Alapon

আরব বিশ্ব ও ইসরাইলের খেলাঃ পাকিস্তান কী হবে গেম চেঞ্জার?


গত আগষ্ট মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় এবং ইসরাইলের সাথে বহু চুক্তিও সম্পাদিত করেছে। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ভিতর মিশর, জর্দান সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাজকে স্বাগত জানিয়েছে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির ফলে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আসন্ন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেক ইহুদী ভোট পাবেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরাইলের সাথে চুক্তি করার পর মিশর ও জর্দান এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। এই দুটি দেশ পূর্বেই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ওমানের এক মন্ত্রী ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলো। ইউসুফ নামক ওমানের ঐ মন্ত্রীকে সুলতানের পর ওমানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হতো। ইউসুফ নামক ঐ মন্ত্রী ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় তাকে ওমানের জনগণের বিক্ষোভের মুখে মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হলো। মধ্যপ্রাচ্যে এই ঘটনা ছিলো অত্যন্ত চমকপ্রদ। এমনিতেই সৌদি আরব জনরোষের ভয়ে ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের চুক্তি নিয়ে নিরব ছিলো। তারপর এই ঘটনা তাদের মনে আরও ভীতির সঞ্চার করেছে। আমেরিকা ও ইসরাইলের অফিসিয়াল ঘোষণা ছিলো যে, খুব শীঘ্রই আরও বহু আরব দেশ যেমন - বাহরাইন, ওমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথ অনুসরণ করে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু ওমানের এই প্রভাবশালী মন্ত্রীর জনরোষের মুখে পদত্যাগ ইসরাইল ও আমেরিকার আঙ্খাকায় জল ঢেলে দিয়েছে। এই ঘটনার ফলে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশন শেষ হওয়ার পর সৌদি যুবরাজ তার আসন্ন গোপন আমেরিকা সফর বাতিল করেছেন। বাহরাইন, ওমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথ অনুসরণ করতে এখন পুরোপুরি অক্ষম।

আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও কিছু দিন আগে হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য সফরে আসেন। কিন্তু তিনিও কোন আরব দেশকে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে রাজী করাতে পারেন নি। আরব বিশ্বের অধিকাংশ দেশ (কাতার বাদে) ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে খুবই উদগ্রীব ও উৎসাহী। কিন্তু ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিলে জনরোষ ও মুসলিম বিশ্বে নিন্দিত হওয়ার ভয় আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বাধা দিচ্ছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর ইসরাইলকে দেওয়ার পথে পাকিস্তান হচ্ছে সবচেয়ে বড় গেম চেঞ্জার। কিন্তু কীভাবে? সহজ ভাষায় বলতে গেলে এখানে পাকিস্তানের ওপর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী চাপ আছে। এই চাপ আসছে আমেরিকা ও সৌদি আরবের কাছ থেকে।

ইসরাইল তার শত্রু কম করার মিশনে নেমেছে। ইতিমধ্যে প্রায় সকল আরব রাষ্ট্র ইসরাইলের অঘোষিত বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ইসরাইলের প্রধান শত্রু তিনটি দেশ, যথা - ১। ইরান, ২। তুরস্ক, ৩। পাকিস্তান। এর মধ্যে তুরস্ক ও ইরানকে কখনোই ইসরাইল বন্ধু বানাতে পারবে না। তাই ইসরাইল এখন অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল পাকিস্তানের দিকে ফোকাস করছে। এর কয়েকটি কারণ আছে, প্রথমত পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী। দ্বিতীয়ত পাকিস্তানের জনগণ তাদের ধর্ম ইসলামের জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত। এই দুটি জিনিসের জন্য ইসরাইল ও তার মিত্র আমেরিকা চায় পাকিস্তান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান করুক।

ইসরাইলকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী বিরোধিতা করবে ভারত। হ্যাঁ অবাক করা হলেও এটাই সত্য। পাকিস্তান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না তার মানে ইসরাইলকে পাকিস্তান শত্রু মনে করে। আর ভারতের কাছে তার জাতীয় দুশমন পাকিস্তানের দুশমন ইসরাইল হলো প্রাণের বন্ধু। ভারত ইসরাইলকে পাকিস্তানের ভয় দেখিয়ে ইসরাইলের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা নিয়ে থাকে। যদি পাকিস্তান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে ভারত তার প্রাণের বন্ধু ইসরাইল ও তার সহায়তাকে হারাবে। তাই ভারত কখনো চায় না ইসরাইলকে পাকিস্তান স্বীকৃতি দান করুক।

সৌদি আরব ও আরব বিশ্বের অধিকাংশ দেশ চায় পাকিস্তান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করুক। এর বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী। দ্বিতীয়ত সৌদি আরবের সেনাবাহিনীকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এবং সৌদি আরবের নিরাপত্তা অনেকটা পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। যদি পাকিস্তানের পূর্বে সৌদি আরব ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে সৌদি আরব পাকিস্তানের নিরাপত্তা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে। তৃতীয়ত সৌদি আরবে প্রচুর পরিমাণে পাকিস্তানি বসবাস করে যাদের সাথে সৌদি জনগণের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যদি পাকিস্তান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের অধিকাংশ দেশের জনগণ চরমভাবে হতাশ হবে। যা সৌদি আরব সহ অধিকাংশ আরব দেশের জনরোষের আশংকা কমাবে। চতুর্থত মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ সুন্নী প্রধান দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। যদি তারা সুন্নী প্রধান দেশ পাকিস্তানের পূর্বে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে তারা মুসলিম বিশ্বে জাতীয় মুনাফিক হিসেবে ঘোষিত হবে। তাই এখন আরব বিশ্ব ও ইসরাইলের সামনে এখন পাকিস্তান গেম চেঞ্জার।

পাকিস্তানের ওপর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দান করার প্রচুর চাপ রয়েছে। আর এই পুরো চাপটা সামলাচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যদি ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইসরাইল, আমেরিকা ও সৌদি আরব যে কোন কিছু করতে পারে। আর এই কাজে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহৃত হতে পারে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইসরাইল ইস্যুতে এমন এক বক্তব্য প্রদান করেছেন যা তাকে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে রক্ষা করবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন - আমি কখনোই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবো না, যদি আমি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেই তাহলে আমি আল্লাহকে কী মুখ দেখাবো। এই বক্তব্য এতটাই তাৎপর্য পূর্ণ যা আরব বিশ্ব ও ইসরাইলের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে।

সর্বোপরি পাকিস্তান কোন দিন ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না। ফলে আরব বিশ্বের অধিকাংশ দেশও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার সাহস করবে না।

- jannat

পঠিত : ৪৭৬ বার

মন্তব্য: ০