Alapon

ই-কমার্স সাইট ইভ্যালি কি পালিয়ে যাবে...?


ইভ্যালি, সময়ের আলোচিত টপিক। বাংলাদেশে যতগুলো ই-কমার্স সাইট আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে সাফল্য পেয়েছে ইভ্যালি। মাত্র দুবছরেই ই-কমার্স অঙ্গনে লিডিং পজিশনে পৌঁছে গেছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি ইভ্যালি নিয়ে প্রথম আলো থেকে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘ডিজিটাল ব্যবসার নতুন ফাঁদ ইভ্যালি’। এরপর থেকেই ইভ্যালি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে এবং ইভ্যালির ব্যাপারে সার্বিক অনুসন্ধান চালানোর জন্য সরকারের নজরদারি কামনা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ইভ্যালির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে ৩ সদস্যের একটি তদন্তকারী টিম গঠন করা হয়েছে। আর তদন্ত চলাকালীন সময়ে আগামী ৩০ দিনের জন্য ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।

ইভ্যালি যখন প্রথম যাত্রা শুরু করে, তখন তাদের বিজ্ঞাপন দেখতাম। তাদের বিজ্ঞাপনে বিষ্ময়কর অফার দেখে ভীষণ অবাক হতাম। সেইসাথে আর অন্য সবার মত ভাবতাম, ইভ্যালিও হয়তো ডেসটিনির মত ভেগে যাবে। যেমনটা ডেসটিনি এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে শত কোটি টাকা নিয়ে ভেগে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল- ঠিক সেরকম!

ইভ্যালি কি এমএলএম বিজনেস?

এই প্রশ্নটা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ার কারণ একটাই, প্রথম আলোর রিপোর্ট। প্রথম আলো ইভ্যালির ব্যাপারে যে কলামটি প্রকাশ করে, সেখানে ইভ্যালিকে এমএলএম ব্যবসার অনুরূপ নব্য ভার্সন বলে অবিহিত করে। কিন্তু এমএলএম ব্যবসা আর ইভ্যালির ব্যবসার মাঝে বিরাট পার্থক্য। এমএলএম ব্যবসায় বিক্রি করা হতো বায়বীয় প্রোডাক্ট। আর ইভ্যালি থেকে মানুষ প্রোডাক্ট গ্রহণ করছে, সেই ছবি অনলাইনে ভরি ভরি রয়েছে। এমনকি চলমান এই সংকটের সময়ও ক্রেতারা ইভ্যালি থেকে প্রোডাক্ট সংগ্রহ করতেছে। প্রথম আলো মূলত ধারণাবসত এমএলএম ব্যবসার সাথে তুলনা করেছে। কিন্তু এমএলএম ব্যবসার সাথে ইভ্যালির ব্যবসার কোনো সাদৃশ্য নেই।

ইভ্যালি কি মানি লন্ডারিং করেছে?

এই প্রশ্নটি জটিল। এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র তদন্ত সাপেক্ষেই বলা সম্ভব। যদিও প্রথম আলো বলেছে, ইভ্যালির নামে নাকি মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেলে সেটার তদন্ত হওয়া উচিত। তবে মানি লন্ডারিং এর সম্ভাবনা সেখানেই বেশি দেখা যায়, যেখানে ক্যাশ টাকার লেনদেন হয়। আর ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করলে, সেই টাকার হিসেব তো এমনিতেই থাকে। তা যেমন লেনদেনকৃত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে থাকে, তেমনই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও সংক্রিয়ভাবে পৌঁছে যায়। ফলে ব্যাংকে লেনদেনকৃত টাকা মানি লন্ডারিং করার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। আর ইভ্যালির প্রায় সমস্ত লেনদেন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমেই করা হয়। ফলে এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং এর সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। কিন্তু তারপরও তদন্ত ছাড়া এ কথা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, মালি লন্ডারিং হয়েছে কিনা!

ইভ্যালি কি ক্রেতাদের সাথে ধোঁকাবাজি করছে?

ধোঁকাবাজি বলতে আদৌত আমরা কী বুঝি সেটা জানা দরকার। মনে করুন, আমি ইভ্যালিতে একটা বাইক অর্ডার করেছি। সেই বাইকের দাম ১ লাখ টাকা। পেমেন্ট করার আগে শর্তাবলিতে লেখা ছিল, পেমেন্ট করার পর পরবর্তি ৪৫ কর্ম দিবসের মধ্যে আপনাকে বাইটা ডেলিভারি করা হবে। এছাড়া এটাও বলা আছে, কখনো কখনো এর কিছুটা বেশিও সময় লাগতে পারে। এসব শর্ত দেখে আমি বাইকের ১ লাখ টাকা পেমেন্ট করে দিলাম। এখন ৪৫ কর্ম দিবস পেরিয়ে ৯০ কর্ম দিবস হল। কিন্তু আমাকে বাইক ডেলিভারি দেওয়া হলো না। এমনকি ইভ্যালি থেকে আমাকে কোনো আপডেট জানানো হল না। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে বাইকও দিলো না, আমার টাকাও রিটার্ন দিল না। এটাকে বলে ধোঁকাবাজি।

এখন ইভ্যালিতে কোনো কিছু অর্ডার করতে গেলেই শর্তাবলিতে লেখা থাকে, ৭-৪৫ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রোডাক্টটি ডেলিভারি করা হবে। এই শর্ত মেনে অর্ডার ও পেমেন্ট করার পর এখন ১০ দিন পর থেকেই যদি বলেন, আমার অর্ডার করার এতোদিন হয়ে গেল কিন্তু প্রোডাক্ট পেলাম না। এটা ধোঁকাবাজি না। বরঞ্জ এটা আপনার বালখিল্য পনা। ইভ্যালিতে পেমেন্ট করে প্রোডাক্ট ডেলিভারি অথবা রিফান্ড পায়নি এমন ঘটনা হয়তো এখন পর্যন্ত একটিও ঘটেনি। তাই বলা যায়, ইভ্যালি এখন পর্যন্ত কোনো ধোঁকাবাজি করেনি। ভবিষ্যতে কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তো ভবিষ্যতের কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।

ইভ্যালিতে আমার অভিজ্ঞতা?

ইভ্যালি থেকে আমিও প্রোডাক্ট কিনেছি। তারমধ্যে একটি ছিল ফ্রেজার ভার্সন থ্রি বাইক। সেখানে অর্ডার করে পেমেন্ট করার পর নির্দিষ্ট সময় পর জানিয়ে দেওয়া হয়, আমার অর্ডারকৃত বাইকটি এই মুহুর্তে স্টকে নেই। সেক্ষেত্রে তারা আমাকে টাকা রিফান্ড করে দিবে। এবং তাদের কথানুযায়ী টাকা রিফান্ডও করেছে। আমার এই ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ইভ্যালি কোনো প্রতারক নয়। আশা করছি, ইভ্যালি খুব শীগ্রই তার স্বাভাবিক কর্মকান্ড শুরু করতে পারবে।

পঠিত : ১০১৮ বার

মন্তব্য: ০