Alapon

ছেলেরা কিভাবে মেয়েদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে...


“এবং তিনি জানেন যা তোমরা ম্যানুফ্যাকচার করো”। আল্লাহ এখানে ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলছে যে তারা একটা মেয়েকে যে কৌশলে, যে প্ল্যান করে নিজেদের দিকে প্রেমে, জেনায় বা মেলামেশার দিকে টানে। এই “ম্যানুফ্যাকচার” মানে কি? ম্যানুফ্যাকচার মানে উৎপাদন। উৎপাদনে কি থাকে? একটা সুনির্দিষ্ট প্ল্যান! হ্যা, একটা ছেলে যেকোন মেয়েকে কৌশলে নিজের আয়ত্বে আনতে প্ল্যান অনুযায়ীই আগাতে থাকে।

যেমন ধরূন একটা গাড়ি তৈরি করতে কতগুলো পার্টস লাগবে, কতটুকু এবং কি কি রঙ লাগবে, কোন অংশ আগে জোড়া দিতে হবে, কোন অংশ শক্ত হতে হবে, কোন অংশ নরম হবে, কোনটিকে কত বছরের টেকসই হিসেবে দিতে হবে, গাড়িটি তৈরি করতে কত সময় লাগবে, মার্কেটিং কেমন করবো, বিক্রি করবো কোথায়-কীভাবে ইত্যাদি সবই প্ল্যান করা থাকে পূর্ব থেকেই। এই প্ল্যান আশাপূর্ণ ফল লাভের জন্য খুবই কার্যকরী আর বিপরীতে প্ল্যান না থাকলে লস হবে। এভাবে একটা ছেলে যখন মেয়েকে নিয়ে গেইমের মতো প্ল্যান করে, সেটাও আল্লাহ জানে।

প্রথমে ছেলেটা মেয়ের দিকে তাকায়, এরপর পিটপিট করে-মিটমিট করে তাকানো, তারপর একটু কৌশলে জিজ্ঞেস করা তোমার ফেইসবুকে একাউন্ট আছে? কি নামে? এভাবে কৌশলে একটু কাছে এসে বলে আমি আসলে তোমাকে ইসলাম বিষয়ে আরো হেল্প করতে চাই, ঐ জায়গায় কিন্তু ইসলামী আলোচনা হয়, চলো না যাই একদিন, ঐ ফেইসবুক গ্রুপে অনেক সুন্দর আলোচনা হয়, ঐখানে জয়েন করাই? আর মেয়েটিও এভাবে বলে হ্যা, অবশ্যই, এই যে আমার ফেইসবুক একাউন্ট, আমাকে ভালো ভালো গ্রুপে এড করে দিবেন প্লিজ। এভাবে ছেলের সাথেও এড হওয়া শুরু হলো, সাথে বিভিন্ন গ্রুপেও।

এভাবে ছেলেটা সাধারণ কথাবার্তা চালাতে থাকে মেয়েটির সাথে –তুমি কি হোমওয়ার্ক করেছো? তোমার এসাইনমেন্টের টপিক যেনো কি ছিলো? এসবই ছেলেটির প্ল্যানের অংশ, দীর্ঘ প্ল্যানের অংশ – এভাবে ছেলেটি মেয়েটিকে কাছে পেতে চাচ্ছে, একান্তে, একার করে, প্রেমের দিকে-জেনার দিকে-আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে-শয়তানের সাথী হতে, জাহান্নামী হতে।

ছেলেটি জিজ্ঞেস করে, তোমার এসাইনমেন্ট কি শেষ হয়েছে? তুমি তো এক্সপার্ট, আমাকে একটু পরামর্শ দাও তো কিভাবে ভালো করা যায়। ক্লাসে একশত ছাত্র থাকতে একটি মেয়ের কাছে কেন সে জিজ্ঞেস করছে? প্ল্যান, পুরোটাই ম্যানুফ্যাকচারিং এর প্ল্যান। আজকে সে একটু কথা বলবে, এরপরের দিন আরো একটু বেশি, এরপরে মোবাইল একটু ফ্রি হলে মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান, এরপরে একদিন বলবে, হেই, ঐ রেস্টুরেন্টের দারুন একটা রেসিপি আছে, চলো যাই। এরপরে কোন একদিন বলবে, এই একটু একা আসো তো, চলো একটু নিরিবিলিতে একা গল্প করি, একটু হাটাহাটি করি।

