Alapon

অলস মানুষ লজ্জাহীন ও সমাজের বোঝা...



অলস মানুষ লজ্জাহীন ও সমাজের বোঝা। একটি বাক্য প্রয়োগে তাদের পরিচিতি তুলে ধরা সম্ভব নয়। মূলত অলসতা শুধু বদগুণের নাম নয়। এটা মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। সচ্ছল পরিবারকে হুমকির মুখে ফেলে। ধনীদের ফকির বানিয়ে দেয়। রাজ-ভাণ্ডারের অর্থ আনন্দ কর্মে ব্যবহৃত হয়। মানুষ পাপের প্রতি ধাবিত হয় এবং সময়কে চরমভাবে অপচয় করে। দুনিয়া ও আখিরাতে অলসের জন্য কোন সুসংবাদ নেই।

পরিবারের অলস সদস্য
সম্মিলিত পরিবারে একজন অলস সদস্য থাকলে, তার জন্য সবার মাঝে মনো-মালিন্যের সৃষ্টি হয়। মূলত অলস সদস্যই এসবের মূল হোতা হিসেবে থাকে। সে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলে, দুই দিকেই ভাল থাকার ভান করে। দুই দিকেই সে গুরুত্ব পায়, এভাবে সে তার দিন পার করে দেয়। এই অবস্থায় ঘরে যদি মা জীবিত থাকলে তো কথাই নেই! কৌশলে মাকে, সচ্ছল ভাই কিংবা বোনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করিয়ে, নিজের জঠর জ্বালা নিবারণের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নেয়। কেননা সন্তান যতই অলস-অকর্মণ্য হউক, একটু বকাঝকা করে মা তার সন্তানের খাওয়ার প্রতি যত্নশীল হয়। তাই মা সচ্ছল ভাই-বোনদের থেকে যেভাবে হউক কিছু সংগ্রহ করে অলসের অভাব মিটাবে। এই প্রকারের অলস সন্তানগুলো মায়ের অতি আনুগত্যের মিথ্যা অভিনয় করে। সকল অলস প্রকৃতিগত ভাবে মিথ্যুক। মমতার কারণে মা তার প্রতি দরদী থাকে কেননা সন্তানের মমত্বের প্রতি মা সর্বদা দুর্বল থাকে। আবার মা তাকে ছাড়াও অসহায় বোধ করে। এটাই অলসের প্রধান অস্ত্র। ফলে সবার আপত্তি থাকা স্বত্বেও, মা উপার্জন হীন সন্তানের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখতে থাকে। এই ধরনের পরিবারে প্রতিদিন আগুন জ্বলতে থাকে। নতুন বউ আসতে থাকলে তার পরিমাণ আরো বাড়ে। কেউ জানেনা এই আগুনের উৎস কি? কিংবা সমাধানের উপায় বা কি? মূলত একটি অলস ব্যক্তিই হল এসব সমস্যার মূল কারণ।

অলস অকর্মণ্য মানুষ কাজের সুযোগ সুবিধা পেলেও, কষ্টের কাজ ভেবে এসব কে হেলায় নষ্ট করে। এই কাজ ত্যাগ করার জন্য সে কোন মতেই অনুতপ্ত হয়না বরং তার গৃহীত সিদ্ধান্ত সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ বলে যুক্তি প্রয়োগ করতে থাকে। পরিবারের যে সদস্য একটু উদার প্রকৃতির, তারা হল অলস মানুষের অন্যতম টার্গেট। অলস ভাই তাকে বুঝাতে চায়, সেই তার হাতের নিরাপদ লাঠি। মূলত অলসের প্রকৃত লক্ষ্য থাকে, ভাইয়ের উদারতার সুযোগ নিয়ে নগদ কিছু হাতিয়ে নেওয়া। ভাই বড় হোক কিংবা ছোট হোক, তার নিকট থেকে নানা উছিলায় নগদ সুবিধা সংগ্রহ করতে গিয়ে, সে তার চাটুকার-চাপরাশিতে পরিণত হয়।
অলস ভাইয়ের এই চরিত্র, উপকারী ভাইয়ের বাহিরের জীবনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে। উপকারী ভাই বাইরের কারো প্রতি করুণা করলে, অলস ভাই মারাত্মক আগ্রাসী হয়ে উঠে। এমন ভূমিকা রাখে যাতে করে সে যেন তাকে অনুগ্রহ না করে। অলস যদি এটা বন্ধ করতে না পারে; তাহলে সুবিধা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে পথে ঘাটে খোঁটা, টিপ্পনী, কটূক্তি দিয়ে কষ্ট দিতে থাকে। জন সমাজে তার ভাই থেকে সুবিধা নেবার কথাটি প্রচার করে তাকে হেয়-অসম্মান করে। ফলে সেই ব্যক্তি তার মুখ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েই তাকে উৎকোচ দেওয়া শুরু করে। এভাবেই এক অলস একজন উদারমনা ব্যক্তির উপকার ও দানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, নিজের সুবিধা আদায় করে।

