Alapon

আর কতটা লুটপাট করলে লুটেরাদের পেট ভরবে...?


সকালবেলা ল্যাপটপে পত্রিকার ওয়েবসাইডে ঢুকতেই একটা ভালো খবর পেলাম। রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক প্রতারক সাহেদ গ্রেফতার হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করার পর ঢাকঢোল পিটিয়ে সাতক্ষিরা থেকে হ্যালিকপ্টারে করে ঢাকায় উড়িয়ে আনা হয়েছে। এখন দিনভর টিভির স্ক্রীনে তাকে কীভাবে গ্রেফতার করা হল সেই সফলতার গল্প দেখানো হচ্ছে। র‌্যাব কর্মকর্তারা হাসি হাসি মুখ করে টিভি ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে সেই বর্ণনা দিচ্ছেন। আর আমরাও তাদের সফলতার গল্প গো-গ্রাসে গিলছি; বরাবরই তা-ই করি।

এর আগে ক্যাসিনো ইসুতে সম্রাট ও জিকে শামীমকেও গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হাসি হাসি মুখ করে টিভি ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে তাদের গ্রেফতারের সফলতার গল্প জাতিকে শুনিয়েছিলেন। সেই সাথে এটাও বলেছিলেন, তাদের সমূলে উৎখাত করা হবে। কিন্তু দিন কয়েকপর ক্যাসিনো কেন্দ্রীক যত অভিযান আছে সব বন্ধ হয়ে গেল আর আমরাও সব ভুলে গেলাম। এখন শুনতেছি, জিকে শামিম এবং সম্রাট নাকি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে বেশ আয়েশেই জীবন-যাপন করতেছে এবং সেখান থেকেই তাদের পুরনো কারবার সচল রেখেছে।

টেলিভিশনে দেখলাম গ্রেফতারকৃত সাহেদ নাকি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, ৬ মাসের মধ্যে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে আসবেন। অনেকেই সাহেদের এই কথাকে উর্ধ্বপনা ভেবে অবিশ্বাস করলেও, আমি কিন্তু বিশ্বাস করেছি। আর আমি এও বিশ্বাস করি, সে তার চ্যালেঞ্জনুসারে ৬ মাসের মধ্যেই বেরিয়ে আসবে। কারণ, সাহেদরা হলেন সরকারের বিশেষ আর্শীবাদপুষ্ট। তাহলে সাহেদকে গ্রেফতার করা হল কেন?

খেয়াল করে দেখবেন, সার্কাসে ভয়ংকর প্রাণীদের দিয়ে খেলা দেখানো হয়। সেই ভয়ংকর প্রাণীগুলো জঙ্গল থেকে ধরে এনে বহু কষ্টে পোষ মানানো হয়। তারপর সেসব ভয়ংকর প্রাণীগুলোকে দিয়ে খেলা দেখানো হয়। এই ভয়ংকর প্রাণীগুলো পোষ মানানোর পরও কখনো কখনো বিদ্রোহ করে বসে। তারা সার্কাসের বন্দি শেকল থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেতে চায়। তখন সেগুলোকে আবারও ভয়ংকর নির্যাতনের মাধ্যমে পোষ মানানো হয়।

ঠিক তেমনই রাজনীতির খেলা সাহেদদের মত ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও প্রতারকদের দিয়েই খেলানো হয়। খেলতে খেলতে সাহেদরা সার্কাসের প্রাণীদের মতই মাঝে মাঝে বিদ্রোহ করে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে চায়। এমন সময়ে সার্কাসের প্রাণীদের উপর যেমন নির্যাতন চালানো হয়, তেমনই সাহেদদের এভাবে হালকার উপর ঝাপসা পানিশমেন্ট দিয়ে নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। এক সাহেদের পানিশমেন্ট দেখে আরও দশ সাহেদ নিয়ন্ত্রণের মধ্য থেকে লুটপাট চালাতে থাকবে। সাহেদ সাহেব নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে লুটপাট চালানো শুরু করেছিলেন, তাই তাকে ৬ মাসের জন্য বন্দি রেখে লুটপাট থেকে বঞ্জিত করা হবে। এটাই মূল বিষয়!

তারপর একসময় নতুন ইস্যুর ভিড়ে আমরা সাহেদ, ডা. সাবরিনা, আরিফ চৌধুরী ও রিজেন্ট হাসপাতালের নাম ভুলে যাবো, তখন সময়ের ব্যবধানে তারা আবারও নব উদ্যমে লুটপাট শুরু করবে। এর চেয়ে খুব বেশি কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না।

আপনি হয়তো বলবেন, আরে ভাই হতাশ হচ্ছেন কেন?
হতাশা নয় গো ভাই বাস্তবতা!
বাস্তবতাটা হল, রিজেন্ট হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ সচিবের অনুরোধে উপস্থিত থাকেন জনাব স্বাস্থ্য মন্ত্রী! আবার সেই সচিবের সুপারিশে রিজেন্ট হাসপাতাল বা জেকেজিকে করোনা টেস্টের অনুমোদন দেওয়া হল। সেই টেস্টের যাবতীয় ব্যয়ভার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বহন করবে, তারা শুধু টেস্ট করে রিপোর্ট দিবে। অথচ তাদের যখন অনুমোদন দেওয়া হল, তখনো তাদের লাইসেন্স ছিল না। আবার লাইসেন্স থাকলেও সেই লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল না। তারা নাকি লাইসেন্স করবে এমন একটি মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের করোনা ভাইরাস টেস্টের অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে বহু প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজপত্র এবং আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি থাকা স্বত্ত্বেও করোনা টেস্ট করার অনুমতি পায়নি। আর লাইসেন্স বিহীণ একটা প্রতিষ্ঠানকে মুখের আশ্বাসে অনুমোতি দেওয়া হল। তার মানে আপনি বুঝতে পারছেন, এই সাহেদদের ক্ষমতার হাত কতটা গভীরে?

এছাড়াও আলোচনা হল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাসচিব কোনো যাচাই বাছাই ছাড়াই জেকেজিকে অনুমোদন দিলেন কেন? নিশ্চয়ই তারও এখানে কোনো স্বার্থ লুকিয়ে আছে। এই জঘন্য কাজের জন্য সাহেদ, সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরী যতটা দ্বায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাসচিব ও সচিবও একইভাবে দ্বায়ী। তারাও অপরাধী। সেই অপরাধী আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও! তিনি যেমন দ্বায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন, ‘আমি কিছু জানি না’ এই বক্তব্যটাই তার শাস্তির জন্য যথেষ্ঠ! তার দায়িত্বটাই হল, এসব সম্পর্কে জানা এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখা! তাহলে তিনি কোন দিকে খেয়াল রেখেছেন?
নাকি ডা. সাবরিনা রুপের আগুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দু’চোখ ঝলসে গেছে?

তাই দিনশেষে বলতে হয়, এসব সফলতার গল্প আদৌত ফাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু না! এমন কিছু ছোটখাটো দু একজন লুটেরাকে গ্রেফতার করে সরকার বলবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী! কিন্তু কাজের বেলায় দেখা যাচ্ছে, সরকার নিজেই এসব দুর্নীতিবাজদের বছরের পর শেল্টার দিয়ে ফুলে ফেপে ওঠার সুযোগ করে দিচ্ছে। লুটেপুটে তো সবই খেলেন। আর কতটা খেলে আপনাদের পেট ভরবে?

পঠিত : ৪৪৬ বার

মন্তব্য: ০