Alapon

ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়...


আজ লেখাটির উদ্দেশ্য একমাত্র আমার সেই সব দ্বীনি ভাইদের জন্য যারা নিজেদেরকে বেপর্দা নারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলেও কেন জানি তারা পারছে না পর্দাশীল দ্বীনি নারীদের ছলনার হাত থেকে রক্ষা পেতে! যা বড়ই আফসোসের বিষয়!!

শুধু বেপর্দা নারী নয়,আজকাল কিছু দ্বীনি ভাইরা শয়তানের নেক সুরাতে ধোঁকায় পরে পর্দাশীল নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরছে,,এবং তাদের প্রতি ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে পরছে।তাও আবার তাদের নিজেদের অজান্তেই ! আবার আমাদের মাঝে এমন কিছু দ্বীনি বোনও আছেন,যারা কিনা অনেক দ্বীনি ভাইদের ঈমানী চেতনা আর দ্বীনদারিতা দেখে অনেকেই মনের দিক থেকে ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে পরছেন,,,,আর ধীরে ধীরে তারা ধাপিত হচ্ছেন ভয়াবহ জিনার পথে..! ইন্নাহলিল্লাহ!! এটি এক বড় ফিতনা! যার দ্বারা খুব সহজেই যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন।

কোন দ্বীনি ভাই কোন দ্বীনি বোনদের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন,,এটি স্বাভাবিক একটি মানব বৈশিষ্ট্য।তবে যদি সেই ভাই অথবা বোনের সার্মথ্য না থাকে বিবাহ সম্পাদন করার,,তবে সেই ভাল লাগাই হয়ে যেতে পারে আপনার জীবনের জন্য এক ভয়াবহ ভুল!যার মাশুল আপনাকে গুনতে হবে এই জীবন ও মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে,,,!

প্রথম প্রথম হয়ত বিষয়টি খুব বেশি জটিল মনে হবে না আপনাদের কাছে।খুব স্বাভাবিক জীবনধারার মতোই আপনি নেক সুরতে আপনি সেই দ্বীনি ভাই/বোনদের সাথে যোগাযোগ করে যাবেন।এবং ক্রমান্বয় পতিত হবেন প্রেম নামক হারাম সম্পর্কে! এবং সেখান থেকেই শুরু হবে আপনাদের মধ্যকার জিনার সম্পর্ক..!

ভার্চুয়াল জগতে দ্বীনি ভাই রা বেপর্দানারী থেকে নিজেকে হেফাজত করতে পারলেও অনেকেই দ্বীনি নারীর প্রতি আকর্ষণ থেকে দূরে রাখতে পারেন না নিজেকে। তাই ভার্চুয়াল জগতে নিজেকে ফিতনা মুক্ত রাখতে হলে এক প্রকার অন্ধের মতই চলতে হবে আপনাদেরকে। ভাইদেরকে হাত জোড় করে অনুরোধ করবো,কোন নারী সে তার জীবনে কি করছে,কি পোস্ট করছে,কেমন ইসলামিক জীবন লিড করছে সে বিষয়ে আপনারা একদমি গুরুত্ব দিবেন না।বরং দরকারি তথ্য জেনে যাওয়ার পর আপনি সেখান থেকে খুব দ্রুতই প্রস্থান করবেন।অন্যকোনো দিকে একবারের জন্যে হলেও ভুলেও তাকাবেন না!!।এবং সেই বিষয় নিয়ে মাথা একদমি ঘামাবেন না! এড়িয়ে যান সেখান থেকে। নতুবা তিল থেকে তাল কখন যে ঘটে যাবে আপনি টের ই পাবেন না।

আজ ভাবছেন একটা মাত্র কমেন্ট করলে কি ই বা এমন ক্ষতি হবে! অথচ কাল এই একটা কমেন্ট থেকেই আপনার জীবনে ঢুকে যাবে ফিতনার বীজ..।যা আপনি কখনোই অনুধাবন করতে পারবেন না! সালাফরা নিজেদের আত্নরক্ষার্থে অন্ধের মত চলেছেন রাস্তাঘাটে। ইসলামি শত্রদের থেকে ও বেশি ভয় পেতেন এই সামান্য রক্তমাংসের গড়া আশেপাশের বেগানা নারীদের! যা আপনি কল্পনা ও করতে পারবেন না..!

