Alapon

তুরস্ক কি পারবে তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে...?


গত ১০০ বছরের ইতিহাসে তুরস্ক হচ্ছে প্রথম ও একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যারা নিজেদের সমরাস্ত্র উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখছে। এরদোগান নিয়ে তর্ক বিতর্ক আছে সত্যি, তবুও তুরস্কের এই প্রযুক্তিগত উত্থান মধ্যপ্রাচ্য, তথা গোটা মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

সৌদি আরবের সামরিক বাজেট প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি, পরাশক্তি ভারতের চাইতেও বেশি। কিন্তু রফতানি নির্ভর সৌদি সামরিক শক্তি যে সম্ভব হলে সেনাবাহিনীর টয়লেট পেপার ও বিদেশ থেকে আমদানি করে।

এত বিশাল বাজট সত্ত্বেও আমেরিকা সামরিক সাপ্লাই বন্ধ করলে সৌদিরা এক মাসের বেশি যুদ্ধ চালাতে পারবে কিনা সন্দেহ। এজন্য এফ-১৬/১৫ যুদ্ধবিমানের বিশাল বহর কিনে রেখেও এরা ইরানি ড্রোনের ভয়ে তটস্থ থাকে।

এই সামরিক নির্ভরতার বেড়াজালে আটকে থেকে নিজেদের ফরেন পলিসিকে এরা কখনোই গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত করতে পারেনি, আর চাইলেও পারবে না।

বাদবাকি সব আরব দেশেরও একই হাল। ফিলিস্তিন নিয়ে সামান্য কথা বলা তো দূরে থাক, সৌদির চেয়ে অপেক্ষাকৃত ৫ গুণ ক্ষুদ্র সামরিক বাজেটের ইসরায়েলের সামনে সবগুলো আরবদেশ মিলে চোখ তুলে তাকাতে ভয় পায়।

অন্যদিকে তুরস্ক হাঁটছে সম্পূর্ণ বিপরীত পথে।

যদিও এখনো শতভাগ স্বনির্ভর হতে বেশ খানিকটা পথ বাকি, এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের জন্য পশ্চিমের উপর নির্ভরশীল, তবুও গত দুই দশকে ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে তুরষ্ক যে অবিশ্বাস্য চমক দেখিয়েছে, সময়ের স্বল্পতা বিবেচনায় পৃথিবীর কোন এই অসাধ্য সাধন করতে পারেনি।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০০ টি সমরাস্ত্র উৎপাদক কোম্পানীর তালিকায় তুরস্কের 'আসেলসান', 'হাবেলসান', 'বায়কা' ও 'রকেটসান' সহ ৭ টি কম্পানী ইতিমধ্যে তালিকাভূক্ত হয়েছে। ৭৪ বিলিয়ন ডলারের তুর্কী ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি শুধু নিজস্ব উৎপাদন নয়, ২০১৯ সালে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র পৃথিবীর ৩০ টির দেশে রপ্তানি করেছে।

আমাদের বাংলাদেশ ও প্রায় কয়েকশত কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে তুরস্ক থেকে। সাবমেরিন, মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, ক্রুজ মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স স্যাম, এট্যাক হেলিকপ্টার থেকে হাই অল্টিচুড কম্ব্যাট ড্রোন... কোন কিছুতেই হাত দেয়া বাকি রাখেনি তুর্কিরা।

তুরস্কের এম্বিশন এখন পৃথিবীর প্রথম ১০ টি সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় নাম লেখানো।

এ ব্যাপারগুলো শুধু অর্থের ক্ষমতায় সম্ভব হয়নি। যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব, মেধা-পাচার রোধ ও অদম্য জাতীয়তাবাদী চেতনা এই অসাধ্যকে সাধন করেছে। অনেক ত্যাগ ও করতে হয়েছে তুর্কিদের, আসেলসান কম্পানীর বেশ কয়েকজন মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। সেলজুক বায়রাখতারের মতন বিশ্বসেরা ইঞ্জিনিয়াররা আমেরিকায় ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে নিজ দেশকে আগানোর স্বপ্ন দেখেছে।

এসবের জোরেই তুর্কিরা এখন বিলিয়ন ডলারের তেলের রিজার্ভ না থেকেও নিজ মেরুদণ্ডের দাড়িয়ে আমেরিকা রাশিয়ার সাথে বার্গেইন করতে শিখেছে। ইউরোপীয় দাসত্ব থেকে বেরিয়ে এই প্রথম তুর্কীরা নিজেদের শার্টের কলার খুলে কথা বলতে শিখেছে।

যদিও পথটা তুরস্কের জন্য মোটেই সহজ হবে না। তুরস্কের সামরিক ও প্রযুক্তিগত উত্থান ঠেকানোর জন্য সবধরনের তোড়জোড় শুরু করেছে ইউরোপীয়রা। ফিনল্যান্ড, জার্মানি এমনকি যুক্তরাজ্য নানান ছুতোয় নিজেদের ডিফেন্স কোম্পানিগুলোকে যেকোন তুর্কি কম্পানীর সাথে সহযোগিতা নিষিদ্ধ করেছে।

তুরস্কের পঞ্চম প্রজন্মের স্টিল্থ ফাইটারের জন্য জেট-ইঞ্জিন উৎপাদনে সহায়তা করার কথা ছিল বৃটিশ রোল-রয়েস কম্পানীর, সেটিও মওকুফ করেছে। এমনকি তুরস্ক পাকিস্তানের কাছে ৩০ এট্যাক হেলিকপ্টার বিক্রয় চুক্তির ওই কপ্টারের ইঞ্জিন নিয়ে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেয়, কারণ ওই ইঞ্জিনের প্রযুক্তি তুরস্ক আমেরিকান একটি কম্পানীর কাছ থেকে লাইসেন্সের ভিত্তিতে সংগ্রহ করেছিল।

তবুও কেন জানি মনে হচ্ছে তুর্কিরা অদম্য। আবার নিজেদের অটোমান জাত চেনাবে এরা।

পোস্ট ক্রেডিট: Naeem Hasan

পঠিত : ৪৮১ বার

মন্তব্য: ০