Alapon

ডিপ্রেশন এর কারন এবং সমাধান...


সময়টি ২০১৪। সদ্য কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোঁয়া লাগবে লাগবে প্রায়। কলেজ জীবন অনেকটা দেয়ালের মধ্যে কাটিয়েছিল রাসেল। সময় মত পড়ালেখা, কোচিং,সময় মত বাড়ি ফেরা, বাবা মায়ের কথা শুনা এককথায় মোটামুটি তার সময়টি চলে যাচ্ছিল।হাজার ইচ্ছে থাকলেও চাপে পরে অনেক কিছু করতে চেয়েও পেরে উঠেনি সে। এইভাবে কাটতে কাটতে কলেজও শেষ এখন বিশ্ববিদ্যালয়। যথাসময়ে ভর্তি পরীক্ষা হল এবং একটা নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়ার সুযোগ হল। বিশ্ববিদ্যালয় বাসার থেকে দূরে হওয়ায় তার স্থান হল কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা বাসা নিয়ে থাকা।

রাসেল মনে মনে বেজায় খুশি এইবার তার ইচ্ছে গুলো সে পূরণ করতে পারবে,যখন যা ইচ্ছে করতে পারবে, তাকে বাধা দেয়ার বা বকা দেয়ার কেউ নেই। রাসেলের পরিবার ও সচ্ছল।বাবার সরকারি চাকুরী এবং পরিবারও ছোটখাট। বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাসময়ে নোটিশ এল এবং রাসেলকে চলে যেতে হবে, সেই সুবাদে তাকে একটা ফোন কিনে দেয়া হয় যাতে যোগাযোগ করতে পারে।নতুন মোবাইল পেয়ে রাসেল খুশি। রুমে তারা চারজন। চারজনই সচ্ছল পরিবারের। সবার সাথে রাসেলের ভালো সম্পর্ক হতে লাগল।তার বাকি তিন বন্ধুর ছিল খুব দামী দামী স্মার্ট ফোন,সে থেকে রাসেলের ফোনটা ছিল খুব নিম্নমানের।তারা প্রতিদিন একসাথে গেইম খেলত,মজা করত।একদিন এক বন্ধু বলেই বসল কিরে তুই এইসব কি মোবাইল ব্যবহার করিস,এখন কি এইসবের চল আছে,একটা দামী সেট নিয়ে নে না,সবাই মিলে গেইমস খেলব আরো কত কি করা যায়। কথাটা শুনে রাসেল কিঞ্চিৎ হাসি দিল।কিন্তু কথাটা তার মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল।যখনই কিছু করতে চাইত মন দিয়ে তখনই কথাটা তার মাথায় ঘুরত।চিন্তায় রাসেলের ঘুমই আসত না। বারবার চিন্তা করতে লাগল তার এইটা লাগবেই,একটা দামী মোবাইল তার কিনা লাগবে কারণ সে যে ক্লাসের সাথে তাল মিলাতে পারছে না।একদিন মাকে সাহস করে রাসেল বলেই বসে, মা আমার একটা দামি মোবাইল লাগবে,ক্লাসের পড়া, ফাইল গুলো সবাই গ্রুপে দিয়ে দেয় তো আমি কিছু নিতে পারি না।মা চিন্তা করে বাবাকে বলে ছেলের মন মত একটা মোবাইল কিনেই দিল।রাসেল মোবাইল পেয়ে বন্ধু দের সাথে খেলায় মজে গেল।রাত নেই, দিন নেই শুধু খেলা আর খেলা।রাসেলকে হাত খরচ দেয়া হত মাসে ৪০০০ হাজার টাকা।।কিন্তু তার অন্যান্য বন্ধুদের দেয়া হত প্রায় অনেক টাকা। তারা টাকা গুলোকে ইচ্ছে মত খরচ করে, যা ইচ্ছে তা করে।রাসেল তার সীমিত টাকা দিয়ে একমাস চালিয়ে নিতেও খুব কষ্ট হয়ে যেত।তাদের চার বন্ধুর মধ্যে মাসুম সিগেরেট খায়।একদিন রাসেলের মন খারাপ, পরিবার থেকে দূরে, ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারছে না।মাসুম বলল আরে মন খারাপ করিস না,এখন তো তুই যেতে চাইলেও পারবি না যেতে।চল তোকে আজকে এমন একটা জিনিস খাওয়াব যা খেলে তোর চিন্তা চলে যাবে,মন খারাপ চলে যাবে।রাসেল খুশি মনে রাজি হয়ে গেল।মাসুম দুটা সিগেরেট নিল, রাসেল প্রথমে না করলেও, কষ্ট হলেও খেল।

