Alapon

ছেলের সরকারী চাকুরী ও ঈমাম আহমেদ ইবনে হাম্বলের মর্মপীড়া...



ঈমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল আশমায়বানী (রহ) ইসলামী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। সাহাবী ও তাবেঈনের পরে যে সমস্ত জগৎবিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিতের কাছে সারা বিশ্বের মুসলমানেরা ঋণী, তাদের অন্যতম একজন হচ্ছেন ঈমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল রহ (৭৮০-৮৫৫)। তিনি একাধারে হাদিসের সংকলক, ফকিহ ও বিশ্লেষক। তার হাতে গড়া অগণিত ছাত্র সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিলেন। এসব ছাত্ররা ওস্তাদের নিপুণ ও ব্যাখামূলক মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, পরবর্তীতে এটাই হাম্বলী মাজহাব হিসেবে সারা দুনিয়ায় স্বীকৃতি লাভ করে। সরকারী কোন অনুদান গ্রহণ না করার ব্যাপারে তিনি খুবই সতর্ক ছিলেন। তার জীবন নির্লোভ হওয়াটাই সরকারের কাছে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ছিল। ফলে বৃদ্ধ বয়সেই তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে, নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে এবং এটার ধকল সয়ে দুনিয়া ত্যাগ করতে হয়েছে! তার জীবনী থেকে ছোট্ট একটি ঘটনা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো,

একবার ইমাম সাহেব তিনদিন পর্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলেন। ঘরে কোন খাবার ছিল না। ফলে কোন এক প্রতিবেশীর নিকট থেকে কিছু আটা ধার করে আনলেন। অত্যন্ত ক্ষুধার্ত ছিলেন বিধায় তার স্ত্রী তাড়াতাড়ি রুটি তৈরি করে আনলেন।

এত সংক্ষিপ্ত সময়ে রুটি তৈরি হওয়ায় ইমাম সাহেব আশ্চর্য হলেন! তিনি স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, এত তাড়াতাড়ি কিভাবে রুটি তৈরি হল?

স্ত্রী জবাবে বললেন, আপনাকে অত্যন্ত ক্ষুধার্ত দেখে পাশের প্রতিবেশী সালেহের জ্বলন্ত তন্দুর হতে রুটি পাকিয়ে নিয়ে এসেছি! উল্লেখ্য, সালেহ হলেন ইমাম সাহেবের বড় পুত্র!

এতে ইমাম সাহেব খুবই মর্মাহত হলেন, তিনি স্ত্রী কে বললেন, "রুটিগুলো আমার সম্মুখ হতে নিয়ে যাও। আর আমার বাড়ী হতে আমার পুত্র সালেহের বাড়ীতে যাওয়ার যে দরজাটি রয়েছে, সেটাও আজ হতে বন্ধ করে দাও"!

উল্লেখ্য, সালেহ কোন অবাধ্য পুত্র ছিলনা। বরং সেও পরবর্তীতে একজন শ্রেষ্ঠ ইসলামী পণ্ডিত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কিন্তু কি তাঁর অপরাধ! মূলত জীবনের চাকা চালাবার জন্য ১০ম আব্বাসীয় খলিফা জাফর ইবনে মুহাম্মদ (৮২২-৮৬১) ওরফে "মুতাওয়াক্কিল আলা আল্লাহ" এর অধীনে তিনি সরকারী চাকুরী নিয়েছিলেন। তাই ইমাম সাহেব পুত্রের কাজকে, অন্যায়কারীকে সহায়তা দান কারী হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন!

বর্তমান যুগের শাসকের চেয়ে মুতাওয়াক্কিল বহুগুণ উত্তম শাসক ছিলেন। তিনি নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন, মসজিদে খোতবা দিতেন। অধিকন্তু তিনি ঈমামকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। বহুবার সরকারী পক্ষ হতে উপঢৌকন পাঠিয়েছেন কিন্তু ইমাম সাহেব অসচ্ছল থাকার পরও এসব উপহার বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কেননা তার সোজা কথা ছিল, খলিফা মুতাওয়াক্কিলের অর্জিত এসব সম্পদ না হক পন্থায় আয় করা হয়েছে না সঠিক পন্থায় ব্যয় করা হয়। তাই এসব ছুঁয়ে তিনি আল্লাহর পরীক্ষার মুখে পড়তে চায় নি।

ধর্মীয় মতামতের আশায় শেষ বয়সে একদা মুতাওয়াক্কিল ঈমামকে বাগদাদে ঢেকে নিয়েছিলেন। এতে মুতাওয়াক্কিল খুবই খুশী হয়ে ঈমাম হাম্বল (রহ) কে জোড় করে জাঁকঝমক পূর্ণ একটি পোশাক পরিয়ে দেন। এতে তিনি অসহায় বোধ করেন, "কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, সারাজীবন এদের থেকেই দূরে ছিলাম, আর মৃত্যুর সময় এ পরীক্ষায় পতিত হলাম"। অবশেষে এসব ছুড়ে ফেলেছিলেন।

ইমাম সাহেবের পুত্র আব্দুল্লাহ বলেন "ইমাম সাহেব ক্রমাগত পনের-যোলদিন খলীফার সাহচর্যে ছিলেন কিন্তু একদিনও খলীফার খাদ্য হতে কিছুই গ্রহণ করেন নাই। তিনি খলিফার অলক্ষ্যে, নিজের পক্ষ থেকে আনিত ছাতু খেয়েই দিন কাটিয়েছিলেন..."

- Tipu

পঠিত : ৬১০ বার

মন্তব্য: ০