Alapon

আজ মহানায়ক সালমান শাহের প্রয়ান দিবস...


সালমান শাহ। বাংলাদেশে সিনেমা জগতের সবচেয়ে পরিচিত ও আলোচিত নাম। একটা প্রবাদ আছে, ‘তিনি আসলেন, জয় করলেন, আবার চলে গেলেন।’ এই প্রবাদটির সাথে যেন সালমান শাহর জীবনের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন সালমান শাহ। আর প্রথম ছবি দিয়েই তিনি বাজিমাত করে ফেললেন। এক ছবিতেই সারা বাংলাদেশ এক নতুন তারকাকে খুঁজে পেল। আর সেই তারকাকে পুঁজি করে ততকালীণ ভেঙ্গে পড়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেল।

প্রাথমিক জীবন
সালমান শাহ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সালমান শাহ নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সালমান শাহ সিলেটে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করলেও বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব কাটে খুলনাতে। খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে সালমান শাহর পরিবার সেখান থেকে তারা ঢাকায় স্থানান্তর হয় এবং ঢাকার আরব মিশন স্কুল থেকে সালমান ম্যাট্টিক পাশ করে। ১৯৯২ সালে সালমান শাহ খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরাকে বিয়ে করেন। মূলত সামিরা ছিলেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। সালমান শাহর দুটো সিনেমায় সালমান শাহর পোশাক বাছাই করেন সামিরা। সেখান থেকে পরিচয়, তারপর পরিনয় অতঃপর বিবাহ। যদিও এই বিবাহই তার জীবনে কাল হয়ে এসেছিল কিনা তা আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

অভিনয় জীবন
যদিও সালমান শাহ-এর প্রথম সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৯০ সালে। কিন্তু সালমান অভিনয় শুরু করেন আরও আগে থেকেই। বিটিভিতে সালমান শাহ অভিনীত প্রথম নাটক প্রচারিত হয় ১৯৮৫ সালে। তখন থেকেই সালমান শাহ অনিয়মিত অভিনয় করতেন, মডেলিং করতেন এবং বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেন। এরপর সালমান নজরে আসে বিখ্যাত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের। তখন সোহানুর রহমান সোহান বলিউডের সাড়া জাগানো সিনেমা ‘কিয়ামত তক কিয়ামত’- এর বাংলা রিমেক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি এক জোড়া নতুন মুখ খুঁজছিলেন। তিনি নায়ক হিসেবে বাছাই করলেন, সালমান শাহকে। আর নায়িকা হিসেবে বাছাই করলেন মৌসুমীকে। মৌসুমীরও এই সিনেমাই প্রথম সিনেমা ছিল।

যদিও ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা রিমেক ছিল, কিন্তু সালমান ও মৌসুমী জুটির অনবদ্য অভিনয় বক্স অফিসের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলল। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এমন ব্যাবসা সফল সিনেমা আর একটিও হয়েছে কিনা সন্দেহ! সেই সিনেমার জনপ্রিয়তা আর ৩০ বছর পরও রয়েছে। সাধারণ মানুষ এখনো সেই সিনেমার প্রশংসা করে। আর এই সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলা সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রি পেয়ে গেল এক উজ্জল তারকাকে। তারকা বললে হয়ত কমই বলা হবে, তিনি বাংলা সিনেমার সূর্য হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার আলোয় আলোকিত হয়ে বাংলা সিনেমা জগত যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল।

কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার পর তিনি মোট ২৭ টি সিনেমায় অভিনয় করেন। যার অধিকাংশই ব্যবসা সফল সিনেমা ছিল।

জনপ্রিয়তার কারণ

বর্তমান সময়ের মত তখনও আমাদের দেশের তরুণেরা বলিউডের নায়কদের ফলো করতো, তাদের মত স্টাইল করার চেষ্টা করত। কারণ, বাংলা সিনেমা জগতে তেমন অ্যাডভান্স পর্যায়ের স্টাইলিশ নায়ক ছিলো না বললেই চলে। যার কারণে তরুণরা বাধ্য হয়ে বলিউডকে ফলো করত। ঠিক এমন একটা সময়ে নিজস্ব স্টাইল নিয়ে সিনেমা জগতে আর্বিভূত হন সালমান শাহ। বলা হয় তার স্টাইল সেন্স ছিল সময়ের চেয়ে কয়েকযুগ এগিয়ে। আর অভিনয় ছিল সাবলীল। এ কারণেই সালমান শাহ খুব অল্প সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

নিভে গেল আলো

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আজকের এই দিনে পুরো বাংলাদেশ যেন মুহুর্তের জন্য ধমকে যায়, যখন সবাই জানতে পারে সালমান শাহ মারা গেছে। আজকের এই দিনে সালমান শাহকে তার ইস্কাটনের বাসায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সালমান শাহ এর স্ত্রী সামিরা বলেছিলেন, সালমান আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সালমানের মা বলেছিলেন, সালমানকে হত্যা করা হয়েছে। আর হত্যা করেছে সালমানের স্ত্রী সামিরা। এ নিয়ে দু পক্ষেরই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শোনা যায়। আজ সালমান শাহর প্রয়ানের ২৪ বছর পূর্ণ হল, কিন্তু সেই রহস্য আজও অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।

যাই হোক, আশা করছি সেই রহস্যও একদিন উন্মোচিত হবে। প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হোক আর নাই হোক সালমান শাহ বেঁচে আছেন লক্ষ মানুষের বুকে। টিভিতে আজও সালমান শাহ এর সিনেমা আগ্রহ ভরে দেখি। বাংলা সিনেমার মহানায়ক সালমান শাহ বেঁচে আছেন তার ভক্তদের মাঝে।

পঠিত : ৪৮৮ বার

মন্তব্য: ০