Alapon

ইসলামের দৃষ্টিতে জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব ও ফজিলত...


সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তা-ঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (বুখারী)

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘটে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

সুফয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কথা বাতলে দিন, যা মজবুত-ভাবে ধরে রাখব।’ তিনি বললেন, “তুমি বল, আমার রব আল্লাহ, অতঃপর তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” আমি পুনরায় নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আপনি কোন জিনিসকে সব চাইতে বেশি ভয় করেন?’ তিনি স্বীয় জিহ্বাকে (স্বহস্তে) ধারণ-পূর্বক বললেন, “এটাকে।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষজনক এমন কথা অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলে, যার ফলে আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করে দেন। আবার কখনো বান্দা অন্যমনস্ক হয়ে আল্লাহর অসন্তোষজনক এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে জাহান্নামে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী) [1]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করত (অর্থাৎ পরনিন্দা করতো ) ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।” (আবূ দাউদ) [1]

আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!” [আবূ দাউদ] مَزَجَته এর ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন করে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য।


আমাদের মুসলিম সমাজে মানুষের বাইরের বেশ-ভুষাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়; আর বিপরীতে, ইসলামিক আচার আচরণ আমাদের নিকট থেকে হারিয়ে গেছে।

তখন যা ঘটে....যেমন আপনারা হয়তো চার পাঁচ জন একত্রে খেতে বসেছেন, এমন সময় একজন হয়তো আরো গোশত আনার জন্য উঠে গেলো....তখন বাকি ৪ জন তার সমালোচনায় লেগে যায়। তারপর সে ফেরত এলে - আসসালামু আলাইকুম, একটু হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করি, কি অবস্থা? এরপর অন্য কেউ উঠে গেলে বাকিরা এবার তার সমালোচনা শুরু করে দেয়।

মনে হয় যেন মুরগির গোশত আপনাদের জন্য যথেষ্ট নয়, এর সাথে আপনার ভাইয়ের গোশতও খেতে হবে। এটা সমাজের স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরনিন্দা করা, অন্যদের সমালোচনা করা, মানুষকে হেয় করা এগুলোকে বড় কোনো ব্যাপার বলে মনে করা হয় না। নারী পুরুষ সবাই এই কাজে লিপ্ত।
তারপর আল্লাহ বলেন - وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا - "তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে".....তোমরা মনে করেছিলে এগুলো কোন ব্যাপার না। আমরা তো শুধু বলছি। وَهُوَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمٌ - "অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল।" (24:15) আপনি যদি কুরআন অধ্যয়ন করেন এবং লক্ষ্য করেন আল্লাহর নিকট কোন কোন ব্যাপারগুলো গুরুতর। كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ - "তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষজনক।" মুনাফেকি আল্লাহর নিকট একটি বিরাট ব্যাপার। الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ - "নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।" কেউ যদি আল্লাহর সাথে কোন অংশীদার সাব্যস্ত করে তা আল্লাহর নিকট এক মহা অন্যায়।

এখন কারো সম্পর্কে উদাসীনভাবে বাজে মন্তব্য করা ....যে কাজকে আমরা কিছুই মনে করি না, এটাতো মাত্র একটা কমেন্ট, জাস্ট কয়েকটা শব্দ, এটাতো কথার কথা, আমি তো শুধু বলছি, এটাকে বড় কিছু মনে করার কী আছে? আল্লাহ বলছেন তোমরা মনে করছো এটা কোন বড় ব্যাপার নয় وَهُوَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمٌ - "অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল।"


- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ১১০৩ বার

মন্তব্য: ০