Alapon

নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত...


সে অনেকদিন আগের কথা। ইমাম ইবনে হাম্বল রহ. একবার হাদীসের খোঁজে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি প্রায়ই হাদীসের খোঁজে এভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন। তখন ছিল শীতকাল। প্রচন্ড শীত। ইমাম ইবনে হাম্বল এশার নামাজ পড়ার জন্য এক মসজিদে থামলেন। নামাজ শেষে মসজিদেই জুবুধুবু হয়ে বসে রইলেন। ভাবলেন, এই শীতে আর বাহিরে না যাই এখানে রাতটা কোনোরকম পার করে বাদ ফজর বেরিয়ে পড়বেন।

কিন্তু বাধ সাধল মসজিদের খাদেম। খাদেম সাহেব এসে বলল, এখানে থাকা হবে না! আপনি অন্য কোথাও জায়গা দেখুন অথবা সরাইখানায় যান। কিন্তু সরাইখানায় রাত কাটানোর মত যথেষ্ট অর্থ ইমামের কাছে ছিল না। তারপরও তিনি খাদেমের কথায় মসজিদ থেকে বের হয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে লাগলেন।

খুঁজতে খুঁজতে তিনি এক বাড়িতে গেলেন এবং তাদের কাছে রাতে থাকার জন্য আশ্রয় চাইলেন। কিন্তু তারা তাঁকে আশ্রয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করল। এরপর ইমাম ইবনে হাম্বল আশ্রয় খুঁজতে খুঁজতে লাগলেন। খুঁজতে খুঁজতে দেখলেন, বাজারে একটি ছোট্ট দোকানে রুটি ভাজা হচ্ছে। ইমাম সেদিকেই পথ ধরলেন। কাছাকাছি গিয়ে দেখলেন, হোটেলের মালিক রুটি বানাচ্ছে। তিনি হোটেলের মালিককে বললেন, আমি কি আপনার উনুনের পাশে আজকের রাতটা কাটাতে পারি? হোটেল মালিক আন্তরিকতার সাথে বলল, অবশ্যই পারেন! একটা পরিষ্কার জায়গা দেখে ইমামকে সেখানে বসতে দিলেন।

ইমাম সেখানে বসে দেখলেন, সেই হোটেলের মালিক রুটির খামির বানানোর সময় বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’, রুটি বেলার পরে বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ রুটি উনুনে দেওয়ার পরে বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’, রুটি বিক্রি করার পর বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ এবং টাকা নেওয়ার সময়ও বলে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। ইমাম ইবনে হাম্বল দির্ঘক্ষণ দৃশ্য দেখার পর সেই হোটেল মালিককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার এই ইস্তাগফারের হাকীকত কী?’
সেই হোটেল মালিক বললেন, ‘এর হাকীকত ব্যাপক। কেবল এই ইস্তাগফার পাঠের কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমি যত দুআ করেছি সবই কবুল হয়েছে; কেবল একটি দুআ ছাড়া।’
ইমাম কৌতূহলি হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সেই একটি দুআ কী?’

হোটেল মালিক বললেন, ‘আমি শুনেছি, বর্তমান সময়ে ইসলামের সবচেয়ে বড় মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে হাম্বল। আমার খুব ইচ্ছে ইমামের সাথে দেখা করার। তাই আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, আল্লাহ যেন জীবনে একবার হলেও আমাকে ইমাম ইবনে হাম্বলের সাথে দেখা করিয়ে দেন। দেখা হলে আমি ইমামের হাতে ও চুম্বন করব।’
তার কথা শুনে ইমাম ইবনে হাম্বল চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘হে যুবক! মহান আল্লাহ তোমার কোনো দুআই অপূর্ণ রাখেননি। তোমার সর্বশেষ দুআটাও মহান আল্লাহ কবুল করেছেন। আমি ইবনে হাম্বল।’

ইমামের এই কথা শুনে সেই হোটেল মালিক আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেললেন এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করলেন।

সুবহানআল্লাহ! ইস্তিগফার, কত ছোট্ট আমল! অথচ এই ছোট্ট আমলের পুরষ্কার কত বিশাল। আলহামদুলিল্লাহ।

পঠিত : ৪১৬ বার

মন্তব্য: ০