এইভাবে মাঝেমাঝে রাসেলের খাওয়া হত। আস্তে আস্তে ১ টা ১ টা করে যে কখন সেটা ১ প্যাকেটে রূপ নিল রাসেল নিজেও বুঝতে পারে নি।রাসেলের মাসিক খরচ দিয়ে রাসেল তার চাহিদা পূরণ করতে পারছিল না। সিগেরেট খেতে না পারলে সারাদিন ছটফট ছটফট করতে থাকত।একদিন না খেলে তার ঘুম আসাও বন্ধ প্রায়। মাসিক খরচের টাকা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য বললে,মা জিজ্ঞেস করে এতো টাকা কেন, কাজ আছে আজকে প্রজেক্ট কাল সিটি পরীক্ষা এইসবের জন্য। মাসিক খরচও বাড়ল। একটা সময়ে সে পুরোপুরি নির্ভর হয়ে গেল। সে এখন অন্য জগতের বাসিন্দা। ক্লাসের সবার সাথে অনেকটা তাল মিলিয়ে চলতে থাকে।আজকে ক্লাস পার্টি,কাল ট্যুর এইসবের সাথে খোস গল্পে দিন চলতে থাকে।এইভাবে চলতে চলতে রাসেলের জীবনে ঘটে যায় আরেকটি রোমান্ঞ্চকর ঘটনা।

চার বন্ধু ছাড়াও আরো কিছু বন্ধু নিয়ে ঘুরাঘুরি হত।এদের মধ্যে একজন হল তন্নি।তারা সকলেই বন্ধু। এইভাবে বন্ধুত্ব চলতে চলতে কখন যে তন্নিকে রাসেলের ভালো লাগতে শুরু করে সে বুঝে উঠতে পারে না।যেই ভাবা সেই কাজ বন্ধুরাও ব্যাপারটা বুঝতে পারে।রাসেলের ক্লাসে মনোযোগ থাকলেও ৮০% মনোযোগ তন্নির দিকে। কেউ কিছু বললেও সেটা লক্ষ রাখত,অনেকটা তন্নিকে চোখেচোখে রাখা এমন।বন্ধুরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তাকে প্রোপোজ করতে বলে।দোস্ত সামনে ১৪ ফ্রেবুয়ারী, ভালোবাসা দিবস তুই তন্নিকে প্রপোজ করেই দে। রাসেলও ভেবে চিন্তে একটা লাল গোলাপ দিয়ে তাকে প্রোপোজ করে বসল। কয়েকদিনের সময় নিয়ে তন্নিও রাসেলকে গ্রহণ করে নিল।রাসেলের জীবনে এখন আরেকটি ধারা বহমান।এই আরেক নতুন নেশায় রাসেল মগ্ন। দিনরাত কথা হত তাদের।এইদিকে হাত খরচেও রাসেলের চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আজকে এই গিফট কালকে এই গিফট।সবকিছুই তারকাছে নেশার মত। কাউকেই ছাড়তে পারছে না।মাসিক খরচের দিকে তাকালে রাসেল এখন পাগল প্রায়। বন্ধুদের থেকে ধার দেনাও করেছে মাঝেমাঝে।

সময়টি রাত ১২ টা। হঠাৎ একটা কল।কলের ওপাশে একজন মহিলার কন্ঠ। অপরিচিত হওয়ায় চিনতে একটু সময় লাগলেও পরক্ষণেই বুঝে যায় এইযে মা।মা কেঁদে কেঁদে বলছে বাবা তোর বাপের চাকরি নাই।কথাটা যেন রাসেলের মাথায় আকাশ ভেঙে পরার মত।এখন কি হবে,রাসেলের পরিবারে একমাত্র আয় করত তারই বাবা।তার বাবা চাকরি হারায় এখন কি হবে। এরই মধ্যে বারবার ট্রাই করে মোবাইল বিজি পাচ্ছে তন্নি।প্রায় অনেকবার বিজি পাওয়ায় আজকের মত রেখে দিয়েছে। একেরপর এক সিগেরেট খেয়ে যাচ্ছে রাসেল, আর ভাবছে এখন কি হবে।সারারাত না ঘুমিয়ে বিষণ্ন মন,ক্লাসে গেলে তন্নি জানতে চায় কাল রাতে কার সাথে এতো কথা বলছিলে,আমাকে আর ভালো লাগছে না তোমার। অনেকটা সন্দেহ চোখে দেখছিল।রাসেল কোন কিছুর উত্তর না দিয়ে চুপ করে চলে আসে।

এইভাবে তাদের সম্পর্কে ফাটল পরে।এইদিকে পরিবারের আর্থিক সমস্যা,রাসেলকে পাগল প্রায় করে দিচ্ছিল।কি করবে সে ভেবে উঠতে পারছিল না।বাবার যা বয়স হয়েছে এই বয়সে যে নতুন করে কিছু করবে সেও জোড় নেই।ওইদিকে সন্দেহ ঝগড়া সব লেগেই আছে একেরপর এক।।চিন্তায় রাসেলের চোখে শান্তির ঘুমটিও হারিয়ে গেল।সামনে তন্নির জন্মদিন,এইদিনে কি দিবে এইটা নিয়েও ভেবে পাচ্ছিল না।জন্মদিনে দেখা করল ঘুরল কিন্তু তারপরও রাসেলের মনে হচ্ছিল সব আছে কিন্তু কিছু একটা যেন নেই নেই।কিছু একটা কমতি পরে যাচ্ছিল তার মনে।বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ আবার মায়ের কল।মা সচরাচর এই সময়ে কল দেয় না,কল ধরার সাথে সাথে ওইপাশ থেকে বলছে বাবা তোর বাবা নেই আর।এইটা শুনার সাথে সাথে কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠার আগে রাসেল কল কেটে দিল।মনিরকে কল করল টিকেট কাটার জন্য।পাশ থেকে বারবার জিজ্ঞেসা করছে কি হয়েছে হঠাৎ এইসময়ে কেন বাড়ি যাবি।কিছু না বলেই চলে গেল রুমে।মনিরকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরল ।সবশেষ মনির,সব শেষ।বাবার দাফন শেষে যখন আবার রুমে ফিরে আসল তখন প্রায় ১৫ দিন।

