Alapon

উম্মুল মোমেনীন সাফিয়া (রাঃ)- এর জীবন ইতিহাস...


উম্মুল মোমেনীন সাফিয়া (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা) এর প্রকৃত নাম 'জয়নাব'। তিনি ছিলেন ইহুদির কন্যা। তদানীন্তন আরবে যুদ্ধলব্ধ জিনিষের ভেতরে যে বস্তুটি সেনাপতি বা দলপতির জন্য বরাদ্দ করা হত, তাকে বলা হত 'সাফিয়া'। খায়বরের যুদ্ধে ইহুদীরা পরাজিত হলে পর, মুসলমানদের হাতে প্রচুর ধন-সম্পদ গণিমত হিসেবে হস্তগত হয়। তার সাথে ইহুদীদের নেতা বিশাল ধনকুবের হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা জয়নাবও যুদ্ধবন্দি হিসেবে মুসলমানদের কবলে আসে।

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর প্রিয় সাহাবী দাহিয়া কলবী (রাঃ) নবী (সাঃ) এর কাছে একজন দাসীর আবেদন করেছিলেন। নবী (সাঃ) যুদ্ধবন্ধীনি 'জয়নাব' কে দাসী হিসেবে তার কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে মদিনার আনসাররা আপত্তি করে বলেছিল, বিরাট মর্যাদার অধিকারিণী ‘সাফিয়া’ হিসেবে তার মর্যাদার প্রতি দৃষ্টি দান করুন। তাছাড়া সাফিয়া (রাঃ) এর আম্মাও ছিলেন ইহুদীদের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি সামওয়ানের কন্যা। এসব বিচারে তিনি সমস্ত দিক থেকেই ছিলেন ইহুদিদের অভিজাত বংশের মেয়ে। এটা শুনে রাসুল (সা) অন্য একটা দাসী দাহিয়া কলবী (রা) কে প্রদান করে সাফিয়া (রাঃ) কে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।

তার প্রথম বিয়ে হয়েছিল ইহুদী গোত্র প্রধান সালামের সাথে কিন্তু সেখানে তার বনিবনা হয়নি। পরে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ইহুদী নেতা কিনানার সাথে। খায়বরের যুদ্ধেই স্বামী নিহত হয়।

এদিকে মুক্তি পেয়েও জয়নাব তথা সাফিয়া (রাঃ) অন্য কোথাও যাননি। কারণ তার যাওয়ার মত স্থান ছিল না। আপনজনেরা সবই নিহত হয়েছিল। তারপরেও যারা ছিল, ইসলাম গ্রহণ করার কারণে তারা তাকে এড়িয়ে চলত। অবশেষে তিনি নবী (সাঃ) এর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তিনি তাকে স্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করে আশ্রয় দান করেছিলেন। সে সময় হযরত জয়নাব ওরফে সাফিয়ার বয়স ছিল ১৭ আর রাসুল (সাঃ) বয়স ছিল ৬০ বছর। সে থেকে ইসলামের ইতিহাসে তিনি জয়নাব থেকে হয়ে যান সাফিয়া (রা)। সারা দুনিয়া তাকে এই নামেই বেশী চিনে থাকে।

ইসলাম কবুল করার পরে তাঁর জীবন ধারা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যায়। বিশাল ধনীর কন্যা হিসাবে তার কাছে প্রচুর গহনা ছিল। তিনি সেসব গহনা সতীনদের এবং হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে উপহার হিসাবে দান করেছিলেন। তিনি লেখাপড়া জানতেন। তাই আত্মীয়দের কাছে চিঠি-পত্র লিখে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাতেন। তার এই দাওয়াতি কাজের ফলে বহু ইহুদী আত্মীয় ইসলাম কবুল করেন।

এক হজ্জের সময় তার উটটি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে আর চলতে পারছিল না। তিনি কান্না শুরু করলেন। নবী (সাঃ) তার হাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, “এ জন্য বুঝি কাঁদতে হয়'?

আরেকদিন রাসুল (সাঃ) বাড়িতে এসে সাফিয়া (রাঃ) কে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন, আয়েশা (রাঃ) ও জয়নাব (রাঃ) তাকে বলেছেন যে, "আমরা রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে একই রক্তধারার অধিকারী"! নবী (সাঃ) তখন সাফিয়া (রাঃ) কে বললেন, তুমি কেন বললে না যে, "আমি আল্লাহর নবী হারুণ আলাইহিস্ সালাম এর বংশধর এবং আমার স্বামী আল্লাহর প্রেরিত রাসুল! উল্লেখ্য হারুণ (আঃ) ও মূসা (আঃ) সম্পর্কে ভাই এবং তারা দুজনই আল্লাহর নবী ছিলেন।

সাফিয়া (রাঃ) অত্যধিক দান করতেন। তাঁর প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল। তিনি ইন্তেকালের সময় কিছু সম্পদ তার বোনের এক সন্তানকে দান করেন এবং বাকী অংশ গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে যান। তার কোন সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করেনি। এ কারণে তিনি ছোট বাচ্চাদের প্রতি ভীষণ মমত্ব দেখাতেন। শিশুদের কে নানা রকম পোষাকে সাজাতে পছন্দ করতেন। ৬০ বছর বয়সে তিনি মদিনাতেই ইন্তেকাল করেন। মসজিদে নববীর অদূরে, জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

- টিপু

পঠিত : ১৮৯০ বার

মন্তব্য: ০