Alapon

একমাত্র বিয়ে-ই কি পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে...?


আমার এক বন্ধুর কথা বলি, সে মারাত্মকভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল। তার পরিবার বিষয়টি জানার পর তাকে মাদক থেকে দূরে রাখার চেষ্টা শুরু করে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে তা মা মনে করে, বিয়ে দিলে তার ছেলে মাদক গ্রহণ বন্ধ করে দিবে। যে ভাবা সেই কাজ। তারপর মহাধুমধামে বিবাহ হয়ে গেল।

বিবাহের কিছুদিন পরই শুরু হল নতুন ঝামেলা। মাদকের টাকা দিতে সেই বন্ধু তার বউকে অত্যাচার করতে শুরু করল। বলল, দরকার হলে তোর বাবার জমি বেঁচে টাকা আনবি। না হলে এই বাড়িতে তুই থাকতে পারবি না। এ যেন একটি সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে নতুন সমস্যার শুরু হল। এর কিছুদিন পর সমস্যা আরও প্রকট হল। সেই বন্ধু তার বউকে কথায় কথায় ধরে মারে। তারপর বিচার শালিস হল এবং তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটল।

আমার আর এক বন্ধুর কথা বলি। সে এমনিতেই ধার্মিক, নিয়মিত নামাজ-কালাম পড়ে। কিন্তু তারপরও সে একটা বদ অভ্যাস ছাড়তে পারছে না। সেই বদঅভ্যাসটা হল পর্নোগ্রাফি ও মাস্টারবেশন। সেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্নজনের সাথে পরামর্শ করল। তাদের সকলেরই পরামর্শ ছিল, বিয়ে করো। বিয়ে করলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

তারপর সে পরিবারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়েও করে ফেলল। বিবাহের ৬ মাস পর তে আমাকে বলল, যে সমস্যার কারণে বিবাহ করলাম সেটাতো এখনো ছাড়তে পারছি না। মন চায় পর্ন দেখি আর পর্ন দেখলেই মাস্টারবেশন করে ফেলি। অন্যদিকে এ কারণে বৈবাহিক জীবনে অশান্তি শুরু হয়েছে। কী যে করি! এখন মনে হচ্ছে, এর চেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করি।

এ দুটো ঘটনা বর্ণনা করার কারণ হল, উপরোক্ত দুটি বিষয়ের ক্ষেত্রে কম বেশি অধিকাংশ মানুষই মনে করে, বিয়ে করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

যে বিয়ের আগে পর্ন দেখায় অভ্যস্থ হয়ে যায়, সে বিয়ের পরও পর্ন দেখবে। তারপর মাস্টারবেশন করবে। আর মাস্টারবেশন করলে যে শারীরিক ক্ষতি হয় এ কথা প্রায় সকলেই কমবেশি জানে। নিজেকে এবং নিজের যৌনাঙ্গকে হেফাজত করার জন্য বিয়ে করা আবশ্যক। কিন্তু তাই বলে, আপনি নিয়মিত পর্ন দেখেন আর বিয়ের পরপরই সব বাদ দিয়ে দিলেন- ব্যাপারটা এতো সহজ নয়।

পর্নআসক্তি অনেকটা মাদকাসক্তির মতই ভয়ানক। এই আসক্তি পেয়ে বসলে বিয়ে আপনাকে সেই আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। যেমনটা বিয়ে করলেই যেমন মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যেমন রিহ্যাব বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তেমনি পর্নআসক্তি বা মাস্টারবেশনের আসক্তি থেকে মুক্তির জন্যই চিকিৎসা দরকার। অনেকে মনে করেন, পর্নআসক্তির একমাত্র চিকিৎসা বিবাহ। এটা ভুল ধারণা। বরোঞ্জ পর্নআসক্ত থাকা অবস্থায় বিবাহ করা মানে নতুন একটা বিপদ ডেকে আনা; বৈবাহিক অশান্তি।

পর্নআসক্তি থেকে মুক্তির জন্য কাউন্সিল দরকার। পরিবারের সাহায্য দরকার এবং সর্বোপরি নিজের উপলব্ধি দরকার। নিজে যে উপলব্ধি করে, আমি এই আসক্তি থেকে যেকোনো মূল্যে বের হবো তবেই কেবল এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পর্নআসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একা থাকা যাবে না। নির্জনে মোবাইল চালানো যাবে না আর ঘুমের আগে আগে মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক বা ইউটিউবের ভিডিও দেখা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো একটা সাধারণ ভিডিও এর কয়েক সেকেন্ডের সিন আপনাকে পর্ন দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তাই ঘুমানোর আগে আগে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।

এভাবে চেষ্টা করার পর একটা সময়ে গিয়ে যখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে যে, আমি আর পর্নআসক্ত নই, ঠিক তখনই বিবাহ করলে প্রকৃত উপকার পাওয়া যাবে। তখনই বিবাহের ফলপ্রসুতা উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। এছাড়া যারা মনে করছেন, এখন পর্ন দেখি পরে বিবাহ করলে সব ছেড়ে দিবো, তারা বিবাহের পরও পর্ন দেখা পরিত্যাগ করতে পারবেন না। আর বিয়েও সব সমস্যার সমাধান নয়। তবে স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে বিবাহের কোনো বিকল্প নেই।

পঠিত : ৮৯৯ বার

মন্তব্য: ০