Alapon

মালিতে সেনা অভ্যুত্থানের নেপথ্যে কোন পরাশক্তির হাত রয়েছে?


পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে সামরিক বাহিনীর একাংশের বিদ্রোহের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই শুরু হয় অভ্যুত্থান। দিনের শুরুতেই সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাজধানী বামাকো থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের প্রধান সামরিক ঘাঁটিতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। তারপর সারাদিনই বিচ্ছিন্নভাবে গোলাগুলি, আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এরপর রাতের বেলা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায়। সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে কর্নেল মালিক দিয়াও ,কর্নেল সাদিও কামারা এবং জেনারেল চেইক ফান্টা মেডি ডেম্বেলে বিশেষ ভাবে উল্লেখিত।

মঙ্গলবার আটকের পর এক টেলিভিশন ভাষণে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বোউবাকার কেইতা। ভাষণে তিনি সরকার ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সেনাবাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অংশ যদি নিজেদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের ইতি টানতে চায়, তাহলে কী আমার সামনে পদত্যাগ ছাড়া আর কোনও বিকল্প আছে? আমাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য কোনো রকম রক্তপাত হোক, সেটা আমি চাই না। ’মালির সেনাদের মধ্যে বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষ এবং জিহাদিদের সঙ্গে অব্যাহত লড়াই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় তার ওপর অনেকের ক্ষোভ তৈরি হয়।

কৌশলগত কারণেই পশ্চিম আফ্রিকা, সাহেল ( মালিসহ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষ জিওগ্রাফিকাল এলাকার ১০ টি রাষ্ট্র) ,আরববিশ্ব , ই ইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে অপরদিকে আমেরিকান উপদেষ্টাগণ মনে করেন ফ্রান্স তার পূর্বের উপনিবেশ মালির স্বাধীনতা অর্জনের কয়েক দশক পরেও মালির আভ্যন্তরীণ বিষয় গভীরভাবে জড়িত।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মালি উপদেষ্টা এই বিষয়টা হাইলাইট করে ফ্রান্সের জড়িত থাকার অভিযোগকে দাড় করিয়েছে ।যদিও ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র তবুও বলতেই হচ্ছে রাজনীতিতে শত্রু মিত্র বলে কোন কথা নাই।সবই স্বার্থের খেলা!

ইসলামপন্থী ও তুয়ারেগ বিদ্রোহীদের দমনের জন্য মালিতে ফরাসিদের প্রধান ঘাঁটি এবং ফরেভার ওয়ার( forever war) খ্যাত অভিযান পরিচালনা করছে দীর্ঘদিন যাবত। আবার এই বিদ্রোহীরা ফ্রান্স মার্কিনিদের দাবার গুটি কিনা সেটাও বলা সম্ভব হচ্ছে না।

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর গাদ্দাফির হয়ে লড়া একশোর বেশি যোদ্ধা ভারী অস্ত্রশস্ত্র সহ মালিতে ফিরে আসে এবং মালিতে বিদ্রোহী সংগঠনের কাজ আরো বেগবান করে।

২০১২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইসলামী বিদ্রোহীরা প্রাচীন শহর টিম্বুক্কু সহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করে।ফরাসি সামরিক বাহিনীর সহযোগিতায় বিদ্রোহীদের পিছু হটাতে সক্ষম হয় কিন্তু পুরোপুরি দমন করতে পারেনি।

মালি ফ্রান্সের উপনিবেশ থেকে ১৯৬০ সালে স্বাধীন হয়।
১৯৯৬ সালে নিউইরয়ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে মালির প্রশংসা করে বলা হয় ,"মালির গণতন্ত্র প্রাণবন্ত গনতন্ত্র" অথচ তখন মালিতে চরম দারিদ্রতা বিরাজ করছিল।

২০১৩ সালের নির্বাচনে ৭৮% ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে ইব্রাহিম বাউবাকার কেইতা ।তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিলেন।২০১৮ সালে আবার নির্বাচনে জয় লাভ করেন ।কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকাশ চুম্বি জনপ্রিয় এই নেতা নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন।গত ১০ জুলাই সরকার বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে অন্তন্ত দশজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।এতে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়ে এবং ১৮ আগস্ট সেনা অভ্যুত্থান সাধারণ মানুষ সমর্থন জানায় ।

এখানে এটাও দেখার বিষয় ,নিজেদের বলয় বাড়াতে ,মিশরে মুরসির বিরুদ্ধে সেনা বিদ্রোহ ,গাদ্দাফির পতন ,তুরস্কে বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টা একই সুতোয় গাঁথা কিনা?
কারণ আফ্রিকান অঞ্চলে জিহাদিদের উত্থান আমেরিকার জন্য অশুভ সংকেত।জন হপকিন্স এর লেকচারার ,রাজনীতি বিশ্লেষক চিডোনওয়ানকার পশ্চিমাদের সতর্ক করেন এই বলে যে " আফ্রিকার এই জিহাদী আন্দোলন পশ্চিমা কোন সরকারের পক্ষেই ভালো নয়।"

আপাত ধরেই নিচ্ছি , জিহাদিদের কঠোর হস্তে দমন করতে না পারা ,সেনা সদস্যের বেতন ভাতা নিয়ে অসন্তোষ এবং দুর্নীতির অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বাউবাকা কেইতা কে পদত্যাগ ঘোষণা করতে বাধ্য করা হয়। এর ভিতরে আর কি থাকতে পারে তা শুধু দেখার বিষয়।

তবে সেনা বিদ্রোহকে সরকার বিরোধী জোট স্বাগত জানিয়েছে,এবং তারা নতুন সরকার গঠনে আশাবাদী (যদিও ইব্রাহিম কেইতা বিরোধী নেতা কে কোয়ালিগেশন সরকার গঠনের আহ্বান করেছিলেন)।সেনাবাহিনীও দ্রুত নির্বাচন দিবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছে।

বিদ্রোহী সেনা সদস্যদের মুখপাত্র কর্নেল ইসমাইল বাগ নিজেদের ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য স্যালভেশন অব দ্য পিপল’ উল্লেখ করে জানান, মালিতে যাতে আর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সেটি ঠেকাতেই তারা কাজ করছেন।

Cltd

পঠিত : ৪৬৪ বার

মন্তব্য: ০