Alapon

I Love Quran


পৃথিবীতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযি.। কুরাইশদের মধ্যে তিনি ইসলাম গ্রহণকারী চতুর্থ পুরুষ। হযরত ওমর রাযি-এর পর তৃতীয় খলিফায়ে রাশিদ (ন্যায়পরায়ণ শাসক) উসমান ইবনে আফফান রাযি. ছিলেন রাসুলুল্লাহ -এর দুই কন্যার জামাতা। তাই তাঁকে বলা হতো জিন্নুরাইন (দুই আলোর অধিকারী)। ইসলামের সূচনাকালে মুসলিম উম্মাহর সংকটময় দিনগুলোতে তিনি ইসলামের জন্য অঢেল সম্পদ ব্যয় করেন। তিনি ছিলেন কুরআনের প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী। তাঁর শাসনামলে কুরআন সংরক্ষণ করে তিনি উম্মতকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। হযরত উসমান রাযি. ছিলেন কুরআনের প্রেমিক। খুব বেশি কুরআন তিলাওয়াতে করতেন। তিলাওয়াতে অনেক সময় দিতেন।আমাদের সাথে কুরআনের সম্পর্ক খুবই কম। নিজের আগ্রহ বাড়াতে সালাফের সীরাত থেকে তাঁদের কুরআনের সাথে কেমন সম্পর্ক ছিল সে ঘটনাবলী পড়ছিলাম।

উসমান রাযি. সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মূল্যায়ন হলো, কুরআন তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছিল। হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযি. বলেছেন, ‘যদি আমাদের হৃদয় পবিত্র হয়, তবে আল্লাহর কালাম দ্বারা আমরা কখনো তৃপ্ত হব না।’ (আল-ফাতওয়া - ১১/১২২, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ৭/২২৫)

তিনি আরো বলেছেন, ‘এমন দিন আমি অপছন্দ করি, যেদিন আমি কোরআনের প্রতি দৃষ্টি দেব না।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া -৭/২২৫)

তিনি আরও বলেছেন , আমার নিকট পৃথিবীর তিনটি জিনিস খুব প্রিয়। পিপাস্বার্থকে তৃপ্তি দান , বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান ও তিলাওয়াতে কুরআন। (ইরশাদুল ইবাদ লিল ইসইতিদাদ লি ইয়াওমিল মাআদ - পৃষ্ঠা - ৮৮)

তিনি আরও বলেছেন, চারটি কাজ এমন যার বাহ্যিক রুপ হলো ফযীলতের তবে তার মুল্ভাবের প্রতি সাড়া দেওয়াটা আবশ্যক। সৎলোকের সঙ্গগ্রহণ করা ফযীলতের কাজ তবে তাঁদের অনুসরণ করাটা আবশ্যক। তিলাওয়াতে কুরআন ফযীলতের তবে তদনুযায়ী আমল করাটা আবশ্যক। কবর যিয়ারত করা ফযীলতের কাজ তবে কবরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রত্যেকের উপর আবশ্যক। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ফযীলতের কাজ তবে তার থেকে অসিয়ত গ্রহণ করা আবশ্যক। (ইরশাদুল ইবাদ লিল ইসইতিদাদ লি ইয়াওমিল মাআদ - পৃষ্ঠা - ৯০)

তিনি আরও বলেছেন, 'খারেজীরা যখন হযরত উসমান রা. কে হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন হযরত উসমান রা. এর স্ত্রী বলেন, তোমরা তাকে হত্যা করো বা ছেড়ে দাও, তিনি এক রাকাতে সম্পূর্ণ কুরআন খতম করতেন। আর সারা রাত নামায আদায় করতেন।'
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া - ৭/২২৫)

أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ (9)

আচ্ছা ! ওই ব্যক্তি , যে রাতের প্রহরগুলিতে সেজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদতে রত থাকে, আর সে আখেরাতকে ভয় করে এবং স্বীয় রবের রহমতের আশা রাখে - (সে কি উল্লেখিত কাফেরের সমান)। আপনি বলুন, যারা জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে আর যারা জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে না , উভয়ে কি সমান? উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন। (সূরা যুমার-৯)

ইবনে উমর রাযি এর মতে এ আয়াতটিতে হযরত উসমান ইবনে আফফান রাযি এর কথাই বলা হয়েছে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর- ২/২১৪)

অত্যাধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াতের কারণে ইন্তেকালের পূর্বেই তার মুসহাফটি ছিঁড়ে গিয়েছিল। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া - ৭/২২৫)

তার বক্ষ যেন কখনোই কুরআনের মুসহাফ থেকে পৃথক হতে চাইত না। তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন , নিশ্চয় কুরআন বরকতময় এবং যিনি তা নিয়ে এসেছেন তিনিও বরকতময়। (আল বায়ানু ওয়াত তিবইয়ান - ৩/১৭৭)

আল্লাহ আমাদের জীবনেও কুরআনের প্রেম দান করুন। কুরআন নিয়ে সময় কাটানোর তৌফিক দান করুন। কুরআন তিলাওয়াত করুন। কুরআন নিয়ে ভাবুন।

পঠিত : ১১০৬ বার

মন্তব্য: ০