চলুন দেখে আসা যাক নারী ফিতনা বিষয়ে কয়েকজন সালাফদের জীবনের কিছু আত্নরক্ষা মুলক উক্তি:

[মোহাম্মদ বিন সীরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
"আল্লাহর কসম! আব্দুল্লাহর আম্মু (তার স্ত্রী) ছাড়া আমি অন্য কোন মহিলার দিকে দৃষ্টি দেইনি। জাগ্রতাবস্থায়ও না আর ঘুমন্তাবস্থায়ও না। স্বপ্নে আমি কোন মহিলাকে দেখলে মনে করছি, এটাতো আমার জন্য হালাল না। অতঃপর তার থেকে আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছি।"
( সাহমু ইবলিস ওয়া কাওছিহ)।

রাবী বিন খায়ছাম রাহিমাহুল্লাহ তার দৃষ্টিকে অবনত রাখতেন। আর মহিলাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম কালে নিজের চোখকে একদম নীচে নামিয়ে রাখতেন, তখন মহিলারা মনে করতো তিনি অন্ধ। অতঃপর তারা আল্লাহর কাছে অন্ধত্ব থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয়প্রার্থনা করত।
(যাম্মুল হাওয়া, ৮০)।

আতা রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
"আমাকে যদি বাইতুল মালের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে আমি বিশ্বস্ত হতে পারব। তবে কুৎসিত বিকৃত দাসীর ক্ষেত্রেও আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করিনা। ইমাম যাহাবী বলেন তিনি সত্যই বলেছেন।"
(সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৫/৮৭-৮৮)।

আহনাফ বিন ক্বাইস রাহিমাহুল্লাহ বলেন," তোমরা আমাদের বৈঠকগুলোতে খাবার ও নারী সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করা থেকে বিরত থাকবে। "
(সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪/৯৪)।

সাঈদ বিন মুসাইয়িব রাহিমাহুল্লাহুর বয়স ৮৪ বছর, তখন তার এক চোখ নষ্ট, আরেকটির দৃষ্টিশক্তিও একেবারে দুর্বল, এমতাবস্থায় তিনি বললেন, "আমার কাছে নারীর চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর আর কিছু নেই।"
(সিয়ারু আলামীন নুবালা, ৪/২৩৭)।

অন্যত্র তিনি বলেন,
আমি নিজের উপর নারীকে ভয়ের মত অন্য কোন কিছুকে এত ভয় পাই না। তাঁরা বললেন, হে আবু মুহাম্মদ! আপনার মত বুড়ো মানুষ তো আর মহিলাদেরকে চাইবে না, আর না মহিলারা আপনাকে চাইবে। তিনি বললেন, সেটাই আমি তোমাদের বলছি। ( কেউ কাউকে চাইবে না, তারপরও আমার এত ভয়)। অথচ সে সময় তিনি ছিলেন ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন বৃদ্ধ এক লোক।
(সিয়ারু আলামীন নুবালা, ৪/২৩৭)

আবু হাকীম রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
হাসসান বিন আবু সিনান একদিন ঈদগাহে গেলেন। অতঃপর ঈদগা থেকে ফিরলে তার স্ত্রী তাকে বললেন, "আজ কতইনা সুন্দরী রমণীকে তুমি অবলোকন করেছ।" বারবার একই কথা বলার পর তিনি বললেন, "তোমার জন্য আফসোস!"

আজ কেন জানি নবীজি (সা) এর সেই হাদীস টির কথা খুব বেশি স্মরণ হচ্ছে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''আমি আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশী ক্ষতিকারক অন্য কোন ফিতনা ছাড়লাম না।’’ [বুখারি৫০৯৬]

দ্বীনি বোনদের নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ স্ত্রীর হক নষ্ট করবেন না! আপনার যে সময়,আকর্ষণ,আগ্রহ স্ত্রীকে দেওয়ার কথা তা অন্যকে দেওয়ার আগে দশবার ভাববেন!

আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার বিবাহ অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত।আরশের মালিক অনেক আগেই সবকিছু ঠিক করে রেখেছেন।ইবলিসের প্ররোচণায় পড়ে এদিক সেদিক না ঘুরে বরং দোয়া করুন যেন আপনার নির্ধারিত সেই মানুষটির সাথে আল্লাহ তা'আলা তাড়াতাড়ি মিলিয়ে দেন।কেননা,আপনি যেখানেই যান না কেন,দিন শেষে আপনাকে অবশ্যই আপনার ঘরেই ফিরে আসতে হবে....!

পঠিত : ১০৩৯ বার

মন্তব্য: ০