Alapon

একটি হিপোক্রেটিক স্লোগান এবং কিছু কথা...


ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট: সস্তা ও হিপোক্রেটিক এই স্লোগানে আমরা সবাই প্রভাবিত।

দুইটা মজার ঘটনা বলি।

এক. আমার এক কাজিন যখন জানলেন আমাদের আরেকটি সন্তান হয়েছে তখন বললেন গুড এনাফ (আর সন্তান নেয়ার দরকার নাই)! আমি জিজ্ঞাসা করলাম (যদিও জানতাম) আপনার সন্তান কয়টি? বললেন তিনটা। আমি বললাম দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় (পরিবার-সন্তান কেন্দ্রিক) স্লোগান হলো "ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট।" তো আপনার তো একটা বেশি। এক কাজ করুন - আপনাদের প্লানের ও প্রত্যাশার বাইরের অতিরিক্ত (তৃতীয়) সন্তানকে এমন একজন স্বচ্ছল মানুষকে দান করুন যার কোনো সন্তান নাই। হতে পারে আপনার এই সন্তান ভালোভাবে মানুষ হবে কিংবা আপনি বিনিময় চাইলে ১০/২০ লক্ষ টাকা দিবে। কাজিন রেগে গিয়ে বললেন, এইটা তুমি কি কইলা ? আমি বললাম কেন? এই সন্তানতো আপনাদের প্লানের বাইরের অতিরিক্ত! তিনি বললেন শুনো অতিরিক্ত হয়েছে কি হইছে - কেউ ২০ লক্ষ কেন এক কোটি কিংবা দুনিয়াটা দিয়ে দিলেও তো আমার এই সন্তানটা অন্য কাউকে দিবনা। আমি বললাম ও আচ্ছা! তাইলে আল্লাহর রহমতে আমার যদি আরেকটি সন্তান হয় তার মানি হলো আমার ওই সন্তানটি গোটা দুনিয়ার চেয়েও মূল্যবান। কাজিন বললেন ঠিক বলেছো। আসলে ওই সস্তা ও হিপোক্রেটিক স্লোগানে আমরা সবাই প্রভাবিত কিন্তু সন্তান যখন বড় হতে থাকে তখন মনে হয় এর চেয়ে মূল্যবান সম্পদ দুনিয়াতে আর কি আছে?

দুই. এক ইসলামিস্ট ভাইয়ের (ভাবীর) ভুলক্রমে/ প্লানের বাইরে তৃতীয় সন্তান কন্সিপ করায় তারা আত্মীয়-স্বজনকে এবং অন্যদেরকে জানাতে লজ্জা পাচ্ছে - অন্যরা কি বলবে! আমি জানার পরে তাকে আমার কাজিনের গল্প বললাম। আরো বললাম চুপিচুপি হউক। হওয়ার পরে কোনো ধনাঢ্য নি:সন্তান ব্যক্তিকে দান করে দিবেন। অভাব মনে করলে টাকার বিনিময় বাবদ ১০/২০ লক্ষ দেয়া হবে। ইসলামিস্ট ভাই অনেকটা রেগেই বললেন - এইটা কি বললেন? সন্তান যদি হয় এবং বেঁচে থাকে, টাকা কেন দুনিয়ার বিনিময় আমি আমার সন্তানকে কাউকে দিবনা। বললাম তাইলে যে সন্তানের মূল্য আপনি নির্ধারণ করেছেন দুনিয়ার মূল্যের চেয়েও বেশি সেই মূল্যবান সন্তানের কথা মাবাবা, আত্মীয়-স্বজনকে বলতে লজ্জা পাচ্ছেন! না চাইতেই দুনিয়ার চেয়েও যে মূল্যবান সম্পদ আপনি পাচ্ছেন তাকে অবজ্ঞা করার কি অর্থ আছে! সত্যিই কি আমরা কোনটা মূল্যবান সম্পদ এবং কোনটা আমাদের উভয়কালীন জীবনের উত্তম পাথেয় তার মূল্য দিচ্ছি? নাকি অবজ্ঞা -অবহেলায় আমাদের উত্তম পাথেয়গুলো দূরে ঠেলে দিচ্ছি? আরেকটি কথা। ধরুন আপনি এখন দুই লক্ষ টাকা বেতনের একটি চাকরির অফার পেলেন তাহলে আপনি কি করবেন? আনন্দে উদ্বেলিত হবেন এবং শুধু নিজের মধ্যেই সীমিত রাখবেননা বরং আত্মীয়স্বজন কেন ফেবুতে স্ট্যাটাস দিয়ে গোটা দুনিয়ার মানুষকে জানান দিবেন আপনার এই মূল্যবান আনন্দের খবরটি!! অথচ অভাব-অনটনের কথা বলে জীবনের মূল্যবান সৌন্দর্য ও পাথেয়কে অকালেই নিঃশেষ করে দিচ্ছি। আমি বলছিনা সবাই এরকম করছেন। আমাদের সমাজে এমনো অনেক আছেন যারা চাচ্ছেন তারা পাচ্ছেননা। আর যারা পাচ্ছেন তারা নিচ্ছেন না। যেকোনো ধর্মই পরিবার ও পরিবার ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম ধর্ম সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে পরিবার ও পরিবার ব্যবস্থাকে। কারন ফ্যামিলি হচ্ছে মানব সভ্যতার মৌলিক ইউনিট। উন্নত বিশ্বের (ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান)অনেক দেশই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ায় এবং জনসংখ্যার হার ড্রামাটিক্যালি কমে যাওয়ায় তাদেরকে অভিবাসনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে/হয়।