দেখবেন আপনি যে কোর্সে সাইন করেছেন ছেলেটিও ঠিক সেই কোর্সেই সাইন আপ করেছে। সে বলে বসবে, তুমি ঐ কোর্সের না? আর সে বোঝাবে আরে আমিওও তো ঐ কোর্সে-ই নিয়েছি! এটা তার প্ল্যানের অংশ, সে প্ল্যান করেই করেছে এটা। এমন নয় যে ছেলেটি ঐ কোর্সটি ভালোবাসে, বরং এখানে আপনিই তার প্ল্যানের অংশ, কোর্সটি নয়। আর তার একই কোর্সের কথা শুনে আপনিও আহলাদে আটখানা হয়ে বলেন, কি আশ্চর্য!! একই কোর্স! অথচ ছেলেটির কাছে আপনি তার গেমের অংশ, প্ল্যানের অংশ, জেনার অংশ, জেনার দিকে বাগানোর শুরুর অংশ। এটা মেয়েদের গাফলাহ – অতি মাত্রার অবহেলা। কিছু মেয়ে এগুলো বুঝতে পারে কিন্তু অনেক মেয়েদেরাই এগুলো বুঝতে পারে না। এই সব মেয়েদের এতো বেশি মাত্রার সরলতা-বোঝহীনতা খুবই অসস্বতিকর। তারা এতটাই উপলব্ধিহীন সরল যে জানেই না কি হতে যাচ্ছে চারিপাশে! আপনার চিন্তা ছেলেটি বলছে এসাইনমেন্টে সহযোগিতা করতে? আপনার মাথা খারাপ? কোন দুনিয়ায় থাকেন আপনি?

এই ছেলেটি এসে আপনার কাছে ইসলাম নিয়ে জিজ্ঞেস করে। আপনি ভাবেন আহ, ছেলেটি ইসলাম নিয়ে জানতে চাচ্ছে। গতকাল আপনি তার সাথে চার ঘন্টা শরিয়া নিয়ে কথা বলেছেন। একজন আলেমকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তার সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি? সে অনেক কিছু জানতে চায় ইসলাম নিয়ে, অনেক প্রশ্ন আছে তার, আমি কি তাকে সাহায্য করতে পারি? এই ধরুন তার প্রশ্নগুলো নিয়ে কলেজ/ভার্সিটিতে বসে তাকে উত্তর দেওয়া, একটু রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে বা মাঠে বাদাম খেতে খেতে তার প্রশ্নগুলোর যুক্তিসই উত্তর দেওয়া। আলেম বলল, আমার পাঠিয়ে দেন, আমি কথা বলি, তার সব প্রশ্নের উত্তর দেই। আপনি বলেন, না না, সে আমার সাথে ঐগুলো নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে, কমফর্ট ফিল করে – যেহেতু প্রথম থেকেই আমিই তার ইসলাম নিয়ে কথা শুরু করেছিলাম। এরপরে কিছুদিন পরে বলবে, আমি ভালো হতে চাই, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, কারণ আমি তোমার কাছেই ইসলাম শিখেছি, তোমার সাথে থেকেই আরো শিখতে চাই আর এটা তোমার সাথে না থাকলে হবে না।

আমি ছেলেটির ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছি না আর! কিন্তু আপনার কি মনে হয় বিষয়টা সম্পর্কে? এই ছেলেটি প্ল্যান করেই এসব করেছে, ম্যানুফ্যাকচারিং এর প্ল্যান। এইটা কেবল আপনার জন্য ইসলামে আসা না, সে আপনাকে পাওয়ার জন্যই এত কিছু করেছে! তার নিয়ত আপনাকে পাওয়া, প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা, আপনার আগ্রহের জায়গায় আসা ছিলো তার প্ল্যান, আপনার সাথে কথা বলার বাহানা, আপনার কাছে ভালো সাজার পরিকল্পনা, আপনার কাছে আসার গল্পের সূচনা – প্রেম-জেনার প্ল্যানের অংশ।

মেয়েদের এসব ব্যাপারে এত বোকা হলে চলবে না। তাদের শক্ত কথা শেখা উচিৎ, ছেলেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো ভয়েস তাদের দেখানো দরকার। ওহ, আপনি কি ফেইসবুকে আছেন? – আছি কি না আছি তাতে আপনার কি? অ্যাআ? এভাবে শক্তভাবে বলে দিন। সে আর আপনার চারপাশে ভুলেও জিজ্ঞেস করার জন্য আসবে না, পর্ব শেষ, খতম। এভাবে বললে আপনার আর ঐ ধরণের সমস্যা থাকবে না। যা করতে হবে আপনাকে সেটা হলো শক্ত কথা বলা। আপনার ভয়েস সোজাসুজি রাখুন, সরাসরি শক্ত কথা বলে দিন, এই ক্ষেত্রে প্রস্রয় না দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে শক্ত ভয়েস নিতেই হবে ছেলেটির প্ল্যানের অংশ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে, নিজেকে অনাগত সমস্যা থেকে বাঁচাতে।

