Alapon

আল্লাহর নামসমূহের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ...


আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নামসমূহ এবং গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এখন আমরা 'রাহিমা' শব্দমূল থেকে নির্গত নাম সমূহ নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা জানি আল্লাহর অন্যতম কমন নাম হলো 'আর রাহমান, আর রাহিম।' প্রকৃতপক্ষে এই নাম দুইটি সব সময় 'আল্লাহ' নাম উল্লেখ করার পরে আসে। যেমন - বিসমিল্লাহ ...আর রাহমান আর রাহিম। 'রাহিমা' (দয়া দেখানো) শব্দমূল থেকে শুধু এই দুইটি নাম নয় বরং কমপক্ষে পাঁচটি নাম এসেছে। যেমন - রাহমান, রাহিম, আর হামুর রাহিমীন (যারা দয়া দেখায় তাদের মাঝে তিনি সবচেয়ে বেশি দয়াবান), খাইরুর রাহিমীন (যারা দয়া দেখায় তাদের মাঝে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ), জুর রাহমাহ (দয়ার মালিক)।

সুতরাং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এই পাঁচটি নাম 'রাহিমা' তথা দয়া দেখানো শব্দমূল থেকে নির্গত হয়। এই সবগুলো নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুস্পষ্ট করা জরুরি। আমরা যে আল্লাহর ৯৯ টি নাম সম্পর্কে সবসময় শুনে আসছি, এই ৯৯ নামের ধারণা কোথা থেকে আসলো?

কারণ, আমি এই মাত্র আপনাদের নিকট আল্লাহর পাঁচটি নাম উল্লেখ করেছি। ১. আর রাহমান, ২. আর রাহিম, ৩. আর হামুর রাহিমীন, ৪. খাইরুর রাহিমীন, ৫. জুর রাহমা। এই পাঁচটি নামের মধ্যে শুধু প্রথম দুইটি ৯৯ টি নামের অন্তর্ভুক্ত। বাকি তিনটি ৯৯ নামের লিস্টের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাহলে আল্লাহর ৯৯ টি নাম বলতে আসলে কী বোঝায়? আমাদের এখানে একটু থামতে হচ্ছে। কারণ অনেক মুসলিমই এই ৯৯ টি নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। এই সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। ইবনে হাজার একে একটি ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর সে ভ্রান্ত ধারণাটি হলো - "আল্লাহর শুধু ৯৯ টি নাম রয়েছে।" আর এটি সম্পূর্ণরূপে একটি ভুল ধারণা।

প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অসংখ্য নাম রয়েছে। আমাদের পক্ষে আল্লাহর সবগুলো নাম গণনা করা সম্ভব নয়। এমন অসংখ্য নাম রয়েছে যেগুলো মানুষের ভাষা এবং উপলব্ধির বাইরে। তাহলে ৯৯ টি নাম বলতে আসলে কী বোঝায়? ৯৯ টি নাম হলো আল্লাহর অসংখ্য নামের মাঝে সেরা নাম সমূহ। আল্লাহর ৯৯ টি নাম হলো সেরাদের সেরা। আল্লাহর সবগুলো নামই শ্রেষ্ঠ। "আল আসমাউল হুসনা", আল্লাহর সবগুলো নামই মহৎ, আল্লাহর সবগুলো নামই সুন্দর। আর এই নামের প্রকৃত সংখ্যা মানুষের উপলব্ধি ক্ষমতার বাইরে, অসংখ্য-অগণিত।

এই শ্রেষ্ঠ নামগুলোর মাঝে ৯৯ টি নাম হলো স্পেশাল। এই নামগুলো হলো সেরাদের সেরা। বুখারী মুসলিম সহ প্রায় প্রতিটি হাদিস গ্রন্থে আপনাদের সবার পরিচিত এই হাদীসটির উল্লেখ রয়েছে। রাসূল (স) বলেন - "ইন্না লিল্লাহি তিসআতান ও তিস'ইনা ইস্মা, মিয়াতান ইল্লা ওহিদা, মান আহ্সাহা দাখালাল জান্নাহ।" "আল্লাহর ৯৯ টি নাম আছে ...'' এখানে লক্ষ্য করে দেখুন রাসূল (স) বলেননি যে, আল্লাহর শুধু ৯৯ টি নাম রয়েছে। তিনি বলছেন আল্লাহর স্পেশাল ৯৯টি নাম রয়েছে। শুধু ৯৯টি নাম নয়। আল্লাহর সকল নামের মাঝে ৯৯টি হল বিশেষ শ্রেণীর। "যে ব্যক্তি এই নামগুলো হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" এখানে 'আহ্সাহা' এর অর্থ কী?

