Alapon

দ্বীনি খেদমত ও ইমাম আবু হানিফার বিতর্ক প্রিয়তা...


দুনিয়ার অন্যতম তার্কিক ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রাহ)। এ সব ঘটনা সারা দুনিয়ায় বহু কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। বিতর্কের ময়দানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চৌকষতা ছিল ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর কাছে। সারা জীবনে তিনি কোনদিন বিতর্কে পরাজিত হন নি! তার সময়ে অনেক নাস্তিকের জন্ম হয়েছিল। তিনি এসব নাস্তিককে তাদের স্বীয় পদ্ধতিতে ধরাশায়ী করতেন। বিপরীতে স্বয়ং মুসলমানদের মধ্যেই জামিয়া, কাদরিয়া, জবরিয়া, খাওয়ারিজ, রাওয়াফিয নামক নানা ফেরকার জন্ম হয়েছিল। যিন্দিক ও মুলহিদ নামক ফেরকা চরম বিস্তার হচ্ছিল। তিনি এ ময়দানে অবতরণ করেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত মেধা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং চিন্তাশক্তি দ্বারা ইসলামী আকায়েদ এবং চিন্তাধারার সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে এদেরকে প্রতিটি ময়দানে পরাস্ত করতে থাকেন। এ কারণে ইমাম আবু হানিফার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি খুব খ্যাতিমান হয়ে উঠেন। এ সম্পর্কে তিনি নিজের কথা এভাবে বলেছেন,

"প্রথম জীবনে আমি বহছ-মুনাযারায় ব্যস্ত থাকতাম। ঐ সময়ে বসরা ছিল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বহছ-মুনাযারার কেন্দ্র। তাদের সাথে বহছ করার জন্য বিশ বারের অধিক আমাকে সেখানে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। কখনও এক বৎসর আবার কখনও এর কম সময় সেখানে অবস্থান করতে হয়েছে। সেখানেই খাওয়ারিজ ও হাশরিয়াদের সাথে মুনাযারা করতাম। কেননা ঐ সময়ে আমি এই জ্ঞানকে উত্তম এবং এ ধরনের কাজকে ভাল আমল মনে করতাম! তাছাড়া বিপরীত পক্ষের সকল ইসলাম বিরোধী শক্তিকে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে নাস্তানাবুদ করতে পারাটাকে আমি দ্বীনের অন্যতম খেদমত মনে করতাম।"

এক মহিলার কারণে তার এই ভুল ভেঙ্গে যায়। ইমাম সাহেবের মুখে শুনুন সেই ঘটনা,

"একদিন জনৈকা মহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করল যে, কোন স্বামী তার স্ত্রীকে সুন্নাত মুতাবেক তালাক দিতে চায়। তার পদ্ধতি কি? আমি অনুতপ্ত এবং লজ্জিত হয়ে ঐ মহিলাকে বললাম, তুমি বরং হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমানের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে জেনে এসো এবং তিনি কি উত্তর দিলেন সেটা আমাকে যাবার সময় জানিয়ে যেয়ো। মহিলা তদ্রূপই করলেন। এ ঘটনায় তখন আমার মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া হল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এলমে কালাম তথা ময়দানে বিতর্ক করার জ্ঞানের আমার আর প্রয়োজন নেই। অতঃপর আমি নিজেই জুতা তুলে নিয়ে হাম্মাদের মজলিসে গিয়ে যোগদান করলাম। অথচ তখন কিন্তু আমি সারা দেশে ইলমে কালামের জন্য তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলাম।" উলেখ্য হাম্মাদ (রহ) একজন প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ছিলেন।

উল্লেখ্য আজকের জমানায় আমরা ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখে থাকি একটু লেখাপড়া করে, সবাই নিজেকে দ্বীনের দায়ী মনে করে জনগণের প্রতি উপদেশ খয়রাত করে। এক আলেমের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে অন্যরা ট্রল করে। আবার অন্য জনকে কিভাবে হেয় করতে পারবে, সেটার জন্য নিজের বুদ্ধি, বিবেক বিচক্ষণতাকে কাজে লাগাচ্ছে। কেউ চিন্তা করেনা তারা যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে তা নিজের জন্য কতটুকু উপকারী আর অন্যের জন্য কত দরকারি। ইসলামী দুনিয়ায় আগামীতে যত তার্কিক বিচক্ষণ ব্যক্তির জন্ম হবে তাদের কেউ ইমাম আবু হানিফার (রাহ) যোগ্যতা-দক্ষতার চৌহদ্দি পেরুতে পারবে না! সেই ইমাম আবু হানিফা এই লাইন বাদ দিয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য কোরআন-হাদিসকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। সারা দেশে তুমুল জনপ্রিয় ব্যক্তি বক্তার ময়দান ছেড়ে, অনুগত ছাত্রের মত হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমানের দরবারের মাটিতে বসে পড়েন।

- tipu

পঠিত : ১৪২৫ বার

মন্তব্য: ০