Alapon

সফলতার চাবিকাঠি...


হাঁটতে হাঁটতে জীবনের অনেক গুলো পথ পাড়ি দিয়ে দিয়েছি। বয়স টাও কম হলো না। আজ আমার জন্মদিন পালিত হলো অফিসে। কিন্তু দিন টা এখন আর আগের মতোন আমার ভাল লাগেনা৷ কেন জানি অজান্তেই মনে হয় আমার দুনিয়ায় থাকার মেয়াদ কমে আসছে ক্রমশই বয়স বাড়ার সাথে সাথে। আমি কতই না ব্যস্ত দুনিয়ার জীবনে। একটার পর আরেকটা কাজের প্রেশার। বেশ কয়েকটি জিনিস অর্জনের নেশায় আমার দিন কেটে যায়। দিন শেষে ক্লান্ত আমার দু চোখ ঘুমে তলিয়ে আসে। চোখ বন্ধ করতেই আজ অজান্তেই মন প্রশ্ন করে বসে, " এই যুদ্ধের শেষ কোথায়?"

আমিও কখনো অদ্ভুত মনে ভাবতে থাকি আসলেই তো। এই ব্যস্ততা কবে শেষ হবে! আমার চাওয়া পাওয়ার হিসাব দিন দিন বাড়তেই থাকে কেন! চাহিদা মেটাতে আমার পরিশ্রম ক্রমশই বেড়ে যায়। বন্ধুদের কাউকে দেখে দেখে আরও প্রতিপত্তির নেশায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমি। দুনিয়ার হাজারো জিনিসের পিছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত মনে আবারও দিন শেষে ঘুমিয়ে পড়ি। ইদানীং ঘুম আসেনা তাড়াতাড়ি। প্রশ্ন আসে মনে, "এই ঘুম কি আমার শেষ ঘুম হতে পারে! "

মন বড্ড উতলা হয়ে যায় এসব মনে পড়লে। জীবনের উন্নতির জন্য কম ছুটছি না আমি। কিন্তু এতকিছুর পরেও জীবন শূন্য কেন লাগে! মাঝেমাঝে ভাবি এই সংগ্রাম কবে শেষ হবে!

আমার ছুটে চলা দুনিয়ায় হাজারো জিনিস পাবার আশায়। অর্থ আর প্রতিপত্তির পিছনে ছুটতে ছুটতে কখনো বন্ধু উমারের কথা চোখের সামনে ভাসে। কত সাবলীল আর সহজ সরল জীবনে এত হাসিখুশি সে। কোনো প্রতিযোগিতা দেখিনা ওর মধ্যে। এত অল্পতেই সন্তুষ্ট!! কিভাবে এত সাধারণ জীবনযাপন ওকে এত সুখ এনে দিতে পারে!
আমার এত এত পরিশ্রম ও সুখের দেখা পায় না কেন!
উমারের সাথে দেখা করতে ব্যাকুল হয়ে পড়লো এ মন। পরের দিন রাস্তায় বের হতেই সামনে উমার। কি অদ্ভুত! আমি কালকেই ওর কথা ভাবছিলাম। আমি কথা বলার আগেই শুরুতে সালাম দিয়ে কথা শুরু করলো৷ জিজ্ঞেস করলো কেমন আছিস?
উত্তরে আমি, "হ্যা ভাল আছি রে। তোর কি খবর? কই গেছিলি?"
উমার বললো, " আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভাল আছি। নামায পড়ে আসলাম। মা কে নিয়ে হাসপাতালে যাব এখন। দোয়া করিস রে। মা একটু অসুস্থ। বিদায় নিয়ে আসতে আসতে রাস্তায় ভাবলাম, "ভাল থাকতে আল্লাহর রহমত ই কি তবে জরুরি?"
ভাবুক মনে বাসায় পৌছে একটু শুয়ে রইলাম। জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে মন বড়ই ভাবাচ্ছে আজ। দুনিয়ায় আমায় কি জন্য পাঠিয়েছেন! ভাবতে ভাবতে ঘুমে মগ্ন হয়ে আসছে।

পরের দিন শুনলাম উমার ওর মায়ের সাথে হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করেছে। অফিসে আজ না গিয়ে ওর জানাজায় গেলাম। জানাজার খাট টা ধরতে চোখ থেকে পানি পড়ছে। "আমাকেও কি একদিন এভাবেই সবাই সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে নিবে!!"

আসলেই শান্তি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। শান্তি হালাল জীবনযাপনেই সম্ভব। আল্লাহর পথ ব্যতীত শান্তির দ্বার খুঁজতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভাল থাকতে আসলেই আল্লাহর রহমত, দয়ার প্রয়োজন। আর দুনিয়ায় থাকতে আখিরাতের চিন্তা থাকাও জরুরি। সে ধন সম্পদ কি আদৌ কোনো কাজে আসবে যা আল্লাহর পথে ব্যয়িত হবেনা!
হঠাৎ দুনিয়া নামক ট্রেনে উঠে গন্তব্যের রাস্তা ভুলে গেলে তো চলবে না। তার চেয়ে সফল কে হতে পারে যে রাব্বুল আলামীনের কাছে সফলতার চাবি নিয়ে মৃত্যুবরণ করে!! সফলতার চাবি তো রবের পক্ষ হতে সন্তোষজনক মৃত্যু!

সূরা ফাজরে আছে, "হে প্রশান্ত মন, তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।"

cltd

পঠিত : ৪৬৮ বার

মন্তব্য: ০