Alapon

আজ কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ-এর প্রয়ান দিবস...


জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ ২০১২ সালের আজ রাত ১১ঃ২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। লাশ দেশে আনা থেকে নুহাস পল্লীতে সমাহিত করা পর্যন্ত অনেক নাটকীয়তা হয়েছিলো। অনেকেরই মনে থাকার কথা,এক সময় সৈয়দ শামসুল হক হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন- 'হুমায়ুন আহমেদের এগুলো উপন্যাস নয়, অপন্যাস।'

এমিরেটস এয়ারলাইন্সে লাশ দেশে পৌঁছার পর সারাক্ষণ দেখলাম সৈয়দ শামসুল হক সবার আগে। কফিনের সামনে। আমি টিভিতে দেখে একা ঘরেই আঙুল টিভির দিকে তাক করে বলেছিলাম,লোকটা করে কি দেখো ?

সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের একজন নামকরা লেখক। মারা গেছেন গত ২০১৬ সালে।
ছাত্রজীবনে তাঁর “খেলারাম খেলে যা” “এক যুবকের ছায়াপথ”সহ বেশ কিছু উপন্যাস পড়েছিলাম। যৌনতায় ভরপুর উপন্যাস “খেলারাম খেলে যা”।
কিন্তু পরে দেখি তিনি অন্যরকম মানুষ। রাজনীতি, দলাদলি এসবেই ব্যস্ত। শুধু তাই নয়, তিনি ঘোরতর স্বপক্ষের শক্তি। চেতনাধারী। আমরা কি বিপক্ষের? তাই তাকে আর ভালো লাগে না। হোক না তিনি বড় লেখক।

হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে ইন্ডিয়ার শীর্ষ ইংরেজি দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়া Times of India লিখেছে “ Humayun was a Custodian of Bangladeshi literary culture whose contribution Single Handedly shifted the Capital of Bengali Literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution . কোনো যুদ্ধ বা বিপ্লব ছাড়াই হুমায়ুন আহমেদ একা হাতে বাংলা সাহিত্যের রাজধানী কলকাতা থেকে ঢাকা নিয়ে গেছেন।

খ্যাতিমান প্রয়াত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হুমায়ুন আহমেদ সম্পর্কে বলেছেন, Ahmed's writing style was characterized as magic realism. Sunil said, Humayun Ahmed,the most popular writer in the Bengali language for country and Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattapadday.
হুমায়ুন আহমেদের বই সব সময়ই টপ সেলার (Top Seller)। ২০১১ সালে পিত্তথলির ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে ধরা পড়েন তিনি। ২০১২ সালের এই দিনে মানে আজ রাত ১১.২০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের বেলভিউ হসপিটালে মারা যান তিনি। তাঁকে নুহাস পল্লীতে সমাহিত করা হয়েছে।

তিনি জন্মেছিলেন ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সনে ময়মসিংহের নেত্রকোনার কেন্দুয়া গ্রামে।
এ দেশে কতো অগা, মগা, জগা এমনকি ভিনদেশি লেখকের জন্ম মৃত্য দিনে কতো বাহারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন দেশের বুদ্ধিজীবি আর টিভি চ্যানেলগুলো। কয়েকদিন ধরে চলে। হুমায়ুন আহমেদের জন্ম মৃত্যু দিনে এমন হয় না কেনো? এতো জনপ্রিয় লেখক, নাট্যকার, গীতিকার, চলচিত্রকারের জন্ম, মৃত্যু দিনে তার সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে দেশের বুদ্ধিজীবী, টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতি আহবান তারা যেন দয়া করে হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ও মৃত্যু দিনে তাকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা, টক শোতে কথা বলেন। আর তার নাটকগুলো পুনঃপ্রচারিত করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেন।

হুমায়ুন আহমেদের “ এইসব দিনরাত্রি” “কোথাও কেউ নেই” “বহুব্রীহি” “অয়োময়” “নক্ষত্রের রাত” “সবুজ ছায়া” “আজ রবিবার” “উড়ে যায় বকপক্ষী” এই ধারাবাহিকগুলো তার জন্ম মৃত্যু দিবসে কয়েকমাস ধরে দেখানো যেতে পারে। দেশে অনেক টিভি চ্যানেল। দেখিয়ে দেখুন না, এখনো হুমায়ুনের নাটক চলার সময় রাস্তায় মানুষ কমে যাবে।
সবুজ ছায়া নাটকে জাহিদ হাসান খুব বোকা টাইপ সাধারন গ্রাম্য মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ওই নাটকে প্রতিদিনই তিনি একটা ভালো কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন এবং করেন। কাজটা করার পর জাহিদ হাসান এদিক সেদিক তাঁকিয়ে দুই হাত নেড়ে নেড়ে বলতেন...

“আগে মানুষে ভালো কাজ করতো, এখন মানুষে ভালো কাজ করে নারে। কেকোকেকো কেকোকেকো"।

হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু দিনে তাঁর প্রতি প্রাণভরা ভালোবাসা নিয়ে তাঁর কথাই তাঁকে বলবো...

“প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ, আগে মানুষে ভালো কাজ করতো। এখন মানুষে ভালো কাজ করে নারে। কেকোকেকো কেকোকেকো”।

পঠিত : ৭০৪ বার

মন্তব্য: ০