এইবার তার ওপর সম্পূর্ণ দায়িত্ব একটা পরিবারের। বড় ছেলে হিসেবে কিছু একটা তো করতে হবে।একদিকে পরিবারের খরচ চালানো,আরেকদিকে নিজের পড়ালেখা, সবকিছু এলোমেলো প্রায়।সুখ জিনিসটা একদম হারিয়ে ফেলার মত। এমন করে চলতে চলতে চলে এলো পরীক্ষা।পরীক্ষার ফী কোনমতে ম্যানেজ করে পরীক্ষা দিলেও ভাল ফলাফল করা হয়ে উঠে না।কয়েকটা সাবজেক্টে রিটেক।চিন্তার যেন শেষই হচ্ছে না।সুখ পাখিটা যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। ওইদিকে সময় দিতে না পারায় তন্নিও ছেড়ে দিয়েছে।সবদিক থেকে সবকিছু হারিয়ে ফেলায় কোনকিছুতেই আর মন বসাতে সক্ষম নয়।দিনদিন শারীরিক অবস্থার অবনতি। হাত খরচও তেমন জোগাতে পারছে না।কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না।একটা আশ্রয় দরকার ছিল,পরম আশ্রয় কিন্তু কোনকিছুতেই মন বসছিল না।কাউকে শেয়ার করে অন্তরের লুকানো কষ্ট দূর করতে বারবার ব্যর্থ হয়ে পরছিল।এতোদিন কোন মতে চললেও জমানো টাকা যখন প্রায় শেষ তখন আরো অন্ধকার নেমে আসছিল রাসেলের জীবনে।নিজেকে চরম ব্যর্থ মনে হচ্ছিল তার,এই জীবন কেন রাখবে যখন কারো দরকারেই না আসে।খাওয়া দাওয়া,গোসল,পড়ালেখা সব কিছুতে অনিয়ম দেখা দিল।একা একা সময় কাটানো তার প্রতিদিনের নিত্য কর্ম।হুটহাট করে রেগে যাওয়া।অল্পতে চুপচাপ হয়ে যাওয়া।সবাই ভাবতে লাগল রাসেলের ছাড়াছাড়ি হওয়ায় রাসেল একটু চুপচাপ তাই বন্ধুরাও তেমন ঘাটালো না তাকে নিয়ে, কিন্তু শুধুমাত্র রাসেলই যানে তার মনের অবস্থা। তার এখন আশ্রয় দরকার। সবকিছু অন্ধকার,জীবনটা তুচ্ছ তারকাছে।মোজাম্মেল স্যারের ক্লাস চলছে,স্যারকে সবাই কম বেশি ভয় পায়।স্যারের ক্লাসে থাকে পিনপটন নিরবতা। ক্লাসে একটা পিন পরলেও আওয়াজ শুনা যায় এমন অবস্থা থাকে। এমনও সময় যায় স্যারের পড়া না বুঝলেও স্যারকে প্রশ্ন করতে ভয় পায় সকলে।স্যার পড়িয়ে যাচ্ছে, রাসেলের ক্লাসে মন নেই।সারারাত না ঘুম হওয়ায় ক্লাসে একটু ঘুমঘুম ভাব থাকায় কয়েকবার ঘুমিয়েও পরেছিল,ব্যাপারটা সকলের চোখে পরলেও স্যারের ভয়ে তাকে কিছু জানাতে পারছিল না।পরক্ষণেই স্যার যখন রাসেলকে এমন অবস্থায় দেখে ফেলে এবং সকলের সামনে দাঁড় করিয়ে নানা রকম বাজে কথা বলতে থাকে।রাসেল সব শুনে যাচ্ছিল, হঠাৎ কি হল রাগে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়।এমন পরিস্থিতি দেখে ক্লাসের সবাই থ হয়ে গেল, স্যারও চরম বেয়াদবি অনুভব করল।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল রাসেল আর যাই হোক এমন ছেলে নয়।ক্লাসের একজন উঠে বলল স্যার কিছুদিন আগে ওর বাবা মারা গিয়েছে,এর পর থেকেই ও কেমন যেন হয়ে গিয়েছে,নাওয়া খাওয়া ঠিক মত করে না,এমনকি রাতেও ঘুমায় না তাই হয়ত এমন আচরণ করে বসল। সবকিছু মিলিয়ে রাসেল একধরনের আর্থিক সমস্যায় পরে একটা টিউশনি শুরু করল।