আমাদের স্কলাররা বলেছেন - প্রথমতঃ 'আহসা' অর্থ জানা বা বুঝা। দ্বিতীয়ত, দোয়া করার সময় এই নামগুলো উচ্চারণ করা। তো, আমরা হাত তুলে বলি, ইয়া রাহমান! ইয়া গাফফার! ইয়া কারিম! সুতরাং, আমরা আমাদের দোয়া অনুযায়ী উপযুক্ত একটি নাম উচ্চারণ করি। যদি আমরা ক্ষমা চাই তাহলে বলব, ইয়া গাফফার! ইয়া রাহমান! যদি আমরা সন্তান চাই, ইয়া ওহহাব! যদি সুস্থ হতে চাই, ইয়া শাফি! যদি আমরা জীবিকা চাই, ইয়া রাজ্জাক! ইয়া কারিম!

আল্লাহর কাছে যেটাই চান না কেন তার আলোকে সবসময় আল্লাহর কোন না কোন উপযুক্ত নাম পাওয়া যাবে। তো, এটা হল 'আহসাহার' দ্বিতীয় অর্থ। এর তৃতীয় অর্থ হল, ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করা। অর্থাৎ, এই নামগুলোর আলোকে আমাদের কাজও করতে হবে। অন্য কথায়, আমাদের জীবন এই নামগুলোর আলোকে পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা যখন বলি আল্লাহ হলেন, আস সামি', তখন আমাদের কথা বলার সময় সাবধান থাকা উচিত; কারণ, আল্লাহ সবকিছু শুনেন। যখন আমরা বলি, আল্লাহ হলেন, আল বাসীর, তখন কিছু করার সময় আমাদের সাবধান থাকা উচিত; কারণ, আল্লাহ সব দেখেন। এই সমস্ত ব্যাপারগুলো 'আহসাহা' অর্থের অন্তর্ভুক্ত।

তাহলে, কোনগুলো সেই বিখ্যাত ৯৯ নাম? এই প্রশ্ন আমাদেরকে আরেকটি বড় ধাঁধার সম্মুখীন করছে। আপনারা সবাই জানেন, আল্লাহর ৯৯টি নামের একটি লিস্ট সর্বত্র পাওয়া যায়। অনেকেই জানে না যে, এই তালিকা যদিও ভুল নয় কিন্তু আবার পুরোপুরি সঠিকও নয়। আমি এর দ্বারা কী বুঝাচ্ছি? আমাদের রাসূল (স) বলেছেন যে ৯৯ টি নাম রয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদেরকে তাঁর তালিকা প্রদান করেননি। তাই, কেউ প্রকৃতপক্ষে জানে না কুরআন হাদিসে পাওয়া অসংখ্য নামের মাঝে কোনগুলো ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত। প্রসঙ্গতঃ কুরআন এবং সুন্নায় শত শত নাম রয়েছে। যদি আপনি কুরআন হাদিসের সর্বত্র আল্লাহর নামগুলো খুঁজে খুঁজে বের করেন...কোন কোন ওলামা এমনকি ১৫০টি পর্যন্ত নাম খুঁজে পেয়েছেন। অতীতের একজন আলেম এমনকি প্রায় ৫০০টি নাম বের করেছেন। তিনি প্রতিটি ক্রিয়া এবং গুণ থেকে নামগুলো বের করার চেষ্টা করেছেন। মোটকথা, আপনি কুরআন এবং সুন্নায় শত শত নাম খুঁজে পাবেন।

তাহলে স্পেশাল ৯৯ নাম কোনগুলো? এখানে অনেক মানুষ বিহ্বলতায় পড়ে যান। দিনশেষে, আসল কথা হল কেউ জানে না। স্কলাররা ইজতিহাদ করেছেন। তারা চেষ্টা করেছেন ৯৯টি সেরা নাম খুঁজে পেতে। কিন্তু তবু এটা মানবীয় প্রচেষ্টা মাত্র। যথাযথ ৯৯টি নাম কেবল আল্লাহ জানেন। আমরা জানি না। একমাত্র আল্লাহ জানেন। আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি। আমাদের ইতিহাস জুড়ে এ রকম বহু প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। আপনারা যে ৯৯টি নামের তালিকা পেয়ে থাকেন তা আসলে দ্বিতীয় হিজরির একজন প্রখ্যাত আলেমের প্রচেষ্টার ফসল। সম্ভবত, এটাই এই ধরণের প্রথম প্রচেষ্টা। তাই, এটা যেহেতু প্রথম প্রচেষ্টা বহু মানুষ এটা ব্যবহার করে থাকেন। পরবর্তী বহু আলেম এই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, এটি কেবল একজন শিক্ষিত ব্যক্তির অনুমান। এটি চূড়ান্ত নিশ্চিত কোন তালিকা নয়।

