Alapon

আসুন জেনে নেই, রিযিক বৃদ্ধির সহজ উপায়...


রিযিক বৃদ্ধির আমল হিসেবে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার ব্যপারে প্রথম জেনেছিলাম খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহ স্যারের একটা লেকচার থেকে । কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করলে রিযিক কি ভাবে বাড়ে এ ব্যপারটা তখন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না ।

সেদিন আলমারির কাপড় গোছাতে গিয়ে খেয়াল করলাম আমাদের বাইরে পরার বেশিরভাগ কাপড়ই নানা সময়ে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে হাদিয়া স্বরুপ পাওয়া । ঈদে আমরা নতুন যে জামা কাপড় পরি গত বেশ কিছু বছর ধরে বলতে গেলে তার সবগুলোই বাংলাদেশ থেকে হাদিয়া পাওয়া । আর হাদিয়া পেয়েছি বলেই নিঃসন্দেহে নিজের টাকা খরচ করে এত বছর কিনে নিতে হয়নি আমাদের ।

তারপর আরও মনে হতে লাগলো, ছোট ও বড় উভয় বেলায় দেখতাম আত্মীয় স্বজনরা দেখা করতে আসলে কেউ খালি হাতে আসতো না । হাতে বিভিন্ন সিজনাল দামী দামী ফল, বিস্কুটের টিন, চানাচুর, কেক, মিস্টি এগুলো আনতো । আবার গ্রাম থেকে কেউ বেড়াতে আসলে বা ডাক্তার দেখাতে আসলে সাথে করে আতপ চাল, পিঠা বানানোর চালের গুঁড়ো, নারিকেল, সুপারি, ঘরের হাঁস-মুরগীর ডজন ডজন ডিম, পুকুরের মাছ, আচার, আম-কাঁঠাল ইত্যাদি নিয়ে আসতো । বছর জুড়ে এসব খাবারগুলো বেশিরভাগই আত্মীয় স্বজনদের বদৌলতে খাওয়া হতো ।

এরপর অনেক সময় টাকা পয়সা ধারের প্রয়োজন হলে প্রথমে নিকট আত্মীয়রাই এগিয়ে আসতেন । বিয়ে শাদীর জন্য সুপাত্র পাত্রী খুঁজে নিয়ে আসতেন । আবার বিয়ে ঠিক হলে নগদ অর্থ উপহার হিসেবে দিয়ে সাহায্য করতেন । এছাড়া কেউ চাকরী খুঁজছেন শুনে বিভিন্ন আত্মীয়রা চাকরীর জন্য পথ বাতলে দিচ্ছেন কিংবা পরিচিত কারও নিকট সুপারিশ করে দিচ্ছেন তো ব্যস চাকরি সহজে হয়ে গেলো । আবার আত্মীয়দের মধ্যে কেউ হয়তো ডাক্তার । কারও শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চিকিৎসক আত্মীয়র সহায়তায় মোটা অংকের টাকা বেঁচে যেতেও দেখেছি ।

এছাড়া পরিবারের কেউ ইন্তেকাল করলেন, আত্মীয় স্বজনরা ঝাঁপিয়ে পড়লেন মৃত ব্যক্তির পরিবারের সাহায্যর । নিজের গাঁটের টাকা খরচ করে দাফনের ব্যবস্থা করা, মৃতের পরিবারের প্রত্যেক বেলায় বেলায় খাওয়ার ব্যবস্থা করা আরও কত কি ।

আমরা মনে করি রিযিক বৃদ্ধি মানে শুধু মাসিক আয়ে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে আসা অথচ বছর জুড়ে অনেক আর্থিক খরচ বেঁচে যাওয়ার উপকারিতাটা আমরা চোখে দেখিনা ।

তারপর শুধু খাওয়া খাদ্য বা অর্থই রিযিক না । মানসিক শান্তিটাও রিযিক যেটা আজ আমরা হারাতে বসেছি অনেকটাই আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্কের বিদ্বেষ থেকে । সম্পর্কগুলোতে মায়া মহব্বত কমে গিয়ে জায়গা করে নিয়েছে লাভ-লোকসানের খতিয়ান । সবাই খালি জিততে চায়, লাভবান হতে চায় । ফলাফল, সম্পর্কের চির ধরে এক সময় তৈরী হয় দুরত্ব, তৈরী হয় মানসিক অশান্তি যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও ।

এখন ডিজিটাল যুগ । মানুষও সেই তালে সুপার ডিজিটাল । টেকনোলজির ব্যবহারে মানুষের সময়ের বারাকাহ্ হবার কথা ছিলো কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আজ তা মানুষকে চরম ব্যস্ত জীবনে পর্যবসিত করেছে । নিজের পরিবারের জন্য সময় হয়না আমাদের আর আত্মীয় স্বজন তো বহু দুরের ব্যপার ।

সত্যটা হলো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার বিধানের অন্যথায় কখনও শান্তি আসেনা । এ ব্যপারটা আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবো তত উত্তম ।

আর পরিবার বলুন কিংবা আত্মীয়, যদি কারও কাছ থেকে কষ্ট পান, আঘাতে জর্জরিত হয়ে যান তবুও সম্পর্ক ছেদ করবেন না । দুর থেকে খোঁজ খবর নিবেন । সাহায্য লাগলে দুর থেকে করার চেষ্টা করবেন, না পারলে বেশি বেশি দুআ করবেন । হাদীসে আছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী কখন জান্নাতে প্রবেশ করবেনা । ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার সম্পর্কগুলো ছেদ করে অনন্তকালের জান্নাতের সুযোগটা হারানো বোকামী ছাড়া আর কিছু নয় ।

নয় কি ?

“ এবং যারা আল্লাহর দেওয়া (ইবাদত করার) অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে (আত্মীয়তার) সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।”

[ সূরা আর-রাদ, ২৫ ]

পঠিত : ৪৩২ বার

মন্তব্য: ০