ভালই চলছিল সব কিছু বিকেলের নাস্তাটা তার হয়ে যেত টিউশনিতে,কিন্তু সুখ যেন তার বেশিদিন টিকছিল না।মাস শেষ হয়েছে আজ প্রায় ১০ দিন হল।কিন্তু কোন টাকা দেয়ার পাত্তাই নেই।একদিন লাজ লজ্জা ভেঙ্গে টাকা চেয়েই বসল,কিন্তু তাদের নাকি আর্থিক সমস্যা চলছে তাই দিতে পারছে না।সামনের মাসে একসাথে দিবে।কিন্তু মাস যেতে লাগল কিন্তু টাকা আর পাওয়া হল না।এদিকে রুম ভাড়া,খাওয়ার বিল, দোকানের বাকি,মায়ের ওষুধ খরচ একে একে সব জমা হতে লাগল।কি করবে রাসেল এই ভেবে পাচ্ছিল না।একদম অসহায় হয়ে কাউকে মনের কষ্ট না বুঝাতে পেরে নিজেই ভিতরে ভিতরে জ্বলছিল।মাও চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পরছে।কিভাবে কি করবে।অশান্তি যেন তাদের পিছু ছাড়ছেই না।কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না।মুনতাসীর ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে শান্ত ছেলে।সবাই কম বেশ ওক পছন্দ করে।মোজাম্মেল স্যারের ক্লাসে রাসেলের এমন আচরণ তাকে ভাবায়। সেই থেকে রাসেলকে অনুসরণ করতে থাকে। রাসেল কি করে সারাদিন।ক্লাসের বন্ধুদের মাধ্যমে এও জেনেছে যে রাসেলের রুম, খাওয়ার বিল সব জমা হতে চলেছে।প্রথম প্রথম বন্ধুরা মিলে পরিশোধ করলেও পরে তাদের পক্ষেও টানা সম্ভব হয়ে উঠছিল না।তার ওপর রাসেলের কিছু সাবজেক্টে খারাপ ফলাফল হওয়ায় রিটেকও জমেছে।টাকার অংকটা দিনদিন ভারি হতে চলেছে। এনায়েত মামার দোকান এক নামে সবাই চিনে।সকলে প্রায় ওখানেই নাস্তা করে। সাথে সিগেরেট, পান, সুপারিও বেচে। কি মামা মেলা দিন হয় আপন্নে সিগেরেট খান না।না মামা টাকা নাই,আরে মামা কত মাইনষে তো বাকিতে খায় আপনিও খান একটা।রাসেল সিগেরেট নিল, কিন্তু সে আগ্রহ পাচ্ছে না আগের মত,সেই অনূভুতি ও যেন হারিয়ে গিয়েছে তার থেকে। মাথায় এতোগুলো চিন্তা তাকে সবকিছুর প্রতি অনিহার জন্ম দিচ্ছে দিনদিন।টিউশনিতে অর্ধেক মাসের টাকা নিয়ে, আপনারা নতুন স্যার খুঁজেন আমার পক্ষে আর সম্ভব না।এই বলে রাসেল বের হয়ে পরে।ঘড়িতে তখন ৯ টা বাজে।ভাবতে থাকে এই সামান্য টাকা দিয়ে তার খাওয়ার বিলেই সব শেষ হয়ে যাবে, কিভাবে চলবে এইটা নিয়ে ভাবতে থাকে।খুব অসহায় মনে হচ্ছিল নিজেকে।চিৎকার করে মাঝ রাস্তায় কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারছিল না,চোখ জ্বলজ্বল করছিল অশ্রুতে।মাথাটাও ঝিমঝিম করছিল দেখে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে পরল।নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে রেখেও যেন পারছিল না। কেন বেঁচে আছে,তারমত অসহায় আর কেউ নেই, কার কাছে আশ্রয় পাবে,কে তাকে এই বিশাল অন্ধকার থেকে রক্ষা করবে।নিজেকে মনে হচ্ছে বিশাল ঘন ঘুটঘুটে অন্ধকার মাঠে সে একা তার চারপাশে আগুন জ্বলছে কিছুক্ষণ পরই সেই আগুনে নিজেই ছাই হয়ে যাবে।মুনতাসীর রাসেলের কথা ভাবছিল।রিকশা থেকে হঠাৎ চোখ পড়ল ল্যাম্পপোস্টের দিকে।চোখ পড়া মাত্রই আর দেরি হল না চিনতে। এই মামা দাঁড়ান এইখানে।মাথা নিচু করে রাসেল।মুনতাসীর সামনে গিয়ে দেখল রাস্তায় ফোঁটাফোঁটা পানি পরছে,বুঝতে আর বাকি রইল না রাসেল যে কাঁদছে।

