Alapon

নারীর স্বাধীনতা বলতে মূলত আমরা কী বুঝি...?


নারী-পুরুষ উভয়ে শারীরিক এবং মানসিকভাবে যেমন একে অন্যের থেকে আলাদা, ঠিক তেমনি তাদের কাজের ক্ষেত্রও আলাদা। দু'পক্ষ যখন পরিপূর্ণভাবে তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নিজ নিজ কর্মগুলো সুচারুরূপে সম্পন্ন করে তখনই পরিবারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
কিন্তু, আমরা আজ এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছি, যেখানে নারী ঘরে-বাহিরে দু'দিক সামলাতেই ইচ্ছুক। অর্থাৎ, দু' নৌকায় পা দিয়ে চলতে আগ্রহী। ফলশ্রুতিতে এক টালমাটাল পরিস্থিতির সম্মুখীন। কারণ, দু' নৌকায় পা দিয়ে চলা সম্ভব নয়।

বর্তমানে নারীরা পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে তাদের কাজের জায়গায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো পুরুষকে দেখলাম না নারীদের কাজের জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। অন্ততপক্ষে, আমার তো মনে হয় না কখনো আগ্রহ দেখিয়েছে কিংবা চেষ্টা করেছে।

একজন মানুষের পক্ষে ঘরে-বাহিরে দু'দিকে সমানভাবে শ্রম দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সে মানুষ, কোনো রোবট নয়।
কোন মানুষ একটানা সকাল ৯:০০ থেকে বিকেল ৫:০০ টা পর্যন্ত বাইরে কাজ করার পর ঘরে কাজ করতে পারবে না। সে ইচ্ছে করলেও দেহ তাতে সায় দেবে না। কারণ, সারাদিনের ব্যস্ততার পর দেহ বিশ্রাম চায়।

আমার মনে হয় না কোন পুরুষ সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিন অতিবাহিত করার পর রান্নাঘরে রান্না করতে ঢুকবে। যদি দ্বিমত পোষণ করে বলেন, 'অনেকেই করে'... তবে জানতে ইচ্ছুক এর পার্সেন্ট শতকরা কত!
কিন্তু কর্মজীবি নারীদের দিকে লক্ষ্য করুন, তাদের কিন্তু সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর ঠিকই রান্নাঘরে ঠুকতে হচ্ছে। ইচ্ছায়ই হোক আর অনিচ্ছায়ই হোক। কারণ, এটাই তার আসল কর্মক্ষেত্র।
আপনি মানেন কিংবা না মানেন।
আর বিশেষকরে এটা তার পারিবারিক দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যেও পড়ে।

লক্ষ্য করুন, নারী কিন্তু পুরুষের মতোই বাইরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিউটি করেছে, কিন্তু বাসায় এসেও তাকে ডিউটি করতে হচ্ছে।
আপনার কি একে অমানবিক বলে মনে হয় না??!!
আমার কিন্তু একে চরম অমানবিক বলে মনে হয়।
যদিও কিচ্ছু করার নেই, কারণ এর নাম স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাটুকু পেতে গেলে আপনাকে যে ডাবল খাটুনি খাটতেই হবে!
পুরুষদের কিন্তু এই ডাবল খাটুনি খাটতে হয় না, কারণ তারা পুরুষস্বাধীনতা চায় না। যদি চাইতো, তবে বোধহয় তাদেরকেও সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে স্যুট কোট খুলেই রান্নাঘরে ঢুকতে হতো।
যেহেতু আমাদের নারীরা নারীস্বাধীনতা চায়, তাই তাদের নিজেদের পরিবারের দায়িত্ব কর্তব্যগুলো পেন্ডিং রেখে আগে বাইরে ছুটতে হয়।
কি জানি যদি স্বাধীনতা খর্ব হয়ে যায়!
হায়রে স্বাধীনতা!!...

আমাদের কপাল ভালো যে, আমাদের মা-চাচীরা এমন স্বাধীনতা চাননি। আমাদের বাপ-চাচাদের সীমিত আয়েই তারা সন্তুষ্ট ছিলেন।
নতুবা নারী স্বাধীনতার বদৌলতে সন্তান হিসেবে আমরাও বঞ্চিত হতাম আমাদের মায়েদের আদর-যত্ন আর ভালোবাসা থেকে।
কেমন হতো যদি দেখতাম ভোরের আলো ফুটতেই বাবা-মা দু'জনেই বেরিয়ে যাচ্ছে অফিসের ফাইল হাতে!....
বুয়ার হাতেই সকালের নাস্তা খেয়ে শুরু হতো দিন।
দুপুরের খাবারে মায়ের হাতের ছোঁয়া নেই, আদর নেই, শাসন নেই, আনন্দ, উচ্ছ্বাস নেই...
বিকেলেও মায়ের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ নেই, গল্প কিংবা আড্ডা নেই...
অতঃপর সন্ধ্যার সময় মা বাসায় ফিরতো একরাশ ক্লান্তি আর ব্যস্ততা নিয়ে।
পরের দিনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে যে!
এসময় মাকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদ করাটা কি উপভোগ্য হতো? নাকি মায়ের ভালো লাগতো?...
মায়ের কাছে কি এসব করার সময় হতো?...
হয়তো যেটুকু না করলেই নয়, শুধু সেটুকুই করতো...
হয়তো দিনের বেশিরভাগ সময়ই বুয়ার সান্নিধ্যে থাকতে থাকতে আমাদের স্বভাব, আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা তাদের মতোই কিংবা তার চেয়েও বিক্ষিপ্ত হয়ে যেত।
কি যে এক জীবন হতো!...

আল্লাহর রহমত যে, পরিবার এবং সন্তানদের সুখের নিমিত্তে আমাদের মা-চাচীরা পরিবারেই খুঁজে নিয়েছিল তাদের স্বাধীনতা। তাই বাইরের স্বাধীনতার প্রয়োজন পড়ে নি; সমানাধিকার, নিজস্ব আইডেন্টিটি কিংবা অপর্যাপ্ত টাকারও দরকার হয়নি কোনদিন।
তাদের এই সেক্রিফাইজ আর রাব্বুল আলামীনের রহমতের কারণেই আমরা পেয়েছি এক চিরসুখের আঙ্গিনা। ফলশ্রুতিতে আমাদের জীবনটা এত সুন্দর, এত সাবলীল, এত প্রশান্তময়।

ভাবনারা মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জানতে চায়, ঠিক কোন স্বাধীনতাটা আমাদের প্রয়োজন, পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখে তাদের মাঝে সুখ খুঁজে নেবার স্বাধীনতা নাকি আইডেন্টিটি আর টাকার পেছনে ছুটতে থাকার অবাধ স্বাধীনতা?

Cltd

পঠিত : ৪১৩ বার

মন্তব্য: ০