Alapon

তবে কি করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে মরণ কামড় বসাতে শুরু করেছে...?


গত মাসের প্রথমদিকে মেজ মামা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলেন। মামা দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত আছেন। মামা আমাদের বাড়ি থেকে ঘুরে যাওয়ার পরের দিন থেকে আব্বা আম্মার জ্বর শুরু হল। তারপর গায়ে ব্যাথা। অন্যদিকে মামাও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। তারপর মামা করোনা টেস্ট করলেন এবং রিপোর্ট পাওয়ার পর দেখা গেল, মামার করোনা পজেটিভ।

মামার জ্বর ৩ দিন পর ভালো হয়ে গেলেও আব্বা আম্মার জ্বর আর কমে না। তারপর ৬ দিন পর ওনাদের জ্বর ভালো হয়েছে ঠিকই কিন্তু শারীরিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মাঝে আব্বা করোনা টেস্ট করিয়েছেন কিন্তু রেজাল্ট নেগেটিভ।

এবার বলি আমাদের অফিসের কথা। প্রথমে অফিসের একজন প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকটা বেহুশ হয়ে পড়ল। তারপর জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। ডাক্তার দেখানোর পর কিছু ওষুধ দিল এবং বলল, এগুলো খাওয়ানোর পরও যদি ভালো না হয় তবে করোনা টেস্ট করাবেন। সেইদিন তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে একজন ওই রাত থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ল। প্রচন্ড জ্বর, শরীরে ব্যাথা, কাসি। জ্বর ভালো হয়ে গেলেও শারীরিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারপর একে একে আরও ৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আজ আবার আরও একজন অসুস্থ হয়ে পড়ল।

এদের মধ্যে কয়েকজনের করোনা টেস্ট করানো হয়েছে, সবার রেজাল্ট নেগেটিভ। কিন্তু সিম্পটম দেখে করোনাই মনে হচ্ছে।

বিগত কয়েকদিনের সংবাদ মাধ্যম ঘেটে জানা গেল চলতি সপ্তাহে টানা চারদিন করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪০ এর বেশি। অন্যদিকে আক্রান্তের হার কিছুটা কমেছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে আক্রান্তের হার কম শোনার পর আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, টেস্ট কম আক্রান্তও কম। করোনা টেস্ট করানোর জন্য এখন ফি গুনতে হচ্ছে, যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা টেস্ট করানোর আগ্রহ কমে গেছে। যার কারণে সংক্রনের যে হার পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রকৃত সংখ্যা নয়।

অন্যদিকে আজ থেকে গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নিয়মত রহিত করা হয়েছে। আগে প্রতি দুই সিটে একজন বসত এখন পূর্বেকার মত স্বাভাবিক চলাচল। এর কারণে মানুষের মধ্যে একটা শৈথিল্য ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে যেখানে দেখা যেত মানুষ পিপিই পরে ঘুরছে আর মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস তো অবশ্যই দেখা যেত। এখন উদাসীনতার কারণে মানুষের মুখে মাস্কও কমে গেছে।

অবশ্য মানুষ উদাসীন হবে না কেন, দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেখানে বলেন, আমরা করোনা ভাইরাস জয় করে ফেলেছি, সেখানে সাধারণ মানুষের মাঝে শৈথিল্য আসাটাই কি স্বাভাবিক নয়?

কিন্তু বাস্তবতা হল, বিগত কয়েকদিনে করোনা সংক্রমের হার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি যারা গরম তত্বের আবিষ্কারক তাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, বিগত কয়েকদিনের অসহ্য গরমের মাঝেও করোনা সংক্রমন অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া সামনেই শীতের আগমন ঘটতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীত আসার আগেই যদি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না যায় তবে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।

আমাদের পাশ্ববর্তি দেশ ভারতে যেখানে দৈনিক ৭০ হাজার মানুষ করোনা সংক্রমনের স্বীকার হচ্ছে, সেখানে আমাদের সরকার কীভাবে নিশ্চিন্তে বসে করোনা বিজয়ের গান গাইছে তা আমার বুঝে আসে না। তবে কী স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে আক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারবেন না?

পঠিত : ৫৪৭ বার

মন্তব্য: ১

২০২০-০৯-০২ ১৪:৫২

User
সামিউল ইসলাম বাবু

সহমত ভাই

submit