Alapon

বসফরাস প্রণালী: ভবিষ্যৎ আধিপত্যের চাবিকাঠি...


বসফরাস একটি জলপ্রণালী যা এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যবর্তি অঞ্চলের একটি অংশে সীমানা নির্দেশ করে। এটিকে অনেক সময় ইস্তানবুল প্রণালীও বলা হয়। বসফরাস, মারমারা উপসাগর এবং দক্ষিণ পশ্চিমের দার্দেনেলাস প্রণালী মিলে তুর্কি প্রণালী গঠিত। বসফরাস প্রণালী বিশ্বের নৌ চলাচলে ব্যবহৃত সবচেয়ে সরু জলপথ। বসফরাস প্রণালী কৃষ্ণ সাগরকে মারমারা উপসাগরের সাথে যুক্ত করেছে। বসফরাস প্রণালীর দুপাশে দু’টি করে চারটি বাতিঘর দ্বারা এর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে।

বসফরাস প্রণালী কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রপথে রাশিয়া ও ইউক্রেনে যাওয়ার জন্য এটি অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিকে অধিকার করার জন্য আধুনিক ইতিহাসে বেশ কয়েকটি সংঘাত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম রাশিয়া-তুরস্ক যুদ্ধ ১৮৭৭-১৮৭৮।

বর্তমানে বৈশ্বিক আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রণালী।

বসফোরাস প্রণালী এবং দারদানেলস প্রণালী উভয়ের অবস্থান তুরস্কের মধ্যে। এ দুটি প্রণালীকে একত্রে টার্কিস প্রণালীও বলা হয়। কৃষ্ণ সাগর তীরের দেশ রাশিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং জর্জিয়ার বাণিজ্যিক এবং যুদ্ধ জাহাজের ভূমধ্য সাগর ও অন্যান্য সাগরে প্রবেশের একমাত্র পথ বসফরাস প্রণালী।

এসব দেশের জাহাজ বসফরাস প্রণালী- মর্মর সাগর- দারদানেলস প্রণালী হয়ে এজিয়েন সাগর এবং ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করতে পারে। এরপর ভূমধ্য সাগর থেকে জিবরাল্টার প্রণালী হয়ে উত্তর আটলাল্টিক সাগর এবং মিশরের সুয়েজ খাল হয়ে লোহিত সাগর, আরব সাগর আর ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে পারে ।

বর্তমানে ভৌগোলিক আধিপত্যকেন্দ্রিক লড়াইয়ের কারণে রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বসফরাস প্রণালী। এ প্রণালী দিয়ে দেশটি সহজে ভূমধ্য সাগর হয়ে উত্তর আটলান্টিক, লোহিত সাগর, আরব সাগর, ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করতে পারে। এ কারণে বসফরাস প্রণালী বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌ রুট। রাশিয়ার উত্তরে যদিও বাল্টিক সাগর, কারা সাগরসহ আরো কয়েকটি সাগর রয়েছে। কিন্তু এসব সাগর পথ খুবই দীর্ঘ আর বরফশীতল এবং অনেক এলাকা বরফাচ্ছাদিত।

বসফরাস প্রণালী আর এজিয়েন সাগরকে যুক্ত করেছে মর্মর সাগর। মর্মর সাগর তুরস্ক ভূখন্ড বেষ্টিত। ফলে বসফোরাস প্রণালীকে কেন্দ্র করে তুরস্কের হাতে রয়েছে ভবিষ্যত আধিপত্যকেন্দ্রিক রাজনীতির অন্যতম চাবিকাঠি।

তুরস্কের উত্তরে কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিমে এজিয়েন সাগর আর দক্ষিণে ভূমধ্য সাগর। কৃষ্ণ সাগরের মূল উপকূলভাগ তুরস্কের। আর ভূমধ্য সাগরেও তুরস্কের রয়েছে বিশাল উপকূল রেখা। বসফরাস প্রণালীর দক্ষিণে তুরস্কের আনাতোলিয়া আর উত্তেরে তুরস্কের থ্রেস। থ্রেসের অবস্থান ইউরোপের দক্ষিণ পূর্ব-ভাগে। থ্রেস ইউরোপীয়ান টার্কি নামে পরিচিত।

এজিয়েন সাগরে উপকূল ভাগ রয়েছে শুধু তুরস্ক আর গ্রিসের। অপর দিকে ভূমধ্য সাগরের তীরে তুরস্ক ছাড়া অপর যেসব দেশ অবস্থিত সেগুলো হলো মিশর, লিবিয়া, ইতালি, গ্রিস, সিরিয়া, ইসরাইল, তিউনিশিয়া, লেবানন। এ ছাড়া দ্বীপ রাষ্ট্র সাইপ্রাস এবং মাল্টার অবস্থান ভূমধ্য সাগরে।

বর্তমানে ভূমধ্য সাগর ঘিরে সব পরাশক্তিগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে। এ লড়াইয়ের সাথে যুক্ত ভূমধ্য সাগরপারের দেশগুলোও। এখানে মোতায়েন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্সসহ আরো বিভিন্ন দেশের রণতরী। আর ভূমধ্য সাগর ঘিরে বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তুরস্কের বসফরাস প্রণালী, মর্মর সাগর আর দারদানেলস প্রণালী।
বসফরাস প্রণালীর উভয় তীরে অবস্থিত তুরস্কের সবচেয়ে জনবহুল, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক আর অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুল। বিশ্বে সীমিত কয়েকটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল শহর রয়েছে এবং ইস্তাম্বুল তার একটি।

বসফরাস প্রণালীর উত্তর তীরে মর্মর সাগরের একেবারে কোল ঘেঁষে অবস্থিত তুরস্কের ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া, ব্লু মস্কসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা। বসফরাস প্রণালীর তীরেই মর্মর সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত তুরস্কের আরেক ঐতিহাসিক স্থাপনা তোপকাপি প্যালেস মিউজিয়াম। বসফরাসের তীর ঘেঁষে রয়েছে উসমানীয় সুলতানদের ১১টি সুরম্য প্রাসাদ। এখানেই ছিল তাদের আবাসিক এবং প্রশাসনিক হেডকোয়ার্টার।

উসমানীয় শাসনামলে বসফরাসের তীরে ৬২০টি ওয়াটার ফ্রন্ট বাড়ি নির্মাণ করা হয় যা এখনো বিদ্যমান। বসফরাস প্রণালীর দুই তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কয়েক শ বছরের সারি সারি পুরনো বাড়িঘর, সবুজ গাছপালা, কোথাও উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকা, নীল জলরাশি আর চলাচলরত বিভিন্ন ধরনের জাহাজ এ প্রণালীকে করেছে নয়নাভিরাম। বসফরাস প্রণালীর ওপর রয়েছে তিনটি সেতু। বসফরাস প্রণালী এলাকা তুরস্কের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।
পৃথিবীতে প্রণালী গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যার মধ্যে এই বসফরাস প্রণালী অন্যতম। বসফরাস প্রণালীর তে নির্মিত বসফরাস সেতু। ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে পৃথিবীর সব চেয়ে সরু এই প্রণালীটি অনত্যম। তুরস্কের মালিকানায় থাকা এই প্রণালী ভূরাজনৈতিক কারনেই রাশিয়ার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রাশিয়াই নয় এর পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোর কাছে।

- সুইটি শিলা

পঠিত : ৭৪০ বার

মন্তব্য: ০