প্রকৃতপক্ষে, এই তালিয়কায় এমন অনেক নাম রয়েছে যা তর্কসাধ্য। অন্য ওলামারা বলেছেন, অমুক অমুক নামগুলো ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত নয়। আসল পয়েন্ট হল, আল্লাহর কিছু কিছু নাম রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত যে এগুলো ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত। যেমন, আর রাহমান, আর রাহিম, আল মালিক, আল কুদ্দুস ইত্যাদি। কারণ, কুরআনে এগুলো নামবাচক বিশেষ্য (proper noun) হিসেবে এসেছে। যখনই কুরআনে আল্লাহর কোন গুণ নামবাচক বিশেষ্য হিসেবে আসে সেটি আসলে ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত হবে।

কিন্তু অনেক নাম রয়েছে যেগুলো ক্রিয়াপদ থেকে নির্গত করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহর নাম 'আল বা-কি।' আল্লাহর নাম 'আল বা-কি' বিশেষ্য হিসেবে আসেনি। এটি verb হিসেবে এসেছে। "ও ইয়াবকা ওজহু রাব্বিক...।" "আর থেকে যাবে শুধু তোমার প্রতিপালকের চেহারা..." তো, এই আয়াতে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদ ''ইয়াবকা'' থেকে কিছু কিছু ওলামা ''আল-বা-কি" নামটি বের করেছেন। এটা কি ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত? কোন কোন ওলামা বলেন - হ্যাঁ, আবার কোন কোন ওলামা বলেন - না। তাহলে দেখা যাচ্ছে আসল ৯৯ নাম নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি মনে রাখা উচতি।

আমাদের অনেক আলেম-ওলামা বলেন, প্রকৃত ৯৯টি নাম যা জানার পেছনে বিজ্ঞতা হল, প্রতিটি মুসলিমের কুরআন পড়ার সময় আল্লাহর নাম খুঁজে পেতে বিশেষ প্রচেষ্টা থাকা উচিত। অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রে বিপুল আগ্রহ দেখানো উচিত। আল্লাহ কোন আয়াতে কি কি নাম উল্লেখ করছেন? আর এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি আল্লাহর জন্য আপনার ভালবাসা প্রদর্শন করছেন। আল্লাহর নাম খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টায়, আল্লাহর নাম নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আপনার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। সম্ভবত, এই বিজ্ঞতার কারণে আমাদের রাসূল (স) ৯৯টি নামের তালিকা আমাদের প্রদান করেননি।

প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমাদের আরও মনে রাখা দরকার যে আল্লাহর নামগুলো খুবই স্পেশাল। আল্লাহর নামগুলোর আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে অন্য কিছুর সাথে যার কোন তুলনা চলে না। এর অন্যতম একটি বিশেষত্ব হল, আল্লাহর নামগুলো কুরআন-সুন্নাহ থেকে নেয়া হয়েছে। আমরা বসে বসে নিজের মন থেকে আল্লাহর নাম আবিষ্কার করি না। না, আমরা এমনটি করি না। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা তাঁর সম্পর্কে না জেনে কথা বলার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করেছেন। وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ - “(শয়তান) তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জান না। ” (২:১৬৯) আমরা আল্লাহ সম্পর্কে যা জেনে কোন কথা বলি না। তাই, কুরআন-সুন্নায় পাওয়া যায় না এমন কোন পরিভাষা আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা ঠিক না। যেমন, আমি একজনকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ হলেন আকাশের আর্কিটেক্ট এবং দুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার। না, আল্লাহর ব্যাপারে এরকম বলা শোভনীয় নয়।

আল্লাহ নিজেকে আর্কিটেক্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার বলেননি। আমাদের এই ধরণের নামগুলো ব্যবহার করা উচিত নয়। আমাদের বলা উচিত - আল খালিক, আল বা-রি, আল মুসাওউর। কারণ, এই নামগুলো অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা যদি অন্য ধরণের নাম ব্যবহার করি তাহলে হয়তো এর মাধ্যমে নেতিবাচক কোন ধারণা আল্লাহর উপর আরোপ করে ফেলতে পারি। তাহলে, আমরা কখনোই আল্লাহর জন্য এমন কোন নাম ব্যবহার করবো না যার উল্লেখ কুরআন সুন্নায় পাওয়া যায়নি।

