Alapon

আয়া সোফিয়া নিয়ে মাদখালিদের বিরুদ্ধাচরণের কারণ...?


৮৬ বছর পর আয়া সোফিয়ায় যখন আবারও আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে, আয়া সোফিয়ার মিম্বারে যখন আবারও আল্লাহর নামে খুতবা পাঠ করা হচ্ছে, তখন সারাবিশ্বের মুসলিমরা এখন বিজয় বলে উদযাপন করছে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি উল্লাস প্রকাশ করছে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিরা। তারা এই আনন্দকে ঈদের আনন্দের সাথে তুলনা করছে। কেউ কেউ বলছে, ঈদের আগেই আরও একটি ঈদের আনন্দ পেয়ে গেলাম।

সারাবিশ্বের মুসলিমরা যখন আনন্দ উৎযাপন করছে, ঠিক তখন সৌদি আরব এবং সৌদ পন্থিরা খ্রিষ্টানদের সুরে সুর মিলিয়ে দুঃখ প্রকাশ করছে। কতক সৌদ পন্থি আয়া সোফিয়াকে মসজিদকে পুনরায় রূপান্তর করাকে ইসলামের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক বলছে। এমনকি আমাদের বঙ্গদেশের কতিপয় সালাফি আল সৌদ পন্থি ব্যক্তিরাও আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের ব্যাপারটি সহজে মেনে নিতে পারছে না।

সৌদি আরব বা সৌদ পন্থিরা যে তুরস্কের এই উদ্যোগকে সহজে মেনে নিতে পারবে না, তা বুঝতে খুব বেশি বিজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। মূলত, তুরস্কের সাথে সৌদি আরবের শত্রুতা দির্ঘকালের। সেই অটোমান সাম্রাজ্য থেকেই এই শত্রুতা চলে আসছে। এক সময় আরব ভূখন্ড তথা মক্কা-মদীনা ছিল উসমানী সাম্রাজ্যের অধীন। মক্কা-মদীনার দায়িত্বে ছিলেন শরীফ ও তার পরিবার। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় খলিফা হওয়ার লোভে শরীফ অটোমান সাম্রাজ্যের সাথে প্রতারণা করে এবং অটোমান বিরোধী শিবিরের সাথে হাত মেলায়। ঠিক তখন থেকেই তুরস্কের সাথে সৌদি আরবের শত্রুতা চলে আসছে।

বর্তমান সময়েও আমরা দেখতে পাচ্ছি, কাতার ইস্যুতে সৌদি-ইমারত বলয়ের বিরুদ্ধে তুরস্কের শক্ত অবস্থান। লিবিয়াতে সৌদি-ইমারত জোটের বিরুদ্ধে তুরস্কের অবস্থান। মূলত সেই আদিকালের শত্রুতা এখন প্রাসঙ্গিকক্রমে জিইয়ে রয়েছে। যে তুরস্কের সাথে সৌদি আরবের এতো বৈরি সম্পর্ক, সেই সৌদি আরব যে আয়া সোফিয়ার পুনরায় মসজিদে রূপান্তরকে মেনে নিবে না, তা বলাই বাহুল্য!

তবে সৌদি আরব নিজেদের সমস্ত অন্যায়-অপকর্ম এবং রাজতন্ত্রকে ইসলামিকরণ করতে নতুন একটি পন্থার আবিষ্কার করে। আর সেই পন্থার নাম মাদখালিজম।

মাদখালি কারা?

আল মাদাখিলা বা মাদখালিরা হল এমন এক ফিরকা যারা নিজেদেরকে সালাফি বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। রাবী’ ইবনে হাদী আল-মাদখালি এর নামানুসারে এই নামকরণ হয়। এই ফিরকার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল, রাষ্ট্রের বিরোধীতা করা যাবে না। রাষ্ট্রের সরকার জুলুমবাজ হোক কিন্তু সে যদি মুসলিম হয়, তবে তার আনুগত্য করা ফরজ। আর যে বিরোধীতা করবে সে মূলত ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।

এই দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করে আল সৌদ পরিবারের রাজতন্ত্রকে স্থায়ী করার জন্য কোটি কোটি পেট্রো ডলার খরচ করে মাদখালি আলেম তৈরি করা হচ্ছে। যাদের একমাত্র কাজ হবে, সৌদি আরবের সমস্ত কাজকে ইসলামিকভাবে বৈধতা প্রদান করা এবং তা মুসলিমদের মাঝে প্রচার করা।

আমাদের দেশেও কিন্তু এই মাদখালি আলেম রয়েছে। আপনাদের ঠিক স্মরণ আছে কিনা, আমি জানি না। বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে যখন তুরস্কস্থ সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হল, তখন দেশিয় মাদখালি আলেমরা বলল, এটা এরদোয়ানের চক্রান্ত। এরদোয়ান সৌদি প্রিন্স সালমানকে ফাঁসানোর জন্য এই চক্রান্ত করেছে। কিন্তু এরপর যখন একের পর প্রমাণ প্রকাশ হতে লাগল এবং সৌদি প্রিন্স বিন সালমানের সম্পৃক্ততা প্রকাশ পেতে লাগল, সেই মাদখালি আলেমরাই বলল, জামাল খাশোগিকে হত্যা করা জায়েজ। জামাল খাশোগিকে হত্যা করে ইসলামকে একজন শত্রু মুক্ত করা হয়েছে। কারণ, জামাল খাশোগি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলে। আর যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলে, তারা যেমন রাষ্ট্রের শত্রু তেমনই ইসলামেরও শত্রু! এই হল মাদখালিদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ডগিরি!

আর এই মাদখালি হুজুররাই কিনা পোপের কান্নার সুরে সুর মিলিয়ে বলছে, আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তর করা ঠিক হয়নি। হায় আফসোস! মাদখালিদের কাছে ইসলামের চেয়ে তাদের প্রভু সৌদি আরবের রাজ পরিবারের ইচ্ছার গুরুত্ব অনেক বেশি!

পঠিত : ৮৪৬ বার

মন্তব্য: ০