Alapon

হারাম সম্পর্ক যেভাবে জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে...


হারাম সম্পর্কে দ্বীনি ফ্লেভার দেওয়া হলো নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা। অনেকটা অ্যালকোহল সেবনের পূর্বে "বিসমিল্লাহ" বলে নেওয়ার মতো! আপনি একজন গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলবেন, তার সাথে বিয়ের স্বপ্ন বুনবেন, তাকে দেখতে চাইবেন, ভালোবাসাবাসির চিঠি লিখবেন! আবার তাকে সালাতের জন্য যেতে বলবেন, পর্দা করতে বলবেন, দ্বীন শিক্ষা দিবেন, দাঁড়ি রাখতে বলবেন, জামাআতে যেতে বলবেন! গন্ডগোল লাগছে না? মনে হচ্ছে না, ইসলামিক ভাবে মিলছেনা বিষয়টা?

এরকম সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের অনেক ভাই-বোন। তারা ভাবে হয়তো সম্পর্কের একটা লিমিটের মধ্যে থাকলে তা হারাম হয় না। খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না হলে, দ্বীনের দাওয়াহ দিলে তা হালাল। কিন্তু দেখা যায়, এই দাওয়াহ দিতে গিয়েই আরও নতুন সমস্যার আবির্ভাব ঘটে।
তাকে সালাতের দাওয়াহ দিতে গিয়ে নিজের সালাত ছুটে যায়!
তার জীবন ব্যবস্থা বদলাতে গিয়ে নিজের জীবন বদলে যায়!
তাকে ভালোবাসতে গিয়ে রব্ব কে ভুলে যাওয়া!

এরূপ আরও অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু এগুলোকে খুব একটা গায়ে মাখেনা তারা। তাদের মতে তাদের মধ্যকার ভালোবাসা স্বর্গ থেকে আসছে! অথচ এই ভালোবাসা আসছে শয়তান থেকে! সত্যিকার অর্থে এই ভালোবাসা কে ভালোবাসা বলে না৷ এটা একটা মোহ। বিয়ের পর এই মোহ কেটে যায়। আর তখনই আস্তে আস্তে সম্পর্ক তিক্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সম্পর্কগুলো বিয়ে পর্যন্ত যায় না। তবে বিয়ে হলেও ভালো থাকা বলতে যা বুঝি আমরা সেই ভালো থাকা তাদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকে।

অনেককে বলতে শুনেছি, "সে আমার জীবনে আসার পর আমাকে সালাত পড়তে উৎসাহ দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমি দ্বীন শিখেছি।"
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা)-র নৈকট্য লাভ করতে চাচ্ছে হারাম পন্থায়?! এটাই কি বুঝাতে চায় তারা? আমি একটা কাজ করলাম আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) কে সন্তুষ্ট করার জন্য। কিন্তু এর মূলে যা আছে তা হারাম। আমি তাঁর অবাধ্য হয়ে তাঁরই নৈকট্য লাভ করতে চাচ্ছি! এটা কি সম্ভব? হারাম ছাড়তে শিখতে হবে। হারামে নিমজ্জিত থেকে হালাল কিছু, ভালো কিছু পাওয়ার আশা করা ঠিক না।

অনেকে হারাম সম্পর্কের মধ্যে থেকে ওয়াদা করে। একে অপরকে বিয়ে করার ওয়াদা। তারপর সম্পর্ক ছিন্ন না করার নতুন অযুহাত আসে। তা হলো, ওয়াদা ভঙ্গ করলে মুনাফিক হয়ে যাওয়ার ভয়! অথচ কোন সিচুয়েশনে থেকে ওয়াদা করেছে, এই ওয়াদা ভেলিড কিনা তা নিয়ে ভাবার সময় হয়না, ইচ্ছা জাগেনা!

পরিবার মানতে নাও পারে এই ভয়ে অনেকে বিয়ে করে নেয়। লুকিয়ে বিয়ে করা যাকে বলে। কিন্তু অনেকের বিয়ে টিকে না! ওই যে বললাম 'মোহ'। যখন মোহ কেটে যায় তখন আর তাকে ভালো লাগেনা৷ তারপর ইগনোর করা শুরু হয়, পরিবার জানেনা বিধায় কোনো কিছু করার থাকেনা। ফলাফল ডিভোর্স!! এমন কতো গল্প আছে। কিছু আমরা জানি, আর কিছু আমাদের অজানা।

