Alapon

যা কিছু কালো তার সাথে ‘প্রথম আলো’...


প্রথম আলোর এই ব্যাপারটা আমার খুব মজা লাগে। প্রতি বছর কুরবানির আগে দু একটা ইমোশনাল ছবি তারা ভাইরাল করে। এই যেমন, এইবার ঈদে ভাইরাল করলো, অর্থি নামের একটা বাচ্চা মেয়ে একটা গরুর গলা জড়িয়ে ধরে আছে। মেয়েটার চোখ মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে গরুটার গাঢ় ঘন কালো চোখ দুটো জলে টলমল করছে।

ছবিটার ক্যাপশন কি দিয়েছিল, ঠিক এই মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা। গুগল করে যে খুঁজে বের করবো সেই আগ্রহও পাচ্ছিনা।
তবে ক্যাপশন যাই থাকুক, ছবিটার গল্পের মূল বক্তব্য হচ্ছে, বিক্রি করতে আসা গরুটার জন্য, বাবার সাথে হাটে আসা বাচ্চা মেয়ে অর্থির প্রচুর মায়া, প্রচুর আবেগ, ভালোবাসা। গরু নয় যেন নিজের ভাই/বন্ধুকেই বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।

এই সময়ে এসে মানে কুরবানির আগে আগে এই টাইপের ছবি ভাইরাল করার মানে কি? কেন করেছে তারা এই কাজ? প্রতি বছর কেন করে?

আমার ধারণা, এইখানে বড় ধরনের কোন একটা লক্ষ আছে। আছে দীর্ঘমেয়াদি কোন উদ্দেশ্য।

এই ছবি দেখার পর আমার পরিচিত এক ছোট ভাই, যে বেশ ভালোমতোই ধর্ম কর্ম পালন করে। সেই ছেলে আমাকে এসে বলল, 'ভাই, এই ছবি দেখে খুব মন খারাপ হয়েছে। বাচ্চা মেয়েটার জন্য খারাপ লাগতেছে। এভাবে একটা বাচ্চা মেয়ের কষ্টের ওপর দিয়ে ছুরি চালিয়ে দিলে, কুরবানি হবে?'

আমি ও'কে পাশে বসিয়ে কাধে হাত রাখলাম। বললাম, ' তুই শুধু মেয়েটার কান্নাই দেখছিস, ওর বাবার সুখটা দেখবি না? যে লোক এতোদিন ধরে একটা বাছুর গরু পেলে পুষে বড় করেছে কটা টাকার আশায়! এই টাকা দিয়ে হয়তো তাঁদের ঘরের চালা ঠিক করা হবে। হয়তো পানির কষ্ট দূর করতে বাড়িতে টিউবওয়েল বসানো হবে। হয়তো অর্থির পড়াশোনার জন্য টাকা ডিপোজিট করে রাখবে যেন মেয়েটা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।

এখন তুই বল, যদি গরুটা বিক্রি না করতো তাহলে এইসব কাজের জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে। আর গরু না বেঁচেও তো উপায় নেই। একটা গরু তো আর পেলে পুষে বড় করে বুড়ো বানিয়ে মেরে ফেলা যায় না, তাইনা? তুই খুব ভাল করেই জানিস, কুরবানির আগে গরুর দাম সবচেয়ে বেশী থাকে। তাই গরু বিক্রির জন্য এটাই পারফেক্ট সময়।'

আমার উত্তর শুনে সেই ছোট ভাই সন্তুষ্ট হলো। তাঁর চোখে মুখে অর্থির জন্য কষ্ট থাকলেও অর্থির বাবার মুখটা মনে পড়াতে একটা হাসি হাসি ভাব ফুটে উঠলো তার চেহারায়।

এই যে ধর্ম কর্ম পালন করা একটা ছেলের মনের ভেতর বিষন্নতা তৈরি হলো! করবানি নিয়ে একটা সন্দেহ তৈরি হলো! একটা উৎসবকে কষ্টের দাড়িপাল্লায় তুলে দেওয়া হলো! কেন?
আমার ধারণা এই কাজ টাই করতে চায় প্রথম আলোর মতো পত্রিকাগুলো।

নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের ডিলেমা তৈরি করে দিতে চায় তারা। বিষন্নতায় ঢেকে দিতে চায় আনন্দের ফল্গুধারা।

যদি আমার পরিচিত ছোট ভাইটি, আমার কাছে না এসে বিষন্নতা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো, কিংবা আমিই যদি ওকে বুঝিতে বলতে না পারতাম! তাহলে কী হতো?
খেয়াল করে দেখুন, আমার সেই ছোট ভাই কিন্তু সরাসরি কুরবানিকে বাতিল করে দেয়নি। ধর্মের ব্যাপারে তার আস্থা আছে। কিন্তু তার মধ্যে বিষন্নতা ঢুকে গিয়েছিল। একটা সন্দেহ ঢুকে গিয়েছিল। এবং এটাই চাইছিলো বদলে দাও বদলে যাও শ্লোগানধারী পত্রিকা'টি।

একটা গানের কথা মনে পড়ছে,
' যা দেখছো তা তা না...
যা জানছো তা জানা না...'

পঠিত : ৪৬৪ বার

মন্তব্য: ০