Alapon

পর্দার বিধান, মাহরাম ও গায়রে মাহরাম নিয়ে কিছু নিয়ে কিছু কথা...


যেখানে মহিলাদের জন্য ১৪ জন মাহরাম পুরুষ (কিছু ক্ষেত্রে ছাড় আছে) ব্যতীত অন্য কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই, এমনকি যেইসব মহিলারা গায়রে মাহরাম এর সামনে সৌন্দর্য বর্ণনা করে বেড়ায় সেইসব মহিলাদের সামনে পর্যন্ত দেখা দেওয়া উচিত নয়; সেখানে কিভাবে মহিলাদের মুখ খোলা রেখে বাইরে যাওয়া পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে?

কিছু ভাই / বোনেরা আলেম, মুফতি না হওয়া সত্ত্বেও নিজেরা মত (ফতোয়া) দিচ্ছেন মুখ খোলা রেখেও পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা হবে; আপনারা কি তাদের দায়ভার নিবেন যারা আপনাদের কথা শুনে নিকাব ছেড়ে মুখ খুলে বাইরে যাবে?

যেসব বোনেরা নতুন দ্বীনের পথে এসেছেন, পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করার চেষ্টা করছেন, কঠোর ভাবে গায়রে মাহরাম মেনে চলার চেষ্টা করছেন; তারা আপনাদের এই লেখা গুলোর জন্য যদি মুখ খুলে বাইরে যায়, যদি গায়রে মাহরাম আর না মেনে চলার চেষ্টা করেন তার দায়ভার কি আপনারা নিবেন?

পর্দা এমন ভাবে করা উচিত যাতে সৌন্দর্য প্রকাশিত না হয়। মানুষকে বাহ্যিক দিক থেকে সুন্দর বলার জন্য তো আগে মুখ দেখা হয়; তাই না? তাহলে এখন আপনারা বলুন মুখ খোলা রেখে কিভাবে সৌন্দর্য ঢাকা যেতে পারে? মুখ খোলা রেখে কিভাবে পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করা যেতে পারে?

আপনাদের কথা শুনে নিকাব ছেড়ে মুখ খুলে রাখার কারণে তাদের যতজন গায়রে মাহরাম দেখবে, যত রকম ফিতনার সৃষ্টি হবে সেই সব গুনাহের খুব কঠিন ভার কিন্তু আপনাদের নিতে হতে পারে।

যেখানে পর্দা করা ফরজ; সেখানে পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করতে মুখ ঢাকা জরুরী না এই কথা বলে ফরজ ইবাদত নিয়ে ফিতনা কেন ছড়াচ্ছেন?

আপনাদের উদ্দেশ্যেটা মহান আল্লাহ্'ই ভালো জানেন। শুধু বলবো ভালো করে কুরআন থেকে পর্দা বিষয়ক আয়াত গুলো তাফসীরসহ পড়ুন, হাদীস পড়ুন, বড় বড় ভালো আলেমদের ফতোয়া, লেখা পড়ুন, লেকচার শুনুন; তারপর আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করতে হলে মুখ ঢাকা অবশ্যই জরুরী ইংশাআল্লহ্।

মহান আল্লাহ্ বলেন:

وَقَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاہِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَاَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَاٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَاَطِعۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیُذۡہِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ وَیُطَہِّرَکُمۡ تَطۡہِیۡرًا ۚ

অর্থ: তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ্ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।

(সূরা আহযাব: ৩৩, আয়াত: ৩৩)


یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَبَنٰتِکَ وَنِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

অর্থ: হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(সূরা আহযাব: ৩৩, আয়াত: ৫৯)

আমি আমার এই লেখায় শুধু সূরা আহযাব এর ৫৯ নং আয়াতের তাফসীর উল্লেখ করছি (তাফসীর ইবনে কাসীর থেকে)। কিভাবে মেয়েদের পর্দা করা উচিত এবং কেন করা উচিত; আল্লাহ্ চাইলে এই তাফসীর থেকে সেই সম্পর্কে আপনারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন।

পর্দা করার আদেশ:

আল্লাহ্ তা'আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন: তুমি মুমিনা নারীদেরকে বলে দাও, বিশেষ করে তোমার স্ত্রীদেরকে ও কন্যাদেরকে, কারণ তারা সারা দুনিয়ার জন্য আদর্শ স্থানীয়া, উত্তম মর্যাদার অধিকারিণী, তারা যেন চাদর দিয়ে নিজেদের সারা দেহ আচ্ছাদিত করে নেয়, যাতে তাদের ও জাহিলিয়াত যুগের নারী ও দাসীদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়।

‘ যিলবাব ’ ঐ চাদরকে বলা হয় যা মহিলারা তাদের দো-পাট্টার উপর পরে থাকে। ইবন মাসউদ (রাঃ), উবাইদাহ (রাঃ), কাতাদাহ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), সাঈদ ইবনে যুবাইর (রহঃ), ইব্রাহীম নাখঈ (রহঃ), ‘আতা আল খুরসানী (রহঃ) এবং আরও অনেকে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