আমি দ্বীনহীন ভাই-বোনদের গল্প বলছিনা। আমি দ্বীনদার দের কথা বলছি। আপাতদৃষ্টিতে তারা দ্বীনদার কিন্তু তাদের কর্মকান্ড দ্বীনদারিতা প্রমাণ করেনা। বরং অন্য কিছু বুঝায়। এই ভুলগুলো অহরহ হচ্ছে। শয়তানের ধোঁকায় পরে, বিয়ে করতে না পেরে, একজন সঙ্গীর খোঁজ করতে করতে বারবার ভুল করছে মানুষ। যারা ফিরে আসতে পারে, আলহামদুলিল্লাহ তাদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তম প্রতিদান দান করুক। কিন্তু আফসোস হয় তাদের জন্য যারা ফিরে আসতে পারে না। অদ্ভুত হলেও সত্যি, অনেকে চায় না তথাকথিত প্রিয় মানুষটিকে ছাড়তে, গুনাহ থেকে রেহাই দিতে, হারাম থেকে মুক্তি দিতে। তাদের পার্টনার যখন সব বুঝতে পেরে সরে আসতে চায় তখন নানা ভাবে হারাম সম্পর্ককে হালাল করার চেষ্টা করে৷ কথা কম বলবো, দেখা করবোনা, আগে বিয়ে করে ফেলি পরে সবাইকে জানাবো ইত্যাদি আইডিয়া আসে তাদের মস্তিষ্কে।

ধরুন একজন চোর তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে চুরি করা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। আপনি কি তাকে বলবেন, "না তুমি চুরি করো। হালাল ভাবে চুরি করো।" অবশ্যই বলবেন না৷ চুরি আবার হালাল হয়?! তাহলে সেই ভাই-বোনদের কাছে জানতে ইচ্ছা করে কেনো তারা হারাম থেকে একজনকে মুক্ত করতে চায় না? একজন মানুষ তার ভুল বুঝতে পেরে, তার স্রষ্টাকে চিনতে পেরে যখন ফিরে আসতে চাচ্ছে তখন আমি বা আপনি কোন সাহসে তাকে হারামে আঁটকে রাখতে চাইবো? কেনো তাকে নানা রকম পন্থা অবলম্বন করে দুর্বল করতে চাইবো, ব্ল্যাক মেইল করবো? আর এটা কেমন ভালোবাসা যেই ভালোবাসা হারামে জড়িয়ে রাখতে চায়, জাহান্নামে নিয়ে যেতে চায়? পায়ের তলায় পিষে ফেলা উচিত এই ভালোবাসা নামক অপবিত্র অনুভূতি।

হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ প্রতিটি আদম সন্তানের মধ্যে যিনার একটি অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা সে অবশ্যই করবে। সুতরাং দৃষ্টি হচ্ছে চোখের যিনা, প্রেমালাপ হচ্ছে জিহবার যিনা এবং অন্তরের যিনা হচ্ছে তা ভোগ করার আকাঙ্খা, আর গুপ্তস্থান তা সত্য কিংবা মিথ্যায় পরিণত করে।
[বুখারী ৬২৪৩, মুসলিম ২৬৫৭, সুনানে আবু দাউদ ২১৫২]
কথা বলা যিনা, তাকে নিয়ে ভাবা যিনা, তাকে দেখা যিনা, প্রত্যেকটি পদক্ষেপে যিনা। তবুও হুঁশ ফিরে না৷ জেনেও না জানার ভান ধরে থেকে বারবার চেষ্টা করে অন্য মানুষটিকে হারামের মধ্যে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রাখার।

বিয়ের পূর্বে গায়রে মাহরামের সাথে বিয়ের উদ্দেশ্যেই হোক বা অন্য কারণেই হোক, যে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। যার নূন্যতম ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাকে জিজ্ঞেস করলে সেও বলবে এটা হারাম। তাহলে কিসের জন্য আমরা হারামকে হালাল করতে চাই? আমরা কি আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা) কে ভয় করিনা? আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) বলেছেন,
"আর যিনার ধারের-কাছেও যেও না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।" (বানী ইসরাঈল, ১৭:৩২)

আমরা মুসলিম। আমাদের পোশাক ভিন্ন। এই পোশাক পরে যখন আমরা যিনা করি তখন মানুষ আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলার আগে ইসলামের দিকে আঙ্গুল তুলে। লেবাসকে সম্মান করতে শিখা উচিত। এই লেবাস আপনার, আমার পরিচয় বহন করে। এমন কিছু করা উচিৎ নয় যার জন্য অন্যরা উম্মাহকে দোষারোপ করার সুযোগ পায়৷ আজ নিকাব করে, পাঞ্জাবি টুপি পরে বিভিন্ন অপকর্মে আমরা জড়াচ্ছি দেখেই অনেক ভাই-বোনকে কটুবাক্য শুনতে হয়। ইসলামের দিকে আঙ্গুল তুলার সুযোগ পায় মানুষ। যখন আমার লেবাস বলছে আমি প্র্যাকটিসিং অথচ আমার এক্টিভিটি প্রমাণ করছে আমি পথভ্রষ্ট! তখনই মানুষ 'ভন্ড' বলার সুযোগ পায়।
নিজের দৃষ্টি, নিজের নফস, নিজের আখলাক হেফাজত করুন। হারাম ছেড়ে দিয়ে হালালকে আঁকড়ে ধরুন। নিশ্চয়ই আপনি পুরষ্কৃত হবেন।

পঠিত : ৫৫৫ বার

মন্তব্য: ০