আমরা যদিও আল্লাহর এই সুন্দর সুন্দর নামগুলোর একটা ধারণা পাই, কিন্তু এগুলোর বাস্তবতা আমাদের পক্ষে কোনদিন উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। যখন আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলেন তিনি হলেন 'আস-সামি'', এখানে সবাই জানে আস-সামি অর্থ যিনি শ্রবণ করেন। কিন্তু আমরা বুঝি না কীভাবে আল্লাহ শুনেন। আর আমাদের এই সম্পর্কে চিন্তা করার উচিত নয়। এর জন্য উপযুক্তি টার্ম হল - বিলা কাইফ। আমরা চিন্তা করি না, কিভবে। একবার এক লোক ইমাম মালিকের কাছে এলো এবং জিজ্ঞেস করল - ও ইমাম মালিক! আল্লাহ কুরআনে বলেছেন - দয়াময় আরশে সমাসীন। "আর রাহমানু আলাল আরশিস তাওয়া।" আমাকে বলুন, কীভাবে আল্লাহ আরশে সমাসীন হয়েছেন? আল্লাহ কীভাবে সমাসীন হন? এর মানে কি যে আল্লাহর একটি আসন আছে আর তিনি এতে সমাসীন হয়েছেন? ইমাম মালিক এতে বেশ রাগান্বিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন - আল ইস্তেওয়া মা'লুম। সবাই জানে সমাসীন হওয়ার অর্থ কী। এরজন্য পি এইচ ডি ডিগ্রির দরকার নেই। সবাই জানে ওপরে উঠা মানে কী। ওয়াল কাইফু মাঝহুল। কীভাবে আল্লাহ সমাসীন হন, আমরা এ সম্পর্কে চিন্তা করি না। আমরা জানি না। আমাদের তো এ নিয়ে চিন্তাই করার কথা না। ওয়াল ইমানু বিহি ওয়াজিব। এর উপর বিশ্বাস রাখা আবশ্যক।

কারণ, আল্লাহ এই শব্দও ব্যবহার করেছেন। আমি তো আর "ইস্তাওয়া" শব্দটি বাছাই করিনি। আমি তো আর "সামি' এবং বাসীর" শব্দগুলো বাছাই করিনি। আমি তো আর "ও ইয়াবকা ওজহু রাব্বিক" শব্দগুলো পছন্দ করিনি। আমি তো আর (৫:৬৪) "بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ" - শব্দগুলো পছন্দ করিনি। "বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত।" আমি তো আর এই শব্দগুলো বাছাই করিনি। আল্লাহ এই শব্দগুলো পছন্দ করেছেন।

সুতরাং, আমরা শব্দগুলোর অর্থ জানি, কিন্তু আমরা জানি না কীভাবে। আর প্রকাশ্য অর্থের বাহিরে চিন্তা করার অনুমতি নেই আমাদের। আমরা চিন্তা করি না, কল্পনা করিনা না 'কীভাবে'। আল্লাহর নাম এবং গুণাবলী গুলো নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে এই ব্যপারটা ভালোভাবে বুঝে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আল্লাহর নাম সমূহ এবং গুণাবলীর অনন্য বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহর নামসমূহ চিরস্থায়ী। আমাদের নামগুলো আমাদের পিতামাতা কর্তৃক প্রদত্ত, এগুলোর একটা শুরু আছে। আমার জন্মের পূর্বে আমার নাম ছিল না। আমাদের নামগুলোর একটি শুরু আছে। আল্লাহর নামসমূহের কোন শুরু নেই, এগুলো চিরস্থায়ী। এগুলো কোন শুরু বা শেষ নেই। এগুলো অনাদি এবং অনন্ত। "হুয়াল আউয়ালু ওয়াল আখের।" (57:3)

আল্লাহর নাম সমূহের আরও একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, কোন সৃষ্টিকে এই নামগুলোর নামবাচক বিশেষ্য (proper noun) ধরে ডাকা যাবে না, যে নামগুলো আল্লাহ নিজের জন্য পছন্দ করেছেন। আর আরবিতে 'নামবাচক বিশেষ্য' প্রকাশ করা হয় শব্দের শুরুতে 'আলিফ লাম' যুক্ত করে। "আর রাহিম, আল মালিক, আল কুদ্দুস" কেবলমাত্র আল্লাহকে এভাবে আলিফ লাম যুক্ত করে ডাকা যাবে। একজন মানুষ "রাউফ, রাহিম" হতে পারে, কিন্তু কেউ ''আর রাহিম" নয়, আল্লাহ ছাড়া।
-----------------