ঘাড়ে হাত রাখা মাত্রই রাসেল ওপরে মুখ তুলল আর নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।মুনতাসীর বুঝতে পেরে কিছুই বলল না চুপ করে রইল।ভাবল একটু কেঁদে নিজেকে হালকা করে নিক।কিছুক্ষণ পর রাসেল বলল দোস্ত আমার এখন কি হবে।একেএকে সব কিছু হারিয়ে ফেলছি।তুই তো জানিস তন্নিও ভুল বুঝে চলে গেল,তারকিছু দিন পরই বাবাও না ফেরার দেশে চলে গেল,এখন মায়ের শরীরের অবস্থা ও ভালো না।টিউশন করাতাম ঠিকমত টাকাও পাই নি।এই জীবন রেখে কি আর হবে আমার।কতটাকাই না উড়িয়েছি আমি। কত কিছুই না করেছি আর আজ দেখ আমার সুখ জিনিসটা আমি হারিয়ে ফেলছি।কখন ঠিকমত হেসেছি প্রাণ খুলে আমি ভুলে গিয়েছি।হাসতে চাইলেও আমার হাসি আসে না।বন্ধু আমি কার কাছে আশ্রয় পাব,আমি কাউকে মন খুলে কিছুই বলতে পারছি না।আমার পরম আশ্রয় দরকার। মুনতাসীর রাসেলের ডান হাত বাম হাতের ওপর রেখে বলল "অবশ্যই তুমি পাবে,যা তোমার থেকে চলে গেছে, তার চেয়েও উত্তম" (সূরা আনফাল ৭০)। কথাটা শুনা মাত্র মুখ তুলে জানতে চাইল কোথায় পাব, কখন পাব?মুনতাসীর কিছুই বলল না। চল দেরি হয়ে যাচ্ছে রুমে যা।রাসেলকে সুন্দর করে রুমে পৌছে দিয়ে মুনতাসীর চলে গেল।সারারাত মুনতাসীরের কথাটা চিন্তা করতে লাগল।কেমনে পাব আমি যা হারিয়েছি তার চেয়েও উত্তম।সে রাতও না ঘুমিয়ে ক্লাসে ঠিকই গেল। কোনমতে ক্লাস করল।