ভিক্ষাবৃত্তির জন্ম হয় অলসতা থেকে
দুনিয়াতে কেউ পেশাদারী ভিক্ষুক হয়ে জন্মায় না। জীবনের কোন এক অঘটনে কারো কাছে হাত পাততে বাধ্য হলে এবং আশানুরূপ ফলাফল আসলে তখন সে ভিক্ষাবৃত্তির দিকেই আগ্রহী হয়ে উঠে। রিক্সা চালানো কষ্টকর কাজ, কুলি-মজুরের কাজ আরো কঠিন। আর যারা সারাদিন চাকুরী করে, মাসের শেষে গিয়ে বেতনের যে টাকাটা আসবে, সেটা হাতে আসার আগেই তো খরচ হয়ে যায়। যার চাকুরী যত বড় তার স্ট্যাটাস ততো বড়, খরচের পরিধিও বড়। একজন ভিক্ষুককে এসব সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়না। কষ্টকর কাজ, কুলি-মজুরের কঠিন শ্রম কিংবা মাসকাবারি চাকুরী! সবার চেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি অনেকটা সোজা। শুধু লজ্জা-শরমটা ফেলে দিতে হয়। কম-বেশী যাই পাক, নগদই হাতে আসে। ভিক্ষুকের কাছে কোন স্ট্যাটাস নেই, তাই তার নিজস্ব কোন খরচও নেই। মানুষের করুণা আদায়ের জন্য তাকে সর্বদা নিকৃষ্ট পোশাক পড়তে হয়। এ কারণে ধীরে ধীরে তার জীবনে হীনমন্যতা গ্রাস করে এবং ভিক্ষা করাটা স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়। সামাজিক সংঘটন যতই চেষ্টা করুক না কেন, নিতান্ত বিপদে পরে যারা ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেছে, তারা ছাড়া পেশাদারী কাউকে সে পথ থেকে ফিরাতে পারে না। মানুষের জীবনে এই চরিত্রটি সৃষ্টি হয় অলসতা নামক বদ স্বভাবের কারণে। তাছাড়া অলসতা মানুষকে চরম নির্লজ্জ ও অন্যের মুখাপেক্ষী করে রাখে। অলস মানুষের এই চরিত্রের দিকে লক্ষ্য রেখে রাসুল (সা) এক ভিখারিকে ভিক্ষা না দিয়ে, তার কম্বল বিক্রি করে তাকে জঙ্গল থেকে লাকড়ি কেটে জীবন ধারণের পথ বাৎলিয়েছিলেন।

অলসতা শৃঙ্খলা বিনষ্টের অন্যতম কারণ
অলসতা এমন এক মারাত্মক বদ অভ্যাস, এর প্রভাব যদি সদা চঞ্চল প্রাণীকুলের উপরে পড়ে, তারাও তাদের ছন্দ হারিয়ে ফেলে। অলসতা শৃঙ্খলা বিনষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে উঠে। গৃহপালিত কুকুর-বিড়াল যখন রান্না ঘরের বানানো খাদ্যে অভ্যস্ত হয়। তখন তারা আর বাহিরে খাদ্যের সন্ধানে যায় না। উপরন্তু তাদের যখন খানা খাওযার জন্য ডাকা হয়, তখন দেরীতে সাড়া দিবে। ধমক দিলে পরে অলস ভঙ্গিতে বুকে হেঁছড়িয়ে খেতে আসবে! উদ-বিড়াল পানিতে ঢুব দিয়ে মাছ ধরে খায় কিন্তু যখন খাদ্যের প্রাচুর্য আসে তখন সেও পানিতে কিংবা ডাঙ্গায় মানুষের মত চিৎ হয়ে খাওয়া শুরু করে। ঠিক মানুষকে যদি প্রাচুর্যের মধ্য রাখা হয়, তখন সে এটা মূল্য দেয় না। অপচয় করে, আনন্দ বিনোদনে সম্পদ খরচ করে। অনাথ-অসহায়ের মর্মবেদনা উপলব্ধি করার বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে। উপেক্ষা করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়, কারো প্রতি দয়া-মায়ার বালাই থাকেনা। এভাবে এসব মানুষ সামাজিক শৃঙ্খলা বিনষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে উঠে।

তাই দেখা গেছে, রাসুল (সা) যত দোয়া করতেন, তার বেশীর ভাগের দোয়ার মধ্যে এই কথাগুলো বারে বারে এসেছে। তিনি বলতেন, “হে আল্লাহ আমাকে অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ভীরুতা, অপারগতা, ঋণী হওয়া থেকে রক্ষা করুন” বোখারী-মুসলিমের বহু হাদিস আছে। এ জাতীয় দোয়ার প্রায় সবগুলোর মধ্যে অলসতার কথাটি বারে বারে এসেছে এবং এ থেকে পরিত্রাণ পেতে আল্লাহর সাহায্য চেয়েছে। এভাবে দোয়া করার অর্থ এই নয় যে, রাসুল (সা) নিজে অলস ছিলেন! (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) মূলত তিনি তাঁর উম্মতদের এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, জীবনে সফল হতে চাইলে অলস হওয়া যাবেনা। আর অলসতা কারো জীবনে ভর করলে, সে দুনিয়ার বোঝা হিসেবে চিত্রিত হবে।

- Tipu

পঠিত : ৯২০ বার

মন্তব্য: ০