ধন - সম্পদ জীবনের সৈন্দর্যঃ
মানুষ ধনী হতে চায়না এমন মানুষ জগতে পাওয়া বড় দায়। আমরা ধনী হতে চাই শুধু অর্থ ও সম্পদের মাধ্যমে। মানব সভ্যতার অধিকাংশ সমাজে মানুষকে ধনী ও সম্মানিত মনে করা হয়েছে অর্থ-সম্পদ ও ছেলেমেয়ে আধিক্য দেখে। অবশ্য উত্তরাধুনিক যুগের কথা ভিন্ন। এখানে আবহমানকাল থেকে চলে আসা "হিউমান ক্যাপিটালের" সংজ্ঞাটাকেই পাল্টিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে সম্পদ ও ছেলে মেয়েদেরকে জীবনের সৈন্দর্য্য ও গর্বের প্রতীক বলা হয়েছে। তবে শর্ত হলো সৎ, ন্যায়নীতি ও উত্তম চরিত্রের মধ্যে হতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু তাঁয়ালা বলেনঃ ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।সূরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬.
[The property/possession/wealth and the sons/sons and daughters (are) the life, the present`s/worldly life`s decoration/beauty, and the remainders the correct/righteous deeds (are) better at your Lord (in) a reward/replacement , and better hope.]

তবে হ্যা সন্তান যেমন জীবনের সৈন্দর্য্য ঠিক সন্তানকে মানুষের মত মানুষ (নেককার, সৎ চরিত্রবান, সুনাগরিক) বানাতে না পারলে জীবনের জন্য পরীক্ষাও বটে। আর সন্তানকে নেককার ও সৎ চরিত্রবান বানাতে পারলে তারা হবে সদকায়ে জারিয়ার মত। যেমনটি বলেছেন রাসূলে করীম (সাsmile - ‘When a person dies, his deeds come to an end except for three: Sadaqah Jariyah (a continuous charity), or knowledge from which benefit is gained, or a righteous child who prays for him’. (Muslim).

আরেকটি মানবীয় ও রক্তের সম্পর্কের দিকটা ভাবুনঃ
অনেকেই পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে কম ছেলেমেয়ে বা দুইটা মাত্র ছেলে মেয়ে হলে সম্পর্কগুলো কখনো পরিপূর্ণ হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ জাতীয় পরিবারের ছেলেমেয়েগুলো আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠে। তবে ভিন্নতা নিশ্চয় আছে। চিন্তা করেন আমাদের অথবা আপনাদের বাপ-চাচা-ফুপু, খালা-মামাদের কথা। তাদের কতজন করে ভাইবোন ছিল! সেখানে সম্পর্কগুলোর ব্যাপ্তি কত সুন্দর ছিল। আমার কাজিন তথা চাচা, ফুফু, চাচাতো-ফুপাতো, খালাতো-মামাতো ভাই-বোনের আধিক্যে হৃদয়গুলো কি আনন্দে ভরে উঠে না? অবশই গর্ব বোধ হয়। হ্যা স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন আমাদের হাজার বছরের সৌহার্দ ও রক্তের সম্পর্ককে বিনাশ করে দিচ্ছে। এটাও আরেক বাস্তবতা!
[প্লিজ নোট: আপনি আমার মতের সাথে একমত নাও হতে পারেন। আপনার যুক্তিপূর্ন মতামতটি শেয়ার করুন এবং গালিগালাজ থেকে বিরত থাকুন।]

পঠিত : ৩৮৮ বার

মন্তব্য: ০