সুতরাং, আল্লাহর নামসমূহ অনন্য। কেউ নিজের নাম আল্লাহর নামে রাখতে পারবে না - আলিফ লাম যুক্ত করে। আল্লাহর নামের আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল, আল্লাহর নামগুলোর অর্থ থাকতে হবে। তাই, আল্লাহ যখন বলেন তিনি মালিক। আমরা এর অর্থ বুঝি এবং এই অর্থ আল্লাহর প্রতি আরোপ করি। আমাদের নামগুলোর সবসময় অর্থ থাকে না। যেমন, আমার নাম ইয়াসির। ইয়াসির নামের একটি অর্থ হল - বিশ্বাস করেন বা না করেন - সম্পদশালী। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছেন। কিন্তু আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা আমার চেয়েও বড় ইয়াসির। কারো নাম হয়তো 'সালেহ' যার অর্থ সৎ, ধার্মিক। কিন্তু তার কর্মগুলো হয়তো একেবারেই সৎ নয়।

কোন বোনের নাম হয়তো 'জামিলা - সুন্দর।' আচ্ছা, আমাদের সব বোনেরাই তো সুন্দর। থাক, আমরা এই উদাহরণে যাচ্ছি না।

মোটকথা হল, নামের সব সময় অর্থ থাকতে হবে না, যখন সৃষ্টির নামের কথা আসে। কিন্তু যখন আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার নামের কথা আসে তখন কী হয়? সবগুলো নামই অকাট্য অর্থ বহন করে। অর্থগুলো অবশ্যই প্রযোজ্য। আর এটা আল্লাহর নামসমূহ এবং গুণাবলীর অনন্য সৌন্দর্য এবং পারফেকশনের অংশ।

আজকের শেষ পয়েন্ট... ইনশাআল্লাহ, আগামী কাল আমরা 'আর রাহমান এবং আর রাহিম' এর অর্থ নিয়ে কথা বলব। আজকের শেষ পয়েন্টটি হল, আল্লাহর নামসমূহ এবং গুণাবলী বোঝার সময় একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, অধিকাংশ সময় কুরআনে আল্লাহর দুইটি নাম একত্রে আসে। "আর রাহমানির রাহিম", "আল মালীকুল কুদ্দুস" "আস সামিউল আলিম।"

প্রকৃতপক্ষে, এই যুগল নামের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ইসলামী শিক্ষার একটি বিশেষ শাখা আছে যা এই ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা করে যে আল্লাহ কেন এই নামের শেষে অমুক নামটি যুক্ত করলেন? দুইটি নাম একত্রে আসার পেছনে বিজ্ঞতা আছে।

আল্লাহ তায়ালা যখন বলেন তিনি হলেন "আল হাইউ আল কাইয়ুম।" আমরা এই কম্বিনেশন নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করবো। "আল হাইউ" অর্থ তিনি নিজেই চিরঞ্জীব। আর "আল কাইয়ুম" অর্থ তিনি অন্যদের জীবন দান করেন। তাহলে, অর্থগুলো একটি আরেকটির পরিপূরক। আর এটি উপেক্ষিত একটি বিষয়। আমরা সবাই সবসময় কুরআনে এই যৌথভাবে আসা নামগুলো অধ্যয়ন করি। কিন্তু আমরা বুঝি না আর বোঝার চেষ্টাও করি না যে এই দুইটি নাম কেন এখানে একসাথে এসেছে। আমরা মনে করি, এটা এমনিতেই এসেছে বা ছন্দের সৌন্দর্যের জন্য এসেছে। না, আল্লাহ উদ্দেশ্য ছাড়া কিছু করেন না।

প্রতিটি নামের সাথে আল্লাহ যখন আরেকটি নাম যোগ করেন তখন এই যৌথ নামের ব্যবহার তৃতীয় আরেকটি অর্থ প্রকাশ করে। প্রথম নামের অর্থ, দ্বিতীয় নামের অর্থ, এবং উভয় নামের যৌগিক অর্থ। এই দুইটি নাম একসাথে রাখার বিজ্ঞতা কী? ইনশাআল্লাহু তায়ালা আল্লাহর নামসমূহ এবং গুণাবলীর অর্থ বোঝার এই প্রচেষ্টায় আমরা সামনে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আগামী কাল আমরা আবার "রাহমা" এর ধারণা নিয়ে কথা বলব এবং আল্লাহর পাঁচটি নাম নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আল্লাহর দয়ার সাথে সম্বন্ধযুক্ত।

- ডঃ ইয়াসির কাদি

পঠিত : ৮৬৩ বার

মন্তব্য: ০