ক্লাস শেষে রুমে ফিরবে না ঠিক করে চলে যাচ্ছিল,পিছন থেকে মুনতাসীর ডাক দিল। এই রাসেল দাড়া।মুনতাসীর আজ ক্লাসে ছিল না।তাই মুনতাসীরকে দেখা মাত্র খুশিতে কাল রাতের কথাটা জানতে চাইল।মুনতাসীরের হাতে একটা ব্যাগ।। ব্যাগটা রাসেলকে দিয়ে বলল এই নে এটা তোর জন্য।না চাইতে সত্ত্বেও জোর করে ধরিয়ে দিয়ে মুনতাসীর চলে গেল।সারাদিন ব্যাগ হাতে ওইকথাটার কথা ভাবতে লাগল।রুমে গিয়ে ব্যাগটা রেখে শুয়ে পরবে এমন সময় ভাবল ব্যাগে কি এমন দিল না চাওয়া সত্ত্বেও ও জোর করে দিল।ব্যাগের ভিতরে রেপিং করা বইয়ের মত কি যেন। রেপিং এর ওপর গোটাগোটা অক্ষরে লিখা "বন্ধু এই জিনিসটাকে আঁকড়ে ধর,তাহলে আর পিছনে ফিরতে হবে না"ইতি মুনতাসীর। লিখা টা পরে রাসেল থমকে গেল।কি এমন জিনিস।রেপিং খুলার পর রাসেল দেখতে পেল এইযে বাংলা অনুবাদ এবং তাফসীর সহ কোরআন। আরেকটি কাগজের ওপর লিখা বন্ধু এই পৃথিবীতে কেউ আপন নয়,শুধুমাত্র একজন ছাড়া,তুমি তোমার সব মনের কথা, যা কাউকে বলতে পারছিলে না, তা মন খুলে বল এইবার নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন।তার পুরো শরীর কাঁপছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, বামে তাকাল, ডানে তাকাল সবাই ঘুম।পরক্ষণেই ভাবতে লাগল,আমার মত এতবড় পাপী বান্দা কি করে এমন কিছু করবে,আমি কি নেই যে করি নাই,যা যা নিষেধাজ্ঞা ছিল সবই করেছি,মিথ্যা,হারাম খাওয়া,বাবা মার কথার অবাধ্য,জিনা করেছি।আমাকে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন।এইসব ভাবতে লাগল।অপেক্ষা করতে লাগল কালকের জন্য, ক্লাসে মুনতাসীরকে জিজ্ঞেসা করবে।পরদিন সকালে মুনতাসীর কে সব খুলে বললে তখন তাকে আশ্বস্ত করে বলে তুই যদি পাপ করতে করতে করতে একদম পাহাড় সমানও পাপ করে ফেলিস তারপরও যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করিস তার পরও তোকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন,কারণ আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি তার বান্দাদের দেখেন,তাদের ক্ষমার জন্য অপেক্ষা করেন।তুই তো মানুষ তোর ভুল হতেই পারে কিন্তু তোর জন্য ভুল শুধরানোর একটাই রাস্তা তওবা।তুই ক্ষমা চেয়ে নে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোকে সাহায্য করবেন।কিন্তু বন্ধু আমি কিভাবে ক্ষমা চাইব? সালাত হল একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে তুই আল্লাহর একদম নিকটে চলে যেতে পারবি, সিজদায় পরে থাকবি এবং তোর মনে জমানো সকল কথা বলবি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোর সহায় হবেন। দূর থেকে আযানের ধ্বনি আসছিল।চল আজ থেকে শুরু করা যাক। নামায শেষ করে একরকম শান্তি অনুভব করতে লাগল। নিজেকে হালকা হালকা মনে হতে লাগল।রুমে গিয়ে কোরআন পড়তে লাগল অর্থ সহ।বুঝে বুঝে পড়ছিল আর ভাবছিল এতোদিন আমি কি করলাম।কোথায় ডুবে ছিলাম। এইযে একমাত্র মাধ্যম। ["তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। (সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৩)]এ আয়াত দ্বারা বুঝতে যায়, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে কোনো গুরুতর বিপদে পড়তে পারে না। সকল মুহূর্তের জন্য আল্লাহ তার সহায় হয়ে থাকবেন।" রাসেল ভাবতে লাগল এতোদিন সে পাগলের মত করেছে কিন্তু এক আল্লাহকে ভুলে অনেক কিছু করতে চেয়েছিল কিন্তু তার বিপদ কাটে নি বরং বেড়েই চলেছিল।["তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। তারই কাছে সকলকে ফিরতে হবে। (সূরা তাগাবুন, আয়াত: ৩)]এখানে আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে তৈরি ও তার কাছেই নিশ্চিত ফিরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।আল্লাহ তার যে সৃষ্টিকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সৃষ্টি করেই তিনি ছেড়ে দেননি। পাশাপাশি তার উপর সর্বদা খেয়াল রাখছেন। সকল মানুষকেই তার কাছে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং, আল্লাহ সবসময় তার বান্দাদের সাথে আছেন।"নিজেকে এখন আর একা অনুভব হচ্ছিল না বরং ভাবছিল আল্লাহ আমার পাশে আছেন।তিনি আমার রিযিক দাতা,আমার সর্বদা খেয়াল রাখছেন।[""যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। (সূরা তালাক, আয়াত: ২-৩)]আল্লাহ তার উপর নির্ভরকারী ব্যক্তিতে এ আয়াতে সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। বান্দা যখন এক আল্লাহর উপর নির্ভর করতে পারে, তখন দুনিয়ার সকল আপদ-বিপদ, দুশ্চিন্তা থেকে সে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়"" এতোদিন আল্লাহর ওপর ভরসা না করে আল্লাহর সৃষ্টি বান্দার ওপর ভরসা করায় তার একের পর এক বিপদ পিছু ছাড়ছিল না। ["আমার রহমত সব বস্তুকে আবৃত করে আছে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৬)]আল্লাহ তার সকল সৃষ্টির প্রতি যেমন প্রতিমুহূর্তে খেয়াল রাখছেন, তেমনি প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহূর্তে খেয়াল রাখছেন। সুতরাং, মানুষের হতাশার কোনো কারণই থাকতে পারে না।"আয়াতটি পড়া মাত্রই মনে হতে লাগল এতোদিন কেন আমি হতাশা হয়ে পড়েছিলাম।কেন আল্লাহর ওপর ধৈর্য্য না হয়ে নিজেকে পরম একা মনে করেছিলাম।কত অন্ধই না আমি যিনি আমাকে প্রতিমুহূর্তে খেয়াল রাখছেন আমি তার থেকে কতটা দূরে ছিলাম।আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।আমি আপনারই গোলাম।আমাকে ক্ষমা করুন।["যা তোমার পালনকর্তা বলেন, তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হইও না। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬০)]আল্লাহর চেয়ে অধিক জ্ঞানী আর কেউ হতে পারে না। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর নির্ভর করতে পারে, তার জীবনে সাফল্যের অনিশ্চয়তার কোনো শঙ্কা থাকতে পারে না।"["আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)]মানুষকে আল্লাহপাক যে পরিস্থিতিতেই রাখুন না কেন, মানুষ যদি সহনশীলতার সাথে সামনে অগ্রসর হয়, তবে কোনো কিছুই তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।" ["নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত: ৬)]মানুষের জীবন একাধারে দুঃখের আধার নয়, সার্বক্ষণিক সুখেরও নয়। জীবনে যেমন দুঃখ আছে, তেমনি সুখও আছে। কষ্টের পাশাপাশি স্বস্তিরও অনেক মুহূর্ত আসে জীবনে। জীবনে চূড়ান্ত হতাশার কিছুই নেই।"নিজের সব কষ্টের কথা মনে করতে লাগল আর ভাবতে লাগল নিশ্চয় আল্লাহ আমার খেয়াল রাখছেন।[উত্তম কাজ করো। আল্লাহ উত্তম কাজ করা ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)]আল্লাহ এখানে মানুষকে সর্বদা উত্তম কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। যে ব্যক্তি উত্তম কাজের সাথে থাকবে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসবেন।একের পর এক খারাপ কাজ করেছি, এমন কোনো কাজ নেই আমি করি নি।তারপরও আমার রিযিক বন্ধ হয় নি, কোন না কোন ভাবেই আল্লাহ আমার রিযিক মিলিয়ে দিয়েছেন।আল্লাহ অসীম দয়ালু । ["অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল, আয়াত: ৬-৭)]মানুষ যে কাজই করুক না কেন, তা কখনোই ব্যর্থ হতে পারে না। যত ছোট কাজই হোক, তার প্রতিদান সে পাবে। সুতরাং, তার হতাশার কোনো কারণ নেই।"আল্লাহ আমি কি করেছি না করেছি আপনি সবকিছুই জানেন।আমার জানা অজানা, প্রকাশ্যে, অপ্রকাশ্যে সকল গুনাহ ক্ষমা করুন,আপনি যদি ক্ষমা না করেন তাহলে কে করবে।আপনি অসীম দয়ালু। ["বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩)]আল্লাহর ক্ষমাশীলতার মহাসমুদ্রের প্রমাণ এ আয়াত। আল্লাহ এখানে বান্দাকে তার রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর কাছে যদি সঠিকভাবে কেউ ক্ষমা চাইতে পারে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে তার রহমতের চাদরের নিচে আশ্রয় দেন।"হায়! কত না নিজের ওপর যুলুম করেছি,কত নিরাশ হয়েছি,কতনা পাপ কাজ করেছি তারপরও আল্লাহ বলছেন আমি ক্ষমাশীল হে আমার বান্দাগন তোমরা নিরাশ হয়ো না।আমি সকল গুনাহ ক্ষমা করব এবং তোমাদেরকে আমার রহমতের চাদরে আশ্রয় দিব। আয়াত গুলো পরার পর অঝোর ধারায় কেঁদে চলছে রাসেল।নিজের প্রত্যেকেটি ভুল পাপ কাজ তাকে ভাবিয়ে তুলছে।এতোদিন কোন আধারে লুকিয়ে ছিল।নিজেকে অনেকদিন পর হালকা মনে হচ্ছে। বুকের মধ্যে জমানো পাথর নেমেছে। অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথের ঠিকানা পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। রাসেল বুঝতে পারল মানুষের জীবনের চাওয়াকে দুইভাগে ভাগ করা যায়।এক হল শারীরিক চাওয়া। যেটি যেভাবে খুশি পূরণ করা যায়,যখন যা ইচ্ছে করা যায়,ইচ্ছে করল কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলে চলে যেতে পারল,ইচ্ছে করল এই নতুন জামাটা কিনতে সাথে সাথে কিনে ফেলল,যখন যা ইচ্ছে করতে পারছে।আরেক হল আত্মিক। সবকিছু পূরণ করার পরও কোথাও যেন ফাঁকা ফাঁকা।রাতে ঘুমালে ঘুম আসছে না।কি নেই সবই আছে।তারপরও যেন শান্তি জিনিসটা হারিয়ে গেছে।সবকিছু থাকার পরও যেন বরকত,রহমত জিনিসটা যেন নেই। অনেক সময় এমন অনেক নিউজ পাওয়া যায়,বড়বড় সেলিব্রিটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে।রাসেল ভাবতে থাকে কি নেই তাদের জীবনে নাম যশ খ্যাতি।যখন যা ইচ্ছে চাইলে তারা করতে পারত,কত বিশাল পরিমাণ ফ্যানবেজ তাদের তারপরও কোথায় যেন তাদের কমতি পরে যেত।কিছু একটার তাড়নায় তারা অস্থিরতায় থাকত। এমন কিছু তারকা হল হিট লেজার, রবিন উইলিয়ামস, Chester Bennington। এমন আরো অনেক বড় বড় তারকা আছে।কি ছিল না তাদের জীবনে।সবকিছুই ছিল।কিন্তু তারপরও তাদের বেছে নিতে হয়েছে আত্মহত্যার মত জঘন্য রাস্তা। এই আত্মিক শান্তি হল সব চেয়ে বড় শান্তি।শারীরিক চাহিদা যেমনেই হোক পূরণ করতে পারলেও আত্মিক শান্তির জন্য ফিরে যেতে হবে রবের দিকে,সৃষ্টি কর্তার দিকে।একাগ্রচিত্তে সালাত আদায় করা,কেননা সালাতই একমাত্র মাধ্যম যা বান্দাকে আল্লাহর একান্ত নিকটে স্হাপন করে।আর আল্লাহ তো নিজেই বলেছেন যে ”বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩)
রাসেল মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আমি জান্নাতে যেতে চাই, তবে একা না আমার সাথে কিছু মানুষকে নিয়ে আমি জান্নাতে যেতে চাই। রাসেলকে মামার দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল কিরে কেমন আছিস?
"আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে খুব ভালো আছি"

