Alapon

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বন্ধু হওয়ার তিনটি উপায়...


আল্লাহর আউলীয়া মানে আল্লাহর বন্ধুরা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বিক্ষিপ্ত ভাবে, এবং আপনি জানেন না তাঁরা কারা। আর এ কারণেই ব্যাপারটা এতো আকর্ষণীয়। আপনি বুঝতেই পারবেন না, কারা এই আল্লাহর ওয়ালী। সত্যি কথা বলতে কি, আল্লাহর কিছু ওয়ালী আছেন, যারা নিজেরাই জানেন না যে তাঁরা আল্লাহর বন্ধু। তাঁরা ঠিক বুঝতে পারেন না, যে আল্লাহ তাঁদের কতটা ভালোবাসেন। কিভাবে তাঁরা এই বিশেষ পদে আরোহণ করেছেন? বিজ্ঞ আলেমরা বলেন, তিনটি উপায়ে তাঁরা আল্লাহর বিশেষ বন্ধু হওয়ার এই মর্যাদা অর্জন করেন। বিলায়া, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিশেষ বন্ধুত্ব। রাসুল (সাsmile হাদিস কুদসীতে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তা'লা বলেন - مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقْد آذَنْتهُ بِالْحَرْبِ "যে আমার ওয়ালী, আমার ভালোবাসার পাত্রের শত্রুতা করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো।" আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর বন্ধু করে নেন, এবং আমরা যেন তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই, যাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়া'লা যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আল্লাহুম্মা আমিন। ব্যাপারটা এক দিক দিয়ে যেমন সুন্দর, তেমনি অন্য দিক দিয়ে ভীতিজনক। কারণ, আউলিয়ারা লুক্কায়িত।

আলী (রাsmile বলেন, আল্লাহ মানুষের কাছে দুটি জিনিস লুকিয়ে রেখেছেন। একটি হলো, ভালো কাজে তাঁর সন্তুষ্টি, আপনি জানেন না কোন ভালো কাজের জন্য আল্লাহ তাঁর সন্তুষ্টিকে উন্মোচন করেন। আরেকটি হলো, আল্লাহ মানুষের মাঝে তাঁর আউলীয়াদের লুকিয়ে রাখেন। আপনি জানেন না, আপনি কার সাথে কারবার করছেন। আক্ষরিক ভাবেই আপনি জানেন না, কে সেই ব্যক্তি, যার সাথে আপনি কারবার করছেন। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, কেউ প্রকাশ্যে বড় বড় পাপ করেও ভাবতে লাগলো আমি মনে হয় আল্লাহর ওয়ালী। না, না। কেউ হয়তো, এই বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন, এবং কাউকে হয়তো ইতিমধ্যেই এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন "যে এই মর্যাদায় পৌঁছে গেছে, আর তাঁর ক্ষতি যদি কেউ করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো।" ইবনে আল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কত জাতি সুরক্ষিত আছে এবং ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের মাঝে আল্লাহর সেই বিশেষ বন্ধু থাকার কারণে, অথবা বিরোধিতা করার কারণে। দুই একজন লোককে আল্লাহ তা'লা এতো উচ্চ সম্মান, ও মর্যাদা দিয়ে থাকেন। এখানে কিছু শিক্ষামূলক ব্যাপার আছে। এমন নয় যে, আমি শধু বসে বসে দোআ করবো, হে আল্লাহ আমাকে আপনার ওয়ালী করে নেন। এখানে তিনটি বিষয় আছে, যা আপনাকে সেই বিশেষ মর্যাদার যোগ্য করে তুলে।

প্রথমত, বাধ্যতামূলক দায়িত্ব গুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করা, তারপর ভালো কাজ করা, ততক্ষন পর্যন্ত, যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই সৎ কাজের মিষ্টত্ব আপনি আস্বাদন করতে পারেন। এর মাঝেই রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি (রিদা), যা হয়ে উঠবে আপনার জীবনের অনন্য চালিকা শক্তি। আল্লাহর সন্তুষ্টিই তখন আপনার জীবনের চালিকা এবং গতি শক্তিতে পরিণত হবে। হাদিসে তাই বলা হয়েছে وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ "আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য, অবশ‍্য পালনীয় কর্তব্য গুলো, সঠিক ভাবে পূরণের চেয়ে, প্রিয় তাঁর কাছে আর কিছুই হতে পারে না।" সময়মতো নামাজ পড়া, রোজা রাখা, এবং আল্লাহ যা করতে বলেছেন তা সঠিক ভাবে মেনে চলা, এসবই অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

