Alapon

তুরস্ক গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে; তাতে আপনার কি?


তুরস্ক গত কিছু বছরে তাদের নিজস্ব কালচার, রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ইসলামি মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে, এই দেশের প্রতি মানুষের ভালবাসার যে দিকটা সেটা খুব ভাল করেই অর্জন করেছে। নিজস্ব তৈরি দিরিলিশ এরতুরুল, কুরুলুশ ওসমান, সুলতান সোলেইমান সহ নানান সিরিয়াল এর পেছনে অনেক বড় একটা ভাল ভূমিকা পালন করেছে।

তবে আমার কাছে মনে হয় এর ইফেক্ট বিশ্বের নানান মানুষের মাঝে যা পড়েছে, তার থেকে অনেক বাংলাদেশীদের অলস মস্তিকে একটু বেশীই ঠাই পেয়েছে। অনেকে এই জয়যাত্রাকে নিজেদের মনে করে নতুন করে খিলাফতের স্বপ্নও দেখেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে আমরা ২০২০ সালে বাস করি। টিভি সিরিয়ালের এর ইফেক্ট সামান্য ক্ষণিকের আবেগ তুলে দিতে পারে, স্থায়ী কোন সমাধান না।

তার্কির প্রেসিডেন্ট ব্যক্তিগত ভাবে একজন ধার্মিক মানুষ। তুরস্কের অনেক মানুষও আসলে অনেক ভাল ধার্মিক। কিন্তু এটা তুরস্ককে ইসলামী রাষ্ট প্রমান করে না। হা, এটা সত্য যে গত ১৫ বছরে অনেক সেকুলার নিয়ম থেকে দেশটি বেরিয়ে এসেছে। তার সাথে এটাও ঠিক যে এই সেকুলারিজমকে আবার কায়েম এর জন্য জন্য অপেক্ষা করে থাকা মানুষও কম না এখানে। তবে এগুলো নিতান্তই একটি দেশের ভেতরের অবস্থা এবং অর্জন।

কিন্তু এই সবকে কেন্দ্র করে বাঙ্গালী জাতীর আবগের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে আসলে বেশ আগেই। তুরস্ক গ্যাস এর সন্ধান পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ বলেছি। এটা আমরা বলতে পারি। আমরা এখানে থাকি। এখানের অর্থনৈতিক উন্নতি আমাদের কাজে আসবে। আমাদের টাকার মান বাড়বে। ২০১৪ সালে ১ ডলার সমান ২ লিরা থাকলেও সেটা এখন সাড়ে ৭ লিরা হয়েছে। সেই খবর আছে আপনাদের কাছে? তখন ৫০০ লিরার বেতনে যা পেত মানুষ এখন সেটা ২০০০ হাজার লিরাতেও হয় না। দেশে নিত্য বেড়ে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের দাম। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা অনেকাংশে অপূরনীয়।

তবে এগুলো আমরা বৃহত্তর কারনে মেনে নিয়েছি। তুরস্কের বিশ্ব রাজনীতির মাঠে মুসলমানদের পক্ষে তাদের নেয়া অনেক সিদ্ধান্ত এরই সব সমস্যার কারন। তাই এটা মেনে নিতে সাহায্য করেছে আমাদের। কিন্তু যথার্থ ইসলামিক শিক্ষা না থাকা তুর্কি যুবকদের অনেক বড় একটা অংশ এর বিরোধী। তুরস্কের বিভিন্ন দেশে করা সাহায্যেরও বিরোধী তারা। কিন্তু এগুলো সবই তুরস্কের নিজস্ব রাজনীতি। আমরাও চাই সব আবার আগের মত ফিরে আসুক জনাব এরদোয়ানের হাত ধরেই। আরো বাড়ুক তার জনপ্রিয়তা। বারবার জিতে যাক।

কিন্তু আমার প্রশ্ন ৮ হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশ, যেখানে নিত্য মানুষ মরে অবিচারে, ক্ষুদায়, বন্যায়। অনিয়মের বলি হাজার মানুষ সেই দেশকে নিয়ে একটা কোন পদক্ষেপ নেই সারাদিন তুরস্ককে নিয়ে পরে থাকাটা কোন ধরনের দেশ বা ধর্ম প্রেম?
যে দেশে মানুষের জীবনের অর্ধেক সময় কাটে রাস্তার জ্যামে, সেখানের মানুষের তাদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের চিন্তা না করে তুরস্কের স্প্রীড ট্রেন নিয়ে চিন্তা করা হাস্যকর না? চিকিৎসার অভাবে মানুষ রাস্তায় লাশ হয়, সেবার নামে নকল অসুধ আর রিপোর্ট দেয়া সাহেদদের ছড়াছড়ি যেখানে, সেখান বসে এই দেশের সিস্টেমেটিক চিকিৎসা নিয়ে আনন্দের ঢেহুক তুলে আপনার কি লাভ? পারলে নিজের টা পরিবর্তন করুন। এখনও নিজের ময়লা নিজে রাস্তায় ফেলেন, আর পাশে কেউ দেখে নাই এটা ভেবে নিশ্চিন্ত হন, সেই আপনারা পরিস্কার তুরস্কের রাস্তা দিয়ে কি করবেন? নোংরা করতে আসবেন?

তুরস্ক গত ১৫ বছরে উন্নতি করে নাই এমন কোন খাত নেই। যোগাযোগ থেকে শুরু করে নাগরিক সেবা। দেশীয় রাজনীতি থেকে বিশ্ব অব্দি তাদের জয়গান। আর আমাদের বাংলাদেশে? এখানেও তো ১৫ বছর প্রায় এক সরকারই আছে। তাহলে এখানে এখনও কেন মানুষ নেতাদের মিথ্যে আশ্বাসে ঘুম থেকে উঠে? কেন এখনও আমাদের মানুষের মাঝে পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এই কথা বিশ্বাস করার মত অপূর্ন মানসিকতা আছে আর শিক্ষা তা পরিবর্তন করতে পারে না? কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া চোরও ধরা হয় না? ভেবে দেখেছেন কখনও? এর প্রতিকার চেয়েছেন কখনও? নাকি এটাই পরিনতি আর তুরস্কেরটা হতাশার মাঝে আশা হিসেবে মেনে নিয়েছেন?

আমরা যারা এখানে এসেছে, পড়াশুনা করেছি, চাকরী করছি এই দেশের সেবা নিচ্ছে আমরা আনন্দিত হতে পারি। হচ্ছি। আনন্দের খবর আপনাদের দিচ্ছি। কিন্তু সেটাকে মাথায় তুলে নাচানোর কোন কারনতো নেই। মনে রাখবেন যারা নিজের দেশ আর দেশের মানুষকে ভালবাসে না, নিজের দেশে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না তাদের অন্য দেশের প্রতি দেখানো এই সব ভালবাসা আসলে নিতান্তই তাদের নিজেদের মনে শান্তি নিয়ে আসে। বৃহত্তর কোন কাজে আসে না। পরেরটা দেশে শিক্ষা নিয়ে নিজেরটা পরিবর্তন করতে শিখুন। ভাল থাকবেন।।

- মশিউর রহমান

পঠিত : ৫৫৭ বার

মন্তব্য: ০