রিডার্স ডাইজেস্ট অনুযায়ী ডিপ্রেশনের কিছু কারণঃ
‘ডিপ্রেশন’ শব্দটির সাথে বর্তমান যুগে পরিচয় থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ- ‘ডিপ্রেশন’। কিছু বুঝে কিংবা না বুঝেই এই শব্দটি ব্যবহারের উদাহরণও কম নয়! ছোটখাটো মন খারাপকেও “আমি ডিপ্রেশনে আছি” বলে চালিয়ে দেয়াটা এখন হরহামেশাই ঘটে হয়তো আপনার বন্ধুমহলেও! ডিপ্রেশন মানে কি শুধুই মন খারাপ? নাকি তার চেয়েও অনেক বড় কিছু বোঝায় এই শব্দটি দ্বারা? মানবমনের একটি জটিল স্তরে গিয়ে মানুষ এই ডিপ্রেশনের শিকার হয়। রিডার্স ডাইজেস্ট অনুযায়ী, কেউ ডিপ্রেশনে ভুগছে কিনা তা জানার রয়েছে আটটি লক্ষণ। আজ সেই লক্ষণগুলো নিয়েই কথা বলবো। দেখে নেয়া যাক আসলেই কারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন এবং কাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এই লক্ষণগুলো?১. অনুভূতিগুলো বেশিরভাগ লুকিয়ে রাখা,২. ভালো বা খারাপ- কোনোটাই না থাকা,৩. ইচ্ছে করেই প্রচন্ড ব্যস্ত একটি জীবন বেছে নেয়া,৪. অল্পতেই রেগে যাওয়া,৫. অহেতুক ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করা,৬. চিন্তা-ভাবনায় অস্পষ্টতা।

