Alapon

মুজিব খুনের পর তার মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?



মুজিব খুনের পর তার রাজনৈতিক বিরোধীরা উল্লাস করেছিল। তারা সারা দেশে আনন্দ মিছিল বের করেছিল। এমন একটি একটি ঘটনা ঘটবে তারা কল্পনাও করতে পারেনি। তবে এমন একটি ঘটনা ঘটুক এটা তারা কামনা করতো। তার প্রতিফল দেশ দেখেছে।

সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া ছিল এমন, আচ্ছা হইসে! একটা প্রেসিডেন্ট মরছে। আরেকটা আসবে। এইতো। এটা নিয়ে এতো মাতামাতি করার দরকার কী?
মুজিবের পোষা মিডিয়ার ভূমিকা তো কালকেই উল্লেখ করলাম। আজকে দেখি তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের কেমন ভূমিকা ছিল?

বলা চলে মুজিবের মন্ত্রীরাই মুজিব থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত। কিন্তু এই গোষ্ঠীই অত্যন্ত হাস্যোজ্জল মুখে আবার মুশতাকের মন্ত্রীসভায় অংশগ্রহণ করে। আর মুশতাক তো সেই ব্যক্তি ১৯৭৩ সালে যার নির্বাচনী এলাকার ব্যালট বাক্স সব হেলিকপ্টারে তুলে নিয়ে এসে মুজিব নিজেই মুশতাককে জয়ী ঘোষণা করেন।

একজন মানুষ যখন স্বৈরাচার হয়ে যায় তখন তার মধ্যে ন্যায় অন্যায় বোধ থাকে না। যারা তার তোষামোদ করে তাদেরই কেবল ভালো হিসেবে দেখে। মুজিবের হয়েছে এই দশা। মুজিবের লাশের দাফন তখনো হয় নি। অথচ মুজিবের একেবারে কাছের লোকেরাই আরেকটি মন্ত্রীসভা গঠন করেছে। সমস্ত করাপ্ট লোক ছিল তার পাশে কারণ তার করাপ্ট কাজগুলো এই লোকগুলোই বাস্তবায়ন করতো।

এই লোকগুলোর মধ্যে মোশতাকের মন্ত্রীসভাতে মুজিবসহ যোগ দিতে পারে নাই ৭ জন। মুজিব বাদ দিলে ৬ জন, এর মধ্যে একজন সেরনিয়াবাত মুজিবের সাথে খুন হন। বাকী রইলো ৫ জন। এর মধ্যে একজন কামাল হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বিদেশে ছিলেন। তিনি দেশে থাকলে যে মন্ত্রীসভায় এটেইন করতো তা একপ্রকার বুঝাই যায়।

লন্ডনে থাকা আওয়ামীপন্থী কিছু মানুষ কামাল হোসেনকে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে বললে তিনি তা সরাসরি অস্বীকার করেন। বাকী রইলো ৪ জন, তারা হলো
সৈয়দ নজরুল ইসলাম- উপরাষ্ট্রপতি
মো. মনসুর আলী- প্রধানমন্ত্রী
এএইচ এম কামরুজ্জামান- শিল্প মন্ত্রী
আব্দুস সামাদ আজাদ- কৃষি মন্ত্রী

এরা মন্ত্রীসভায় যোগ দেয়নি এটা সরাসরি ঠিক হবে না। তবে তাদের কাছে মন্ত্রী হবার প্রস্তাব যায় নি। মুজিবের হত্যাকারীরা এই চারজনসহ তাজউদ্দিনকে পছন্দ করতেন না। তারা হয়তো এই কজনকে মুজিবের আপন চ্যালা মনে করতেন। তাজউদ্দিনসহ এই চারজন এরেস্ট হন এবং আজাদ বাদে বাকীরা খুন হন। তাজউদ্দিনকে আগেই মুজিব মন্ত্রীসভা থেকে বের করে দিয়েছে কারণ সে যতটা মুজিবের মন্ত্রী তার চাইতে বেশি ইন্দিরার প্রতিনিধি।