তারপর, আপনি আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারেন নফল ইবাদতের মাধ্যমে। বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পালনের স্বাদ যখন আস্বাদন করে ফেলেছেন, এখন শুরু করতে পারেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে স্বেচ্ছাকৃত ভালো কাজ। হাত্তা উহিব্বু - যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করেন, বিশেষ ভালবাসা। আর যখন আল্লাহ এভাবে ভালবাসতে শুরু করেন, তখন আল্লাহ আপনার কান হয়ে যান যা দিয়ে আপনি শ্রবণ করে, দৃষ্টিশক্তি যা দিয়ে আপনি দেখেন, হাত যা দিয়ে আপনি স্পর্শ করেন, যেভাবে আপনি হাঁটাচলা করেন, সবকিছু। আপনি যখন আল্লাহর সেই স্বতন্ত্র ভালোবাসায় সিক্ত, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনই হয়ে উঠে আপনার জীবনের চালিকাশক্তি। দ্বিতীয় আর কোন লক্ষ্য নেই, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই লক্ষ্য। আল্লাহর কাছে সেই বিশেষ মর্যাদা অর্জনের এই হলো একটি উপায়।

আল্লাহর রিদা বা সন্তুষ্টি, যা আপনাকে চালিত করে আপনার প্রতিটি ভালো কাজে। আপনি ভালো কাজ করতেই থাকবেন, করতেই থাকবেন, কিন্তু তারপরও আপনার মনে হবে এ যথেষ্ট নয়। কারণ, আপনি নামাজের মিষ্টত্ব আস্বাদন করেছেন, এখন দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। আপনি উপবাসের স্বাদ অর্জন করেছেন, শুধু রোজার মাসে উপবাস এখন আপনার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনি হজ্জ্বের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করেছেন, আপনার মন বলছে এখন উমরাহ করতে হবে। আল্লাহ তা'লা এই বিষয় গুলো আপনার জন্য উন্মোচন করে দিয়েছেন। ভালো কাজ করার আনন্দের আস্বাদ আপনি গ্রহণ করেছেন, যা হয়ে উঠেছে আপনার জীবনের চালিকা শক্তি।

দ্বিতীয়ত, অনুশোচনার ক্ষেত্রে আপনার আন্তরিকতা। এটা আরো আকস্মিক। যে ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে আন্তরিকতার সাথে পরিতাপ করে, শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য, আল্লাহর কারণেই তা করে, তখন আল্লাহর কাছে ফিরে আসার এই আনন্দ পূর্বের পাপ কাজ থেকে যে আনন্দ পাওয়া যেত তাকে সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত করে দেয়। এ জন্যই আমরা ঐ হাদিসগুলো পাই যেখানে একজন লোক বড় বড় পাপ করতো, তারপর হঠাৎ করেই সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। আল্লাহর ভালোবাসা তাঁকে এতটাই অভিভূত করে যে, আল্লাহর অবাধ্যতা করার মাঝে সে যেই আনন্দ পেত, তাঁকে তা পরাস্ত করে দেয়। এখন তাদের জীবন এভাবেই পরিচালিত হয়। তাই, অতি সত্বর আল্লাহর কাছে তারা বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়।

তৃতীয়ত, আল্লাহ যখন আপনাকে বড় কোনো শোকের অভিজ্ঞতা দিয়ে পরীক্ষা করেন, আল্লাহ আপনার জীবন থেকে কিছু উঠিয়ে নেন। তখন সে শোকের মধ্যে আপনি ইহতিসাব করেন, মানে আল্লাহর পুরস্কারকে তালাশ করে নেন, আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধানই সেই শোকের সময় আপনাকে অভিভূত করে রাখে। আপনার সব শোক ও হতাশাকে, এইভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির সন্ধানেই আপনি রূপান্তরিত করতে পারেন। আর এই ভাবেই একজন ব্যক্তি পারেন আল্লাহর বন্ধুত্বের মর্যাদা লাভ করতে।

ড: ওমর সুলাইমান

পঠিত : ৪৭০ বার

মন্তব্য: ০