আল যাওহারী (রহঃ) বলেন: যিলবাব হল যা পোশাকের উপর আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা মুসলিম নারীদের নির্দেশ দিচ্ছেন: তারা যখন কোনো কাজে বাড়ীর বাইরে যাবে তখন যেন তাদের চাদর (যিলবাব) মুখের নিচে টেনে নিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। শুধুমাত্র একটি চোখ খোলা রাখবে। (তাবারী ২০/৩২৪)

মুহাম্মদ ইবন সীরিন (রহঃ) বলেন: আমি উবাইদাহ আস সালমানীকে (রহঃ)
یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡہِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِہِنَّ ؕ

তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয় - এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তার মাথা এবং মুখমন্ডল ঢেকে ফেলে শুধু বাম চোখ খোলা রেখে দেখিয়ে দিলেন। (তাবারী ২০/৩২৫)

অতঃপর এই আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:

ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ

এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। তারা যদি এরুপ করে তাহলে লোকেরা বুঝতে পারবে যে, তারা মুসলিম এবং স্বাধীন নারী, তারা দাসী নয় এবং পতিতা নয়।

মহান আল্লাহ্ বলেন:
وَکَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

জাহিলিয়াতের যুগে বেপর্দাভাবে চলার যে প্রচলন ছিল, তা পরিত্যাগ করে যখন তোমরা আল্লাহ্ তা'আলার এই নির্দেশের উপর আমলকারী হয়ে যাবে তখন আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের পূর্বের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিবেন। যেহেতু তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সূরা আহযাব এর ৫৯ নং আয়াতের এই তাফসীর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েদের মুখ ঢেকে রাখতে হবে। পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করতে মুখ ঢেকে রাখা যে উত্তম এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তারপরও আপনারা কুরআন থেকে পর্দা বিষয়ক সকল আয়াত গুলো তাফসীরসহ পড়বেন, হাদীস পড়বেন। নিজেরা বুঝতে না পারলে ভালো কোনো আলেম থেকে পর্দা বিষয়ক আয়াত গুলোর তাফসীর জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি; আপনারা দয়া করে ঢাকা মুখ খুলে চলার জন্য উৎসাহ দিয়ে বিভ্রান্তিমূলক লেখা ছড়াবেন না।

পর্দা করা আল্লাহ্'র হুকুম। পর্দা করা ফরজ। আল্লাহ্'র ক্ষমা পেতে, আল্লাহ্'র সন্তুষ্টি অর্জন করতে পর্দা আমাদের অবশ্যই অবশ্যই করতে হবে।

ভাই / বোনেরা ফরজ ইবাদতের মতো বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করার মতো সাহস কিভাবে দেখাচ্ছেন? সতর্ক থাকুন আপনাদের জন্য যেন অন্য কারো ফরজ ইবাদত পালনে ক্ষতি না হয়। অন্যকে ফরজ ইবাদত সঠিক ভাবে পালন করা থেকে সরিয়ে আনতে চাইলে তার পরিণাম কিন্তু খুব খারাপ হতে পারে।

মহান আল্লাহ্ মুসলিম মেয়েদের জন্য পর্দা করার মধ্যেই রেখেছেন এক পবিত্র মর্যাদা; পর্দা করার হুকুম দিয়ে তিনি আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন।

মহান আল্লাহ্'র হুকুম পালন করার জন্য, মহান আল্লাহ্'র ক্ষমা লাভের জন্য, মহান আল্লাহ্'র সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য আমরা পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করার চেষ্টা করে থাকি। আমরা মেয়েরা নিজেদের ঝিনুকে লুকানো মুক্তার থেকে বেশি মূল্যবান মনে করি; তাইতো মহান আল্লাহ্'র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদেরকে পর্দার আবরণে জড়িয়ে রাখতে ভালোবাসি।

আমাদের পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করার চেষ্টা হোক শুধু মাত্র মহান আল্লাহ্'র সন্তুষ্টির জন্য।

হে আল্লাহ্! আমাদের সকল ফিতনা থেকে হিফাযত করুন, সকল গুনাহ করা থেকে বিরত রাখুন এবং পরিপূর্ণ ভাবে সেই পর্দা করার তৌফিক দান করুন; যেই পর্দা করাতে আপনার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

আমিন ইয়া আল্লহ্।

|| আমরা মেয়েরা নিজেদের ঝিনুকে লুকানো মুক্তার থেকে বেশি মূল্যবান মনে করি; তাইতো মহান আল্লাহ্'র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেদেরকে পর্দার আবরণে জড়িয়ে রাখতে ভালোবাসি। ||

পঠিত : ৬৭১ বার

মন্তব্য: ০