Alapon

এডওয়ার্ড স্নোডেন এবং কিছু কথা...


আমেরিকান হুইসেল ব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেন আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। স্নোডেনের আলাপের শুরুতে, গুরু হুইসেল ব্লোয়ার মরদেকাই ভানুনুকে স্মরণ করে নিচ্ছি।


ভানুনু এক বিস্ময়, তার গল্পও চমকপ্রদ! ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা যখন ছোট দেশটিকে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে বড় দানবের মতো অপ্রতিরুদ্ধ করে তুলছিল, সেই সময়ের ঘটনা। "ইহুদী কন্যা" শব্দ যুগল যে মায়ার জাদু, রূপের আবেদন, নারীর ছলনা - এসবের মিশেলে কী যেনো এক বিশেষ রহস্যময় কিছু বোঝাতে বলা হয়, তার বাস্তব উদাহরন আছে মরদেকাই ভানুনুর ঘটনায়। তবে, সব কিছু ছাপিয়ে, বিশ্বে শান্তির জন্যে, মানব জাতির কল্যানের জন্যে ধূর্ততম-নিষ্ঠূরতম প্রতিপক্ষকে ভয় না করে, নিজের জীবন বাজি রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মরদেকাই ভানুনু।


তারই দেখানো পথে হুইসেল ব্লোয়িং করে, আমাদেরকে কৃতজ্ঞ করেছেন এডওয়ার্ড স্নোডেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, চেলসি (ব্র্যাডলি) ম্যানিংরা। সবাইকে কৃতজ্ঞচিত্তে অভিবাদন জানাই।


২০২০ বছরটি যেমন ইতিহাসে প্যানডেমিকের জন্যে লাল কালিতে দাগানো থাকবে, তেমনি নানা ঘটনাবহুলতার জন্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি বছর ছিল ২০১৩। এই ২০১৩ সালের এক সানি মর্নিং এ এডওয়ার্ড স্নোডেন চাকুরি ছেড়ে হংকং উড়াল দেন। চাকুরি বলতে, আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সীতে উনাকে চুক্তিতে কাজে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে নাগরিকদের উপর গোপন নজরদারির বিষয়টি তার কাছে আপত্তিকর মনে হয়েছিল। মৃদু আপত্তিও নাকি তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই কর্মসূচীর মাত্রা এতো বিস্তৃত যে, রাষ্ট্র স্বয়ং ঐ বিরাট যজ্ঞের পৃষ্ঠপোষক, সামান্যে তার প্রতিকার আশা করা যায় না বলে বুঝে যান।


এডওয়ার্ড স্নোডেন নিজের জীবন-জীবিকার মায়া ত্যাগ করেন। এই অপকর্ম ফাঁস করার সিদ্ধান্ত নেন। নাগরিকদের উপর নজরদারির বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের জন্যে পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট উনি কপি করে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। বাছাই করা কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে সেইসব ডকুমেন্ট তুলে দেন। তার দেয়া ডকুমেন্ট প্রাথমিক যাচাইয়ের পর আটলান্টিকের দুই প্রান্তের দুই মেজর মিডিয়া "দি ওয়াশিংটন পোস্ট" ও "দি গার্ডিয়ান" এর প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। আমেরিকা ও ইউকেতে যেনো ভূমিকম্পের ধাক্কা লাগে।


কিন্তু, বড় অপরাধীরা যা করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঠিক সে পথেই হাঁটে; তারা অপরাধ ফাঁস হওয়ায়, সেই অপকর্ম বন্ধ না করে, বরং ফাঁসকারীকে শায়েস্তা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অপরাধতো স্নোডেন করেছেন, সেটাকে বড় করে তুলে। নথি চুরি, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলা, রাষ্ট্রীয় তথ্য পাচার - এসবের অভিযোগ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে। প্রকাশের আগে অনুমান করতে না পারলেও, মিডিয়ায় তথ্য প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া দেখে স্নোডেন বিপদ বুঝে যান। একদিকে উনি মস্কোতে পালিয়ে বাঁচতে চান, অন্যদিকে আমেরিকা তার পাসপোর্ট বাতিল করে। তবে, অন্তত শেষ রক্ষা হয়; পাসপোর্ট বিহীন স্নোডেন মস্কো এয়ারপোর্ট টার্মিনালে একমাস কাটান। পরে রাশিয়া তার "আশ্রয় প্রার্থনা" মঞ্জুর করে। এক বছর করে আশ্রয় ভিসা এক্সটেনশন নিয়ে স্নোডেন এ পর্যন্ত রাশিয়ায় কাটিয়েছেন।


আজকের দিনটি এডওয়ার্ড স্নোডেন ও নাগরিকদের উপর রাষ্ট্রীয় গোপনীয় অপকর্মগুলোর বিরোধীদের জন্যে আনন্দের দিন। আজ নাইন্থ সার্কিটের ইউএস কোর্ট অব আপীল রায় দিয়েছে, স্নোডেন যে নাগরিকদের উপর টেলিকম নজরদারি ফাঁস করেছিলেন, সেই কার্যক্রমটি আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ছিল। এবং, এই মামলায় সরকারের কর্মকর্তারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন।


অতো উচ্ছাসের কিছু নেই অবশ্য; এই রায়ে স্নোডেন যে কর্মসুচিকে অন্যায় বলতে চেয়েছিলেন, তার আইনি একটি স্বীকৃতি মিললো মাত্র। কিন্তু রাষ্ট্র নাগরিকদের উপর গোপন নজরদারি বন্ধ করে দিবে বলে আশা করার কোনো কারণ নেই। রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরি, রাষ্ট্রী নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলা - এসব অভিযোগ সামনে রেখে আমেরিকা স্নোডেনকে "বাড়াবাড়ি"র কারণে উচিত শিক্ষা না দিয়ে ছাড়বে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই।


হুইসেল ব্লোয়াররা রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্যায় ও মিথ্যাচারগুলো প্রকাশ করেন, আশা করেন গোপন অন্যায় প্রকাশ পেলে অন্যায় হয়ত বন্ধ হবে, কিন্তু তা হচ্ছে না। ভানুনু, স্নোডেন, অ্যাসাঞ্জ-ম্যানিংরা নিজেদের জীবন বড় যন্ত্রণাদায়ক পরিণতিতে ঠেলে দিয়ে হলেও অনেক গোপন অপরাধ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রগুলো তাদের অপরাধ হতে নিবৃত হয় নাই!


তা হলে, প্রতিকারের পথ কী?

- সংগৃহিত

পঠিত : ৩৯৯ বার

মন্তব্য: ০