Alapon

একটি বাংলাদেশ, তুমি ভীতু জনতার দেশ...


ল্যাপটপে কাজ করতে করতে ক্লাত বোধ করছিলাম। মনে হল, পুরনো দিনের একটা দেশাত্মবোধক গান গুনি। ইউটিউবে সাবিনা ইয়াসমিনের একটা গান দিলাম, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিষ্ময় তুমি আমার অহংকার’।

গানটার এতোটুকু শুনেই বন্ধ করে দিলাম। কারণ, গানটা বাস্তবতা বিবর্জিত একটি গান। বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থানুসারে গানটা হওয়া উচিত ছিল, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি ভীতু জনতার, সারা বিশ্বের বিষ্ময় তুমি আমার লজ্জা!’

আদৌত বাংলাদেশের জনগন যদি জাগ্রতই হতো তাহলে বাংলাদেশে এভাবে ভোটার বিহিণ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হতো না। ভোটার বিহিন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি অনির্বাচিত সরকার দিনের পর দিন দেশ এবং দেশের মানুষদের শোষন করে যাচ্ছে, আর বাঙালি চুপচাপ ঘরে বসে টিভির রিমোর্ট হাতে একের পর চ্যানেল চেঞ্জ করে যাচ্ছে। এটাই হল বাংলার জনতার ন্যাচার!

আর বিষ্ময়ে কথা বলছেন, আসলে এই দেশটা কীভাবে চলছে সেটাই একটা বড় বিষ্ময়। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে দেশের একটা বড় সংখ্যক মানুষের মাজা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। বহু মানুষ সর্বশান্ত হয়ে গেছে। হলমার্ক ও ডেসটিনির মত বহু হায়হায় কোম্পানি জনগণের টাকা মেরে খেয়েছে। অন্যদিকে দেশের প্রধান ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। আবার রাষ্ট্রিয় ব্যাংকের টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। এতো গেল অবৈধ উপায়ে ব্যাংক চুরি, এরপর শুরু হল সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংকগুলোর টাকা হরিলুট হচ্ছে। এরপরও দেশটা কীভাবে যে চলছে, তা সত্যিই বিষ্ময়ই বটে।

আর এসব নিয়ে কথা বললেই রাষ্ট্রীয় মদদে গুম করা হয়, অথবা অস্ত্র উদ্ধার কিংবা মাদক উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। প্রথমদিকে ক্রসফায়ার দেওয়া হত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের। এই যেমন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামি, ইসলামি ছাত্র শিবির এবং জাতীয়তাবাদি বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। যারা রাজনীতি করত না তারা এসব বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড নিয়ে কোনো কথাই বলত না। তারা ভাবত, আরে এসব রাজনৈতিক বিষয়! আমরা এসব নিয়ে খামোখা কথা বলে ঝামেলা বাড়াতে যাবো কেন?

রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের যখন ক্রসফায়ার করা শেষ হয়ে গেল, তখন পুলিশ বাহিনী নজর দিল ব্যবসায়িদের দিকে। কারণ, বিরোধী দল দমনের নামে তারা সারাদেশে গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়েছে। যার কারণে তারা টাকা পেতে পেতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু এখন তো সরকার বিরোধী আন্দোলন নেই তাই বিরোধী দলে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারও বন্ধ, গ্রেফতার ও ক্রসফায়ার বাণিজ্যও বন্ধ। তখন পুলিশেরা নজর দিল দেশের মধ্যম পর্যায়ের ব্যবসায়িদের দিকে।

সর্বশেষ পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গায়ে হাত তুলেছে। সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। সেনা প্রধান আজিজ সাহেব যদিও এই ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন। কিন্তু এটি মোটেও কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই ঘটনা ঘটানোর পোশ্রয় পুলিশ বাহিনী বহু আগেই পেয়েছে। যেদিন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আমান আজমীকে নিজ বাসস্থান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, মূলত সেদিনই পুলিশ বাহিনীকে অঘোষিত লাইসেন্স দেওয়া হয়, প্রয়োজন হলে তোমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও পেদাতে পারো! আজ সেই পেদানিতে শহীদ হল মেজর সিনহা!

এই সবকিছু মিলিয়ে যখন ভাবি তখন সত্যিই বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। এই দেশটি কীভাবে এখনো চলছে! এই দেশের মানুষ কীভাবে এখনো নিশ্চিন্তে ঘুমায়?

পঠিত : ৪২০ বার

মন্তব্য: ০