এ দোয়া এখনো পূরণ হয়নি। আল্লাহ যে কেন আমার এ দোয়াটা কবুল করে না, তা আমি জানি না।

এবার মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল আবেগ প্রবণ হয়ে গেলেন। আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন। তখন মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বল যুবককে বললেন- ‘হে যুবক! আহমাদ ইবনে হাম্বলের সঙ্গে দেখা করার জন্য, তাঁর দরবারে যাওয়ার দরকার নেই। তোমার এ দোয়াও আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিয়েছেন। আহমাদ ইবনে হাম্বলকে তোমার সঙ্গে দেখা করানোর জন্যই এখানে নিয়ে এসেছে। আহমাদ ইবনে হাম্মাল তোমার কাছে ছুটে এসেছে। আমিই হচ্ছি আহমাদ ইবনে হাম্বাল।’ (সুবহানাল্লাহ)

যুবকও নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসকে জড়িয়ে ধরে আহমাদ ইবনে হাম্বলের হাত ধরে মোসাফাহা করলেন এবং কপালে চুমু খেয়ে কাঁদতে লাগলেন। আর মুহাদ্দিস আহমাদ ইবনে হাম্বালের কাছে দোয়া চেয়ে বললেন-‘হে ইমাম! রাব্বুল আলামিন আমার কোনো দোয়া বাকি রেখে দেননি। যা একটা বাকি ছিল তাও আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিয়েছেন। এ হচ্ছে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’।

সুতরাং যদি কোনো বান্দা ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ অর্থাৎ ইসতেগফারের সঙ্গে আঠার মতো লেগে থাকে তবে সে হবে ‘মুঝতাঝাবুদ দাওয়াহ’। আল্লাহ তাআলা ইসতেগফারের কারণে বান্দার সব চাওয়া পূরণ করে দেবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় বেশি বেশি ইসতেগফারের সঙ্গে লেগে থাকার তাওফিক দান করুন। সুন্নতে নববির অনুসরণ ও অনুকরণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

জগৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস হজরত আহমাদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জীবনী হতে সংগৃহিত।

সংগৃহিত

পঠিত : ১৬৩৫ বার

মন্তব্য: ০