Alapon

বিন সালমান যেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফকেও হার মানালো!


হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। ইতিহাসে যিনি প্রতাপশালী শাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের শাসনকালীণ সময়ে ইসলামের দাওয়াত পশ্চিম থেকে পূর্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। হাজ্জাব বিন ইউসুফের শাসনকালীণ সময়েই ভারতের নির্যাতিত মুসলিমদের উদ্ধারে অভিযানে এসেছিলেন মুহাম্মদ বিন কাসিম। কিন্তু তারপরও তার এতোসব অর্জন তার নিষ্ঠুরতার কাছে মলিন হয়ে গেছে।

হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিষ্ঠুরতা থেকে আল্লাহর রাসূলের সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীরাও রেহাই পায়নি। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের জুলুমের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. বলেছিলেন, যদি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের পূর্বেকার সকল শাসকের জুলুম এক পাল্লায় রাখা হয়, আর অপর পাল্লায় হাজ্জাজের জুলুম রাখা হয় তবে হাজ্জাজের পাল্লাই ভারি হবে।

হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য মানুষ এতোটাই অধীর ছিল যে, যেদিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন সেদিন ইব্রাহিম নাখয়ি রাহিমাল্লাহু শুকরানা সিজদা আদায় করেছিলেন।

সৌদি আরবের রাজ পরিবারের নিষ্ঠুরতা দেখে আজ জালিম শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কথা মনে পড়ে গেল। আমি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের জালিমশাহী শাসন দেখিনি, কিন্তু আমি দেখছি আল সৌদ পরিবারের জুলুম এবং মুসলিম উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

সৌদি আরবের রাজপরিবার মূলত তাদের জালেমশাহীর চেহারা প্রদর্শন শুরু করে আরব বসন্তের পর থেকে। আরব বসন্তের কারণে মিশরে যখন স্বৈরতন্ত্র বিদায় হয়ে সেখানে মুসলিম ব্রাদারহুড শাসন ক্ষমতায় চলে আসল, তখনই তারা আসল চেহারায় আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করল। তারা মিশরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করল। এই চক্রান্তে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে, আর কার্য সম্পাদন করেছে ইসরাইল। এ কথা এখন ওপেন সিক্রেট। বিশ্বের সবাই মোটামুটি জানে।

এরপর বর্তমান বাদশাহর ছেলে মুহাম্মদ বিন সালমান যখন ক্রাউন প্রিন্সের দায়িত্বভার গ্রহণ করে, কার্যত বাদশাহ বনে গেল তখনই সৌদি রাজ পরিবারের নগ্নতা প্রকাশ পেতে লাগল। তারা মুসলিম ব্রাদারহুড ইস্যুতে কাতার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরা বন্ধ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করল। অন্যদিকে মিশরের স্বৈরাচার সিসি সরকার তাদের পাপেট আদালতে মুসলিম বিশ্বের কতৃপক্ষ হিসেবে খ্যাত বর্ষীয়ান আলেম শায়খ ইউসুফ আল কারজাভীকে সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা দিল এবং অবিলম্বে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি দিল। আর এটা বাস্তবায়ন করার জন্য মিশর সৌদি আরবের সহায়তা নিয়ে কাতার সরকারকে ইউসুফ আল কারজাভীকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলল। কিন্তু কাতার না আল জাজিরা বন্ধ করেছে, আর না শায়খ ইউসুফ আল কারজাভীকে ফিরেয়ে দিয়েছে। যার কারণে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত এক জোট হয়ে কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করে এবং সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করে।

অন্যদিকে ইয়েমেনে চলছে সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ মদদে নির্যাতন। এই পর্যন্ত যদি থেমে থাকত তারপরও সহ্য করা যেত। কিন্তু অতি সম্প্রতি আরব আমিরাত দখলদার ইসরাইলের সাথে একটি চুক্তি করেছে। এই চুক্তির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনে সৌদি আরব বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে চাপ দিচ্ছে। উল্লেখ্য, এই ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছে। আর যারা সৌদি সরকারের চাপ মোকাবেলা করার মত সামর্থবান নয়, তারা সৌদি সরকারের অন্যায় চাপের কাছে মাথানত করছে।

এতোসব কিছুকে অতিক্রম করেছে, গত শুক্রবারের খুতবা। গত শুক্রবার মসজিদুল হারামের খুতবায় ইমাম সুদাইসি ইসরাইলের সাথে চুক্তির স্বপক্ষে বয়ান দিয়েছেন। এমনকি এই কাজে সমর্থন দেওয়ার জন্য মুসলিম বিশ্বকে আহব্বান জানিয়েছেন।

মসজিদুল হারাম থেকে এমন একটি আহব্বান কখনো শুনতে হবে তা আমি কল্পনাও করিনি। এ যেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফকেও হার মানালো মুহাম্মদ বিন সালমান। আমার বিশ্বাস, হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মৃত্যুতে মুসলিমরা যেমন শোকরানা নামাজ পড়েছিল, এই সৌদি রাজ পরিবারের পতন যেদিন হবে, সেদিনও মুসলিমরা শোকরানা নামাজ পড়বে।

পঠিত : ৬১৭ বার

মন্তব্য: ১

২০২০-০৯-০৭ ২১:৩৭

User
রেদওয়ান রাওয়াহা

যথাযথ মর্যাদায়

submit