Alapon

কাল হাশরের ময়দানে যে নামাজ আমার স্বপক্ষে সাক্ষী হবে...


গতকাল রাতে ওয়েব ডেভলপারের থেকে কাজ করিয়ে নিচ্ছিলাম। ডেভলপার কাজ করছিল আর আমি পাশে বসে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম। কাজ করতে করতে ইশার আজান হয়ে গেল। আজান যখন হচ্ছিল, তখন মনে মনে ঠিক করেছিলাম নামাজটা পড়ে এসে বাকি কাজটা করব। কিন্তু কাজের মাঝে এমনভাবে ডুবে ছিলাম যে, জামাতের সময় যে কখন পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।

জামাত মিস হওয়ায় আফসোস হল, কিন্তু পরোক্ষণেই মনে হল পরে পড়ে নিবো। তারপর আবার কাজে মনোযোগ দিলাম। কিন্তু কাজ করতে করতে কখন যে রাত ১২ টা বেজে গেছে খেয়ালই করিনি। এবার আর বসে না থেকে দ্রুত নামাজ পড়ে নিলাম। বাকি কাজ শেষে যখন ঘুমানোর জন্য শুইলাম তখন হাদীসের অ্যাপস হাদীস পড়ছিলাম। মাঝে মাঝেই পড়ি। হাদীস পড়তে পড়তে একটা হাদীসে গিয়ে চোখ আটকে গেল এবং নিজেকে খুবই তুচ্ছ মনে হতে লাগল। সেই হাদীসে আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন-

‘যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে, কিয়ামতের দিন এই নামাজ তার জন্য আলো হবে। তার স্বপক্ষে প্রমাণ ও মুক্তির কারণ হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজ যথাযথভাবে আদায় করবে না, তার জন্য নামাজ আলো হবে না। নামাজ তার স্বপক্ষে প্রমাণ বা মুক্তির কারণ হবে না। আর তার হাশর হবে ফিরাউন, হামান, কারুন ও উবাই বিন খালফের সাথে।’

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় উলামাগণ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাজত্বের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নামাজ ভুলে যাবে, তার হাশর হবে ফিরাউনের সাথে। যে ব্যক্তির মর্যাদা ও প্রতিপত্তি তাকে নামাজ থেকে বিরত রাখবে তার হাশর হবে হামানের সাথে। যার ধন-সম্পদ তাকে নামাজ থেকে বিরত রাখবে, তার হাশর হবে কারুনের সাথে। আর যে ব্যক্তির ব্যবসা-বাণিজ্য তাকে নামাজ থেকে বিরত রাখবে, তার হাশর হবে উবাই বিন খালফের সাথে।’

আল্লাহর রাসূলের উপরোক্ত হাদীস পড়ে সত্যিই হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমরা দুনিয়ার কাজে এতো মত্ত হয়ে পড়েছি যে, দুনিয়ার কাজটাই সর্বাগ্রে প্রাধান্য পায় আর আল্লাহর হুকুম নামাজটাই গুরুত্বহীণ হয়ে পড়ে। এমন অনেকবার দেখেছি, অফিসে জরুরী মিটিং চলছে, এমন সময় মাগরিবের আজান হল। তখন প্রাকটিসিং অনেক মুসলিমকেই বলতে শুনি, মিটিংটা শেষ করি তারপর নামাজ পড়া যাবে! অথবা এমনও হয় ইসলামের নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা সভা হচ্ছে, এমন সময় আসরের আজান হল! তখন বক্তারা বলেন, আমরা মিটিং শেষ করে আসরের নামাজ পড়ব। একদিকে তারা ইসলামি সম্মেলন করছে, অন্যদিকে তারা ইসলামের ফরজ বিধানকেই সবার শেষে পালন করার কথা বলছে।

অথচ আল্লাহর রাসূলের হাদীস উপলব্ধি করলে বোঝা যায়, সর্বাগ্রে আল্লাহর হুকুম নামাজই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। মসজিদে আজান হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে মিটিং সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। আজান হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে দোকান বন্ধ করে মসজিদে যেতে হবে। তবেই না আমাদের নামাজ কাল হাশরের ময়দানে সাক্ষি হয়ে যাবে।

পঠিত : ১০৫৩ বার

মন্তব্য: ০