Alapon

বিসিএস ক্যাডার হবো এবং দেশের সবচেয়ে বড় চোর হবো!


১.
করোনা ভাইরাস পৃথিবীকে একদম ওলট-পালট করে দিয়েছে। কিছুদিন আগে করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে জার্মানির অর্থমন্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক দূরত্ব এবং সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হওয়ায় তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। যদিও সেই পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট সাহেব গ্রহণ করেননি। করোনার কারণে এমন ব্যর্থতার গল্প বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেরই কমবেশি আছে। কিন্তু করোনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে চুরি ও হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে, তা বিশ্বের আর কোথাও ঘটেনি।

অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি মহাদয় পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনি কতটা আত্মসম্মান ও বিবেকের দ্বায় থেকে পদত্যাগ করেছেন, তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। কারণ, করোনা ভাইরাস নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের যে কেলেঙ্গারি ঘটেছে, তাতে ডিজি মহাদয়ের স্পষ্টত দায় রয়েছে। কিন্তু তা স্বত্বেও তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমানের হেন চেষ্টা নেই তিনি করেননি। কিন্তু শেষ রক্ষা হচ্ছে না দেখে তিনি পদত্যাগ করলেন। অনেকটা বাধ্য হয়েই পদত্যাগ করেছেন। অথচ এই ডিজি সাহেব কিন্তু একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন হওয়ার মানুষ হওয়ার কথা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরও যদি তারা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ না হয়ে, বড় গলাসম্পন্ন চোর হয়, তবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। নিশ্চয়ই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের মানুষ বানাতে পারছে না।
২.
কিছুদিন আগের কথা বলি। আমাদের গ্রামে একজন চোর চাল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। তাও আবার মাত্র কেজি দুয়েক চাল। সেই কেজি দুয়েক চাল চুরির অপরাধে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে যে পরিমাণ শাস্তি দিয়েছে, তা এক কথায় অমানবিক। অথচ সে বারবার বলার চেষ্টা করছিল, আমার ঘরে খাবার নাই! কাজ-কর্ম নাই। তাই বাধ্য হয়ে চাল চুলি করেছি।

অথচ আমরা সকলেই জানি, সরকার থেকে গরীবদের মাঝে চাল বিতরনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে চাল এসেছে। আর সেই চাল চেয়ারম্যান সাহেব নিজের আত্মিয়-স্বজনসহ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে। সরকার কতৃক সরবরাহকৃত চালের সিংহভাগই গেছে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পেটে, আর সিকি ভাগ পেয়েছে সাধারণ মানুষ। অথচ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের এই চাল চুরির ঘটনা জানার পরও আমাদের সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা চুপচাপ। তারা সব জেনেও যেন না জানার ভান করে থাকে। অথচ যে ব্যক্তি পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে চুরি করেছে, তারই শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এই ঘটনাও বলে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রকৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখায়নি।

৩.
এবার আসি ঢাকা শহরের কথা! বিগত কয়েকদিন ঢাকার রাজপথে নৌকা চলতে দেখলাম। কারণ, টানা কয়েকঘন্টার বৃষ্টিতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। অথচ এই জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫৩২ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু এতো টাকা খরচ করার পরও দেখা যাচ্ছে, জলাবদ্ধতা কমেনি; বরং আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে ৫৩২ কোটি টাকা সঠিকভাবে খরচ করা হয়নি।

ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। আর ওয়াসার বর্তমান এমডি বিগত ১১ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এই ১১ বছরে তিনি ওয়াসার পাশাপাশি ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন ভূমিকা পালন করেছেন তা জানা না গেলেও, ব্যক্তিগতভাবে তিন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। অথচ তিনিও দেশের কোনো সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছেন নিশ্চয়ই। একইসাথে বিসিএস ক্যাডারও ছিলেন। এই শিক্ষিত মানুষগুলোই বিসিএস ক্যাডার হয়ে যেন বড় বড় চুরি করবার লাইসেন্স গ্রহণ করছেন।

৪.
আমার পরিচিত এক বড় ভাই! জীবনে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। তার পড়াশোনার গল্প বলতে গেলে একটা সিনেমা হয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করার পর প্রথমবার বিসিএস দিয়েই তিনি ক্যাডার হয়ে গেলেন। আমি ভেবেছিলাম, তিনি এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন, তাই হয়তো নৈতিকতা কাকে বলে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন! কিন্তু সচিবালয়ে প্রবেশ করার পর থেকে তার ব্যাংক ব্যালেন্স এবং গ্রামের বাড়িতে জমিজমার পরিমাণ যেন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে তিনি কষ্ট-মষ্ট করে পড়াশোনা সম্পন্ন করে এমন বড় মাপের চোর হতে চেয়েছিলেন!

পরিশেষে বলব, ছোটবেলায় আব্বা বলতেন, পড়াশোনা না করলে মানুষের মত মানুষ হতে পারবে না। অনেক বড় হতে পারবে না। আজ এই সময়ে এসে মনে হয়, পড়াশোনা না করলেও মানুষ হতে পারব কিন্তু শিক্ষিত চোর হতে পারব না। সিচকে চোর হলেও হতে পারব কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি, ওয়াসার এমডি বা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমানের মত ভদ্র কিন্তু মস্তবড় চোর হতে পারব না।

বর্তমান সময়ে পড়াশোনা করার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যই হল, বড় হয়ে বিসিএস ক্যাডার হবো এবং দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষিত চোর হবো!

পঠিত : ৫৭৫ বার

মন্তব্য: ০