Alapon

মানুষের অধিকাংশ গুনাহ যে কারণে হয়...


মানুষের অধিকাংশ গুনাহ যে কারনে হয় তার মধ্যে তার মধ্যে চোখ এবং লজ্জাস্থান অন্যতম।

আল্লাহ তায়ালা সুরা নুরে নারী পুরুষ উভয়কে তার দৃষ্টি এবং লজ্জা স্থানের হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্‌বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তাঁর জান্নাতের যিম্মাদার। [সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৭৪]
আর এই চোখ আর লজ্জাস্থানের হেফাযতের একমাত্র উত্তম ও পবিত্র মাধ্যম বিয়ে।

কিন্তু আমাদের সমাজে এখন বিয়ে হয়ে গিয়েছে কঠিন। আর বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে সহজ থেকে সহজতর। পরিণাম স্বরুপ সমাজে অশ্লীলতার প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

একজন ছেলেকে শিক্ষা জীবন শেষ করে, একটা ভাল চাকরীর আশায় অতিবাহিত করতে হয় প্রায় জীবনের ২৫-৩০ বছর। আর এই সময়টায় তার জন্য নৈতিক চরিত্র রক্ষা অনেক কঠিন হয়ে যায়। আর বেদ্বীনদার হলে অনেকে প্রেমের মত হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে যায়।আবার অনেকে উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বেও, বিয়ে করেন না বা করতে পারেন না, কারন আমদের জীবনযাত্রা দিন দিন হয়ে গিয়েছে বিলাসবহুল, তাই ছুটে চলেন অধিক অর্থের আশায়। কিনতু আমাদের, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ "হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বৈবাহিক জীবনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে নিচু করে দেয় এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। আর যে (ভরণপোষনে) সমর্থ নয়, তাকে অবশ্যই সওম পালন করতে হবে। কারণ তা তার যৌবন কামনা দমনকারী। "[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩২৯১]

আবার, অনেক দ্বীনদার ছেলে মেয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করতে পারেনা কারন।আমাদের তথাকথিত পাত্রপাত্রী নির্বাচনের ধারার কারনে।
পাত্র নির্বাচনে বেশীরভাগ পরিবারগুলো মেয়ের জন্য খুজেন একজন সরকারী চাকুরীওয়ালা, অথবা অনেক সম্পদশালী কাউকে। আবার অনেকের ডিমান্ড থাকে ডাক্তারই লাগবে, বিসিএস ক্যাডারই লাগবে নয়তো বিয়ে হবে না।
আর এই খোজাখুজিতে বছরের পর বছর চলে যায়, বিয়ে আর হয় না।
অথচ আমাদের নবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
"তোমাদের নিকট এমন লোক যদি বিবাহের প্রস্তাব দেয় যার দ্বীনদারী ও আখলাক তোমাদের পছন্দ তখন বিয়ে দিয়ে দাও মাল সম্পদের দিকে তাকিও না।"[তিরমিযি]

আবার অনেক মেয়ে দ্বীনদার হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র তার বাহ্যিক রুপের কারনে, হয়ত একটু গায়ের রং কালো, কিংবা বেটে অথবা তার বংশ মর্যাদা কম এসব কারনে যুগ যুগ ধরে বিয়ে না হওয়ার বোঝা মাথায় বহন করেন। সমাজের চোখে হয়ে যান অবহেলিত।

আর এই সব মেয়েদের যদিও বা কেউ বিয়ে করতে আসে যখন মেয়ের পরিবারের উপর চাপিয়ে দেয় বিশাল অংকের যৌতুকের বোঝা।
কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ে নির্বাচনে নবী (সাঃ) মেয়ের দ্বীন দারিতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশী।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। তার ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা, তার রূপসৌন্দর্য এবং তার দীনদারী। তবে তুমি দীনদার নারী বিয়ে করো। অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২০৪৭]

টাকা পয়সা, সৌন্দর্য্য অবশ্যই ফ্যাক্টর। কিন্তু একই সাথে দ্বীনদারিতার প্রাধান্য বেশী। কারন একজন বেদ্বীন সম্পদশালী ছেলের তুলনায় অথবা রুপবতী বেদ্বীন মেয়ের তুলনায় অবশ্যই একজন দ্বীনদার ছেলে মেয়ে গরীব হলেও ভাল। আর একই সাথে দ্বীনদারীতা, সৌন্দর্য্য এবং সম্পদশালী পাওয়া গেলে তো অবশ্যই আলহামদুলিল্লাহ।

কিন্তু দুঃখজনক যে বিয়ের মাধ্যমে একজন মুমীনের অর্ধেক দ্বীনদারিতা পূর্ণ হয় তাকে অনেকাংশে আমরা নিজেরাই কঠিন করে ফেলসি। আমাদের বিয়ে মানে লাখ লাখ টাকা খরচ। গান বাজনা, হলুদ, মেহেদী নামে নানা উৎসবের নামে অহেতুক খরচ। নয়তো সমাজে আমাদের মান থাকবে না। আর এই খরচের প্রতিযোগিতায় টিকতে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান করতে করতেই অনেকের জীবনে অর্ধেক সময় চলে যায়। কিন্তু মা আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত রাসুলুল্লাহ
( সাঃ) বলেন "বরকতপূর্ণ বিবাহ হল যা সর্বাপেক্ষা কম খরচে সসম্পাদিত হয়।"[বাইহাকী, মিশকাত শরীফ]

তাই, আমাদের মা-বাবার দায়িত্ব উপযুক্ত বয়সে ছেলে মেয়ের বিবাহের ব্যবস্থা করা। আর আল্লাহ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কেউ বিয়ে করলে যদি অভাবে পড়ে, তিনি নিজ অনুগ্রহে তাকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
"তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন তাদের বিবাহ সম্পন্ন কর আর তোমাদের সৎ দাস-দাসীদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয় তাহলে আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করে দেবেন, আল্লাহ প্রচুর দানকারী, সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।"
(সুরা নুর, আয়াত ৩২)

আর বিয়ে না দেওয়ার কারনে সন্তান যদি গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায় তার জন্য পরিবারের দায়ীত্বশীলদেরও কিন্তু সেই গুনাহের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেন, "তোমাদের সবাই (যার যার
পরিমন্ডলে) দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বে জবাবদিহি করতে হবে।"
(বুখারী ও মুসলিম)

আবার অনেকে একজন দ্বিনদার পাত্র পাত্রীর খোজে বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। মনে রাখতে হবে একজন দ্বীনদার সঙ্গী পেতে হলে আগে আমাদের নিজেদের আমল আখলাক চরিত্র ঠিক করতে হবে। তাহলে আল্লাহই নিজ অনুগ্রহে আমাদের দ্বীনদার সঙ্গীর ব্যবস্থা করে দিবেন।আল্লাহ তায়ালা বলেন-
"দুশ্চরিত্রা নারীরা দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষরা দুশ্চরিত্রা নারীদের জন্য। আর সচ্চরিত্রা নারীরা সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষরা সচ্চরিত্রা নারীদের জন্য; লোকেরা যা বলে, তারা তা থেকে মুক্ত। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিয্ক।"
[সুরা নুর আয়াত ২৬]

আমরা অনেক সময় আমাদের জীবনসঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে অনেক বিলম্ব হয়ে যায়, আমাদের আশা আকাংখার মত কাউকে বিয়ের জন্য খুজে পাই না। মনে হয় আশার বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে, অধৈর্য হয়ে যাই।এক্ষেত্রে ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে-
"হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও।"
[সুরা ফুরকান, আয়াত ৭৪]

পঠিত : ৪৩৪ বার

মন্তব্য: ০