এবার আসুন তাদের নাম জেনে নিই যারা একইসাথে মুজিবের ও মোশতাকের মন্ত্রীসভাতে ছিলেন। এমন সংখ্যা ২৩ জন।
১. খন্দকার মোশতাক আহমেদ- রাষ্ট্রপতি
২. মোহাম্মদ উল্লাহ- উপরাষ্ট্রপতি
৩. অধ্যাপক ইউসুফ আলী- মন্ত্রী, পরিকল্পনা
৪. শ্রী ফণী ভূষণ মজুমদার- মন্ত্রী, এলজিআরডি
৫. মো. সোহরাব হোসেন- মন্ত্রী, পূর্ত, গৃহনির্মাণ
৬. আব্দুল মান্নান- স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী
৭. শ্রী মনোরঞ্জন ধর- আইন, বিচার, সংসদ মন্ত্রী
৮. আব্দুল মোমিন তালুকদার- মন্ত্রী, কৃষি দফতর, খাদ্য
৯. আসাদুজ্জামান খান- মন্ত্রী, বন্দর ও জাহাজ চলাচল
১০. ড. আজিজুর রহমান মল্লিক- অর্থমন্ত্রী
১১. ড. মুজাফফর আহমদ চৌধুরী- শিক্ষামন্ত্রী
১২. বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী- মন্ত্রী, পররাষ্ট্র দফতর
১৩. শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন- প্রতিমন্ত্রী, বিমান ও পর্যটন
১৪. তাহের উদ্দিন ঠাকুর- প্রতিমন্ত্রী, তথ্য, বেতার, শ্রম
১৫. কে এম ওবায়দুর রহমান— প্রতিমন্ত্রী, ডাক ও তার
১৬. নুরুল ইসলাম মঞ্জুর- প্রতিমন্ত্রী, রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়
১৭. দেওয়ান ফরিদ গাজী- প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য, খনিজ সম্পদ
১৮. অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী- প্রতিমন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রণালয়
১৯. রিয়াজ উদ্দিন আহমদ- প্রতিমন্ত্রী, বন, মৎস্য ও পশুপালন
২০. মোসলেম উদ্দিন খান- প্রতিমন্ত্রী, পাট মন্ত্রণালয়
২১. মোমেন উদ্দিন আহমেদ- প্রতিমন্ত্রী, বন্যা, পানি বিদ্যুত
২২. ডা. ক্ষিতিশ চন্দ্র মন্ডল- প্রতিমন্ত্রী, সাহায্য ও পুনর্বাসন
২৩. সৈয়দ আলতাফ হোসেন- প্রতিমন্ত্রী, সড়ক যোগাযোগ।

এর বাইরে মুজিব সরকারের ডেপুটি স্পিকার আব্দুল মালেককে স্পিকার মনোনীত করেন খন্দকার মোশতাক আর কথিত মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীকে মন্ত্রীর মর্যাদায় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেন মোশতাক।

শেখ মুজিবের হত্যাকারী সে নিজেই। সেই এই ঘটনার যুগপৎ পরিকল্পনাকারী ও শিকার। যে ত্রাস ও সন্ত্রাসের রাজত্ব সে কায়েম করেছিলো তার জন্য এই পরিণতি যথার্থ ছিলো।

হিসাব করে দেখুন যারা হত্যাকারী তারা কেউ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। তারা আবারো আওয়ামীলীগকেই ক্ষমতায় বসিয়েছে। শুধু ১০-১২ জন নেতাকে টার্গেট করে সরিয়ে দিয়েছে। আর সন্ত্রাসী মুজিবের প্রতি এতোটাই ক্ষুব্দ ছিল যে তার পুরো পরিবারকে উড়িয়ে দিয়েছে। একটা লোক কতটুকু অযোগ্য হলে এতোগুলা গাদ্দার নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করে!

আরো ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো এই খুনী চক্রকে সাথে রেখেই রাজনীতি করেছেন মুজিব খুনের সবচেয়ে বেশি বেনিফিশিয়ারি শেখ হাসিনা।

পঠিত : ৪১৬ বার

মন্তব্য: ০