আপনাকে আরো একটা কাজ করতে হবে, ছেলেদের দেখে কখনই হাসবেন না, কখনই না। আপনি যখন একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসি দেন, আপনি নিজেও জানেন না কতটুকু কি করলেন। ছেলেটির মাথার মধ্যে তখন চিন্তা আসে, অহহহহহ, ইয়াহহুউউ, অ অ অ ...। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না ছেলেটির ওপর হাসির প্রভাব কত বিশাল হতে পারে। অহ মাই গড, তার হাসি কি যাদুকরী, কি অপরূপ সে হাসি – ছেলেটি একেবারেই এডিক্টেড হয়ে যায় এই হাসির প্রতি অথচ আপনি কিচ্ছু জানে না, আপনার কোনো ধারণাই নেই কি করেছেন। এরপর ছেলেটি কি করে? ঐ যে ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান, সেই গেইম প্ল্যান, আপনাকে নিয়ে প্ল্যান করে ফেলে দীর্ঘ দিনের, কীভাবে বশে আনা যায়। এরপর আপনাকে সে আপনার সামনে এমন কিছু করে, এমন কিছু বলে যা আপনাকে হাসায়, আপনাকে আনন্দ দেয়। আপনাকে কেউ বারণ করলে, আপনি চট জলদি জবাব দিয়ে দেন, আমি তো অন্য কিছু করছি না তার সাথে, সে খুবই ফানি – জাস্ট এটুকুই! ইন্নাল্লাহা খাবিরুম বিমা ইয়াসনাউন – আল্লাহ এসব কিছুই জানে। অথচ আপনি চাইলেই আপনার চক্ষু এবং মাথাকে অবনত করতে পারতেন, হাসি না দিতে পারতেন – তাহলে ছেলে আগ্রহবোধ করতো না, এরকম প্ল্যান করতে পারতো না, আপনার প্রভাব তার ওপর পরতো না। আপনি যদি কেবল আপনার হাসি না দিতেন, নিজেকে অবনত করে রাখতেন, শক্ত ভয়েস দাড় করাতে পারতেন, তাহলে সে এতো প্ল্যান করতে পারতো না- তাহলে সব কিছুই পালটে যেতো – সে আপনার কোর্সে এনরোল করতো না, আপনার ফেইসবুক একাউন্ট চাইতো না, মেসেজে চ্যাট করতো না, ধীরে ধীরে একান্তে মেলামেশার সুযোগ পেতো না – এগুলো কিছুই হতো না আপনি সুযোগ না দিলে। আপনি চাইলেই আপনার নিজেকে এবং আরেকজনকে শয়তানের প্ল্যান থেকে রক্ষা করতে পারতেন – কিন্তু আপনার বোঝহীন উপলব্ধির কারণে, আপনার সুযোগ দেওয়ার কারণে, দৃঢ় ভয়েস না থাকার কারণে সবকিছু ভিন্ন পথে, ভ্রষ্ট পথে চলতে থাকে।

আর এখন তো ফুসবুকের বদৌলতে অনেক কিছু হচ্ছে! ক্লাসের গ্রুপ ফটো! ইফতার পার্টির মিক্সিং ফটো এটা অমুক রেস্টুরেন্ট! এখন আপনি ফেইসবুকে শত শত ঘন্টা হাসির ফটো দিয়ে রাখছেন! আর কেউ আপনাকে এ ব্যাপারে বললেই তাকে এক্সট্রিম বলেন। অকে, আপনি এক্সট্রিমই ই থাকেন এসব ক্ষেত্রে, এইসব ফেইসবুকের কাজ, গ্রুপ ফটো, এমনকি ফেইসবুকে একাউন্ট না থাকলেও আপনি বেচে থাকবেন।

আপনাকে আপনার ওয়াইফ নিয়ে জড়াজড়ির ছবি ফেইসবুকে দিতে হবে কেন? এগুলো ঘরের জিনিস, আপনি বাইরে আনবেন কেন এগুলো? এগুলো ঘরের একেবারেই ভেতরে থাকবে, এজন্য আল্লাহ কারো ঘরে ডুকতে সালাম বা নক করে অনুমতি নিতে বলছেন অথচ আপনি সেটাই পাবলিকলি দিচ্ছে সবার সামনে! এখন তো তার নক করারও দরকার হয় না, জাস্ট ক্লিক করলেই হলো – আপনি নিজে অন্যের ঘরে চলে এসেছে! আল্লাহ আপনাকে গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নকের ব্যবস্থা করলেন, আর আপনি সেটা থেকে বেরিয়ে মানুষের ঘরে ডুকে গেলেন!

আমি বলছি না ফেইসবুক হারাম, কিন্তু আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এটা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে – আপনার হাসি ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন কেন দেখবে আরেকজন? কেন সে সে হাসি দেখে আপনার পেছনে গেইম প্ল্যান করবে? কেন আপনার অন্দর মহলের বিষয়াদি ফেইসবুকে অন্যের জন্য ওপেন করে দিবেন? ফেইসবুক ব্যবহার করলে সুন্দর করে করেন, কার্যকরীভাবে করেন এর ব্যবহার।

- নোমান আলী খান

পঠিত : ৪২২ বার

মন্তব্য: ০