Alapon

আমার পর্দা করার অভিজ্ঞতা এবং কিছু কথা...


স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই রাস্তাঘাটে প্রচুর উত্ত্যক্ত হতাম। স্কুল ড্রেসের উপর শুধু হেজাব পড়তাম, কারন আব্বুর কাছে এটাকেই পর্দা মনে হতো। তাই বাধ্যতামূলক চুল ঢাকতে বলতো।

এদেশের সমাজব্যবস্থা তো মাশা-আল্লাহ, আমি ক্লাস সিক্সে পড়ার পরও আব্বুর কাছে একেক বার একেক কাহিনী বলতাম। দিনশেষে আমারই ভুল,আমারই দোষ। একদিন আব্বু খুব রেগে বললো মুখ পুড়িয়ে দিবে।
সেভেন থেকে নিকাব করে চলতে শুরু করলাম শুধুমাত্র সুন্দর নাকি কুৎসিত তাই ঢাকতে। কালক্রমে আবার তা বিলুপ্ত হয়ে যায়৷
যেহেতু জেনারেল পড়ুয়া ছিলাম,দ্বীনের বুঝ আসতে অনেক দেরী হয়ে যায়।

কিন্তু আমি ততদিনে ঠিক বুঝে যাই একটা মেয়ের সৌন্দর্য কিংবা সম্পূর্ণ পর্দার মূল জায়গাটা হলো মুখ৷ এটা খুলে কখনোই আমি নিজেকে আড়াল তথা পর্দায় রাখতে পারবো না।

এরপর যখন মেইন পর্দায় আসি,আমার প্রথম ও প্রধান স্টেপ থাকে নিকাব করা। এমনকি আমার অনার্সের একটা পরীক্ষাতেও আমি নিকাব খুলিনি।সেবার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম নিকাব খুলতে জোর করলেই হল থেকে বের হয়ে যাবো। কারণ একবার যে বান্দা চেহারা দেখবে , তাঁর আর আগামী সত্তর বছরেও আমার চেহারা দেখার প্রয়োজন পড়বেনা৷

নিজের পর্দাকে বাঁচিয়ে রাখতে মুখের সৌন্দর্যটাই মূখ্য। আমি জানি যে ভুল বিয়ের আগে করেছি তা বিয়ের পর অন্তত কোনোভাবেই নয়। তাই নিজ পরিবার কিংবা শ্বশুড়বাড়ির বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে গিয়েছি।

যতই উমুক যা ইচ্ছা তাই বলুক, তমুক যাই বলে খোঁটা দিক, আমাদের কাজ হলো হাত মুখ নাক চেপে হলেও পুরো শরীর আবৃত করে রাখা।
বিয়ের দিন মুরব্বি দুইজন ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলেও আমি নিকাব চেপে বসে থাকি। কেন? কেননা আমার রূপ কিংবা সৌন্দর্য কিরূপ তা বোঝার জন্য অপরের কাছে তাদের বর্ণনাই যথেষ্ট।

এটার কারণ ওটা নয় যে আমরা স্বাধীনতা পাচ্ছি না কিংবা পুরুষ সংযত করছে না নিজেকে। বরং মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমি ততটুকু দেহ শরীর খোলা রাখবো যতটুকু আগুনের স্পর্শ সহ্য করতে পারবো।

নিজেকে অন্যের সামনে ফুটিয়ে তোলা বা প্রদর্শন কিংবা অন্যকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করা বা আকর্ষণ -এ ধরণের মানসিকতা অনেকের মাঝেই থাকে। এটা শ্বায়তানের অন্যতম এক অস্ত্র।

যেসব বোন বলেন যে মুখ ঢাকা ফরয নয়, তারা সৎভাবে বলুন তো নিজের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কি আপনি কখনো চেহারাকে সাজাননি? বিয়ে বাড়িতে যেসব মেয়েরা সুন্দর করে সাজে তাদের পুরো শরীর ভারি গহনা,শাড়ী দিয়ে ঢাকা থাকে। সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বাকি থাকে মুখটা। সেই মুখটাকে তারা বিভিন্নভাবে, হরেকরকম আদলে সাজিয়ে উপস্থাপন করে। তাহলে??

জনৈক ব্যক্তি উবায়দা ইবন সুফইয়ান ইবন হারিছ হাযরামী রাযি. -এর কাছে এর নিয়ম জানতে চান। তিনি নিজের চাদরটি উঠিয়ে এমনভাবে ছড়িয়ে দেন যে, তাঁর মাথা ও কপাল ভ্রূ পর্যন্ত ঢেকে যায়। তারপর চাদরের কিছু অংশ মুখমণ্ডলের ওপর এমনভাবে রাখেন যে, গোটা মুখমণ্ডল ঢেকে যায়, কেবল একটি চোখ খোলা থাকে। (তাফসীরে কুরতুবী : ৪/২৩৪)

আবার অনেকেই বলেন হজ্জের সময় তাহলে মুখ খোলা রাখা হয় কেন?

তাদের বলি,আয়েশা রাযি. হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন।

মা আয়েশা রাঃ বলেন আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু ﷺ-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ (আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮)

আসমা বিনত আবী বাকর রাযি. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। (মুস্তাদরাক হাকেম : ১৬৬৪)

আমি এটা বলতে আসিনি যে পুরুষেরা পর্দা করবেনা,তাদের দৃষ্টি হেফাজত করবেনা। বরং এটা তাদের জন্য ফরয। সমস্ত পুরুষ ও যদি চোখ নামিয়ে চলে, আর কোনো নারীর দিকে না তাকায় তবুও আমরা সৌন্দর্য দেখিয়ে চলতে পারিনা। এটা আমাদের রুচিতে বাঁধবে। আমরা সুন্দর, আমাদেরকে সবচেয়ে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করা হয়েছে,আমরা দামি জিনিস আড়ালে রাখতেই স্বস্তিবোধ করি।

আমি এটাও বলতে আসিনি চেহারা ঢাকা ফরযই। যেহেতু ইখতেলাফ আছে, বিভিন্ন আলেমের মতামত ভিন্ন এসেছে। পক্ষে এবং বিপক্ষে বহু তর্কাতর্কি আছে।
শুধু এটুকু বলবো দুনিয়ার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিসটা বাছাই করতে ভুলিনা। তবে নিজের পর্দার ক্ষেত্রে, আখিরাতের স্বার্থে সর্বোত্তম নয় কেন??

কেন এমন অবহেলা!!

পঠিত : ৪৬১ বার

মন্তব্য: ০