আরো কিছু কমন কারণ দেখা যায়:কেন এ রোগ হয় নির্দিষ্ট করে কারো পক্ষেই তা বলা সম্ভব না। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কিছু কমন কারণ থাকে।১. অপমানবোধ,২. নিরাপত্তাহীনতা বা একাকীত্ব,৩. মৃত্যুশোক,৪. বংশগত প্রভাব,৫. জীবন পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন,৬. বড় কোন রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া,৭. ঔষধের প্রভাব।⁕কী করে বুঝবেন যে আপনি বিষন্নতায় ভুগছেন?১. কাজের প্রতি অনীহা,২. খাদ্যাভাসে পরিবর্তন,৩. দীর্ঘকালীন অনিদ্রা,৪. অবসাদ,৫. নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়া,৬. সবকিছুতেই মনোযোগের অভাব,৭. সব বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব,৮. মাথা ব্যথা ও গাস্ট্রিকের সমস্যা

কিভাবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব?

Royal College of Psychiatrists এর মতেঃ১.নিজের ভিতরে কথা চেপে রাখবেন না,২.নিজে কিছু করুন৩.ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করুন,৪.মদ থেকে সাবধান,৫.ঠিক মত ঘুমান,৬আশা রাখুন,৬কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি,৭.বিষাদপ্রতিরােধক বড়ি
*•*কোরআন হাদিসের আলোকে দুশ্চিন্তা দূর করার কিছু আমল বর্ণনা করা হল:(কালের কন্ঠঃ ২৪ জানুয়ারি ২০২০)

বিপদ-আপদ মানবজীবনের নিত্যসঙ্গী। বিপদ-আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব হতে পারে, রহমতও হতে পারে। বিপদ আসার পর যদি গুনাহ বেড়ে যায়, আমল কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব। পক্ষান্তরে যদি বিপদ আসার পর আমল বেড়ে যায়, তাহলে বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে দুশ্চিন্তা ও বিপদাপদে ঈমানদারের করণীয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো—
১. ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন।কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই...।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৭)

২. দুনিয়ার বিপদের তুলনায় পরকালের বিপদের কথা স্মরণ করুন।পরকালের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ খুবই নগণ্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ৪৬)

৩. আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তাঁর ওপর ভরসা রাখুন। আশা রাখুন যে তিনি আপনাকে আপনার দুরবস্থা থেকে নাজাত দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯০১)

৪. ধৈর্য্য ধারণ করুন। বিশ্বাস করুন যে কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ্য আসে। কঠিন অবস্থার পর সচ্ছলতা আসে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘...নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

৫. সালাতুল হাজাত পড়ুন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন হতেন।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

৬. বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০)

৭. অধিক হারে দরুদ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, উবাই ইবন কাব (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার ওপর অধিক হারে দরূদ পাঠ করে থাকি। আমার সময়ের কতটুকু আপনার প্রতি দরূদ পাঠে ব্যয় করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা। কিন্তু যদি আরো বাড়াও তবে ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বলেন, তোমার যা ইচ্ছা; তবে আরো বৃদ্ধি করলে তা-ও ভালো। আমি বললাম, দুই-তৃতীয়াংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা; তবে আরো বাড়ালে তা-ও ভালো। আমি বললাম, আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরূদ পাঠে লাগাব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)

৮. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নির্ভরযোগ্য আলেমের সঙ্গে অভিমত গ্রহণ করুন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।’

৯.রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)

চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।(বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)।আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

Cltd

পঠিত : ৯৯৭ বার

মন্তব্য: ০