Alapon

ফাহিম সালেহ, আপনি অন্তত আমাদের চেয়ে ভাগ্যবান!


ডা. সাবরিনা ও সাহেদ ইস্যুর চাপে ফাহিম সালেহ হত্যাকান্ড ইস্যু দেশের মিডিয়াগুলোতে যেন খুব একটা পাত্তা পেল না। ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট কোনো মিডিয়াই এই ঘটনা নিয়ে খুব একটা সিরিয়াসভাবে নিউজ করেছে বলে মনে হয় না। এমনকি আমাদের দেশের সরকারও এই ঘটনা নিয়ে খুব একটা ভাবছে বলে মনে হয় না। হত্যাকান্ডের পর পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে একটা বিবৃতি দেওয়ার মাধ্যমেই সরকার যেন নিজের সমস্ত কর্তব্য পূর্ণ করেছে। অথচ আমেরিকার কোনো বিলিয়নিয়ার যদি বাংলাদেশের মাটিতে এভাবে নৃশংসভাবে খুন হতো, তাহলে এতোক্ষণে বাংলার আকাশে ন্যাটোর হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যেত বলে, আমার ধারণা!

হয়তো ন্যাটোর হেলিকপ্টার দেখা যেত না, কিন্তু তারা এই ঘটনা নিয়ে কী কী করতো তার একটা ধারণা দিতেই এমন মন্তব্য করলাম। বাংলাদেশের সরকারের কাছে একমাত্র নিজদলীয় এমপি মন্ত্রীরা ছাড়া আর কারও গুরুত্ব আছে কিনা, সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ঠ সন্দিহান!

যাইহোক, এমন একটি হত্যাকান্ডের পরও আমি বলব ফাহিম সালেহ এর পরিবার ভাগ্যবান। তারা অন্তত জানতে পারলেন, তাদের সন্তান ফাহিম সালেহকে কেন হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমনও হাজারো হত্যার ঘটনা রয়েছে, হত্যাকান্ডের স্বীকার হওয়া ব্যক্তির পরিবার জানেই না তার স্বজনকে কেন হত্যা করা হয়েছে! আর তাদের হত্যাকারীকে গ্রেফতার করাতো দূর কী বাত।

যেমন ধরুন, আমাদের দেশের আলোচিত মার্ডারকেস সাগর-রুনি হত্যাকান্ড। দেশের এই ‍দুই আলোচিত সাংবাদিককে তাদের বেডরুমে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের পর তৎকালীণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হবে এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কিন্তু সেই ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে ৯৬ মাস অর্থাৎ ৮ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু আজও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৫ বছর দায়িত্বে থাকার পর অতি সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, কিন্তু তারপরও সাগর-রুনির হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা যায়নি। গ্রেফতার করা তো পরের কথা, এই হত্যাকান্ড নিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট আজও জমা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে সাগর-রুনির বাবা-মা এবং তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ আজও জানে না, তার বাবা-মাকে কেন হত্যা করা হয়েছে এবং কেন হত্যা করা হয়েছে!

সেদিক বিবেচনা করলে বলতেই হয়, নিহত ফাহিম সালেহ- এর পরিবার ভাগ্যবান। ফাহিম মোসলেহ এর সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন ডেভোঁ হ্যাসপিল নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ। দায়িত্ব পালনকালীণ সময়ে ডের্ভো হ্যাসপিল ফাহিম সালেহের ৯০ হাজার ডলার চুরি করে। আর চুরির কথা ফাহিম সালেহ জানতে পারে। তারপর ফাহিম সালেহ তাকে চাকরিচ্যুত করে কিন্তু বিষয়টি পুলিশকে অবহিত না করে টাকাগুলো কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ প্রদান করে। এই সুযোগটাই ফাহিম সালেহের জন্য কাল হয়ে দাড়ায়। সেই হ্যাসপিল টাকা পরিশোধ না করে উল্টো রাগের বশবর্তি হয়ে ফাহিম সালেহকে হত্যা করে। তারপর এই হত্যাকান্ডের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই আমেরিকার পুলিশ বলে, আমরা হত্যাকারীকে সনাক্ত করতে পেরেছি এবং যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হবে।

আমেরিকার পুলিশের এই বক্তব্য কিন্তু আমাদের দেশের পুলিশের মত গালভরা বক্তব্য ছিল না। আমেরিকার পুলিশ সত্যিই পরবর্তি কয়েকঘন্টার মধ্যে ফাহিম সালেহ এর হত্যাকারী ডেভোঁ হ্যাসপিলকে গ্রেফতার করে এবং হত্যার কারণ জানতে সক্ষম হয়!

কোনো হত্যাকান্ডই সুখের নয়! যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কী যন্ত্রণা! কিন্তু আমার নিকট আত্মিয়কে যখন হত্যা করা হবে এবং আমি জানতেও পারলাম না, তাকে কেন হত্যা করা হলো। একইসাথে সেই হত্যাকান্ড নিয়ে দেশের রাজনীতিবিদরা যে যার মত করে ফায়দা লুটছে তখন আমার চেয়ে বড় অসহায় আর কে হতে পারে! সেই দিক বিবেচনা করলে বলতেই হয়, ফাহিম সালেহ এবং তার পরিবার ভাগ্যবান। তারা অন্তত জানে, তাদের সন্তানকে কেন হত্যা করা হয়েছে।

পঠিত : ৩৮২ বার

মন্তব্য: ০