Alapon

আসুন জেনে নেই, সফলতার মূল মন্ত্র...


একটা ঘটনা বলি। অনেক আগের ঘটনা। তখন মিশরে সুয়েজ খাল খনন করা হচ্ছিল। খাল খননের সময় একটা অদ্ভুত ঝামেলার উদয় হল। খাল খননে মস্ত বড়ো বড়ো ইঁদুর আক্রমন করল। ইঁদুর আক্রমন করে সব যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলছিল, শ্রমিকদের কাপড়-চোপড়, খাবার-দাবার সব নষ্ট করে ফেলছিল। সেইসাথে ইঁদুরের কারণে রোগ জীবানু ছড়িয়ে পড়ছিল আর শ্রমিকরা গণহারে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। আর এই ইঁদুরের কারণে খাল খননের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া অবস্থা।

কতৃপক্ষ ইঁদুর থেকে নিস্তার পেতে সব চেষ্টাই চালাল, কিন্তু কোনো ফলাফল পাওয়া গেল না। তখন সুয়েজ খাল খনন প্রকল্পের প্রধান ফার্ডিন্যান্স ডি লেসেপস পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি দিলেন, যে এই সমস্যার সমাধাণ করবে তাকে পুরষ্কৃত করা হবে।

ঠিক ওই সময় হাবিব সাকাকিনি নামে এক ব্যক্তি ভাগ্য বদলানোর উদ্দেশ্যে সিরিয়া থেকে মিশর আগমন করে। তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রীও ছিল না। কিন্তু সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করত, মিশর গেলে তার ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

সেই হাবিব সাকাকিনি পত্রিকায় এই বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ বোধ করল। তারপর সে সুয়েজ খাল প্রকল্পের প্রধানের সাথে দেখা করে বলল, আমি এই সমস্যার সমাধান করতে পারব। হাবিব সাকাকিনি বলল, এ জন্য আমাকে কিছুদিন সময় দিতে হবে। কারণ, আমাকে বেশ কিছু বিড়াল সংগ্রহ করতে হবে। হাবিবের কথা শুনে প্রকল্প প্রধান হাসলেন ঠিকই কিন্তু মনের ভিতরে আগ্রহ বোধ করলেন। তিনি হাবিবকে বললেন, ঠিক আছে, তোমাকে সময় দেওয়া হল। দেখা যাক, তুমি সফল হতে পারো কিনা!

এরপর হাবিব সাকাকিনি মিশরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে কয়েকশ বিড়াল সংগ্রহ করল, তারপর সেগুলো সুয়েজ খাল এলাকায় নিয়ে এসে ছেড়ে দিল। তার এই কাজ দেখে প্রকল্পের শ্রমিকরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। কেউ কেউ বলছিল, ‘হাতি ঘোড়া গেল তল পিঁপড়া বলে কত জল!’
কিন্তু শ্রমিক ও প্রকল্প প্রধানের জন্য এক বিষ্ময়কর দৃশ্য অপেক্ষা করছিল, তা তারা ভাবতেও পারেনি। হাবিব যখন বিড়ালগুলো ছেড়ে দিল, তখন সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, মুহূর্তের মধ্যেই সব ইঁদুর পালিয়ে গেছে।

শুধু এই একটি কাজের মাধ্যমে হাবিব সাকাকিনির পুরো ভাগ্যটাই বদলে গেল। পরে তাকে মিশর সরকার স্থায়ী চাকরি প্রদান করেছিল।

দ্বিতীয় আর একটা গল্প বলি। একবার একদল খরগোশ একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করল। সেই প্রতিযোগিতাটা হল, খাড়া একটি পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে। বিরাট আয়োজন করে সেই প্রতিযোগিতা শুরু করা হল। সেই প্রতিযোগিতা দেখতে হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হল। সেই খাড়া পাহাড় দেখে দর্শকরা বলাবলি করছিল, এই খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেউই পারবে না।

এরপর প্রতিযোগিতা শুরু হল এবং এক এক করে প্রায় সব খরগোশই ব্যর্থ হল। এক একটি খরগোশ যখন ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন উপস্থিত দর্শকরা চিৎকার করে বলছিল, এটা কেউই পারবে না! অনর্থক চেষ্টা। কিন্তু প্রতিযোগিতার একদম শেষ দিকে দেখা গেল, একটি খরগোশ পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। সেই খরগোশটি নির্ভিক চিত্তে উপরে উঠতে উঠতে এক সময় চূড়ায় পৌঁছে গেল।

পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেই বিজয়ী খরগোশটি ছিল বধির। সে দর্শকের কোনো কথাই শুনতে পায়নি। যার কারণে তার ভিতরে কোনো হতাশা বা সংশয়ও কাজ করেনি।

দুটি ঘটনার মোরাল অব দ্য স্টোরি, জীবনে বড়ো কিছু হতে চাইলে নিজের সামর্থের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করুন। কখনো ভাবতে যাবেন না, আমি তো ওমুক ভার্সিটির স্টুডেন্ট না! আমি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িনি। আমি তো ভালো ইংরেজি জানি না। এসব না ভেবে আপনি যা পারেন, যতোটুকু পারেন ততোটুকুই চেষ্টা করুন। আর পরের কথায় কখনো কর্ণপাত করতে যাবেন না। দেখবেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আর নিজ চেষ্টায় একদিন সফলতার চূড়ায় পৌঁছে গেছেন।

পঠিত : ৩৮১ বার

মন্তব্য: ১

২০২০-০৯-০২ ১৪:৪৭

User
সামিউল ইসলাম বাবু

অনেক সুন্দর লাগলো ভাই

submit