অহংকার : জান্নাত পাওয়ার অন্তরায়
তারিখঃ ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২১:২৬
চারদিকে যেনো আজ দাম্ভিকতার মহড়া! অহংবোধের ছড়াছড়ি সর্বত্র! কেউকাউকে পাত্তাই দিচ্ছে না! মূল্যায়ন করছেনা একে অন্যকে! জ্ঞান-গরিমা, অর্থ-সম্পদ,পদ-পদবী,নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের গরমে এগুলোর অধিকারীদের কাছে জনতার ভেড়া দায়!
সাধারণ জনতা তো পরের বিষয় -স্বাভাবিকভাবে যাঁরা এসবে একটু এগিয়ে তাঁরা-ই তাঁদের মতো তথা কিছুটা সমমানের লোকদেরও অনেকক্ষেত্র অবজ্ঞা করছে!এড়িয়ে যাচ্ছে। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখছে!ক্ষুদ্রজ্ঞান করছে। আহা,কী এক নিদারুণ অহংকার! কী বিজবিজে পরিস্থিতি।
এই যে এতো অহংকার এতো বড়াই, পদের বড়াই টাকার বড়াই সৌন্দর্য-শক্তির বড়াই, বিদ্যে-বংশীয়-সামাজিক এবং আভিভিজাত্যের বড়াই; এগুলো কোনটা আসোলে আমার, কোনটা স্থায়ী? এগুলোর পরিণাম কী? ফলাফল কী?
কখনো ভেবে দেখেছেন কি?
আচ্ছা আমাদের এই অহংকারের পরিণাম-ফলাফল সম্পর্কে জানা উচিত নয় কি?
এর পরিণাম কী এবং কোথায় মহাবিশ্বের মহাবিশ্বয় আলকুরআন ও মানবতার মহান দরদী নবি (সঃ)এর পবিত্র ঘোষণাপত্র হতে জেনে নেয়া উচিত! তা হলে হয়তো-বা আমাদের কাষ্ঠকঠিন হৃদয়টা কিছুটা হলেও কুসুম কোমল হবে। চলুন শুরু করা যাক তা হলে....
“অহংকার পতনের মূল”-এই প্রবাদটি জন্মলগ্ন থেকে শুনে আসছি আমরা। কিন্তু আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন এবং তাঁর রাসূল (সা) এ ব্যাপারে কী বলেছেন তা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। জানলেই তো মানা যায়। এইজন্যই ইসলাম জানাটাকে আগে ফরজ করেছে। জানা থাকলে কেউ কখনো কোনোভাবে অনুভূতি সৃষ্টি হলে মানতে পারে। চলুন, জানার চেষ্টা করি কুর’আন ও সুন্নাহ কী বলে এই ব্যাপারে!
আল্লাহ যা বলেছেন :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁর প্রেরিত মহাবিশ্বের বিস্ময়কর মহাগ্রন্থ আলকুরআনে তাঁর ঘোষণা হলো তিনি অহংবোধে পড়ে থাকে, অহংকার করে এমন মানুষকে তিনি পছন্দ করেন না। তিন বলেন,
''নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ''(সূরা লুক্বমান :১৮)
অহংকার জান্নাত পাওয়ার অন্তরায়। অহংকারীর স্থান জাহান্নাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দৃঢ় ঘোষণা,
"সুতরাং, তোমরা দ্বারগুলো দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করো, সেখানে স্থায়ী হবার জন্যে; দেখো অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট।”[সূরা নাহল; ১৬:২৯]
অযথা অহংকার অহংবোধে ঘিরে থাকা ব্যক্তি কখনো সফল হবে না। ধ্বংস হবে তার চিরস্থায়ী আখিরাতের চিরসবুজ সেই জান্নাতের বাগানটি। মানে সে সফলতার ছোঁয়া পাবে না কষ্মিণকালেও!
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী হলো,
....তাদের আছে শুধু অহংকার, যা সফল হবার নয়। [সূরা আল-মু’মিন; ৪০:৫৬]
আর মুমিনগণের সফলতার স্থান তো পরকালই। তাই না? অহংবোধে মজে থাকা মানুষ তো সেখানে ব্যর্থ হবেই।
মহানবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর অমিয় বাণী :
আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলোকদীপ্ত অন্যতম ধীমান একজন সাহাবী আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা)। তিনি বলেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা) বলেছেনঃ
“যার অন্তরে অণু পরিমান অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।” এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলঃ যদি কেউ সুন্দর জামা আর সুন্দর জুতা পরিধান করতে ভালবাসে? তখন নবী করীম (সা) বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। অহংকার মানে হল সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা।” [সহীহ্ মুসলিম; কিতাবুল ঈমান, অধ্যায়ঃ ১, হাদীস নম্বরঃ ১৬৪]
উপরে বর্ণিত চিরসত্যের আধার, চিরসত্যের উৎস আলকুরআন ও আলহাদিস থেকে যে দীপ্ত এবং দৃপ্তময়ী ঘোষণা আমরা পাই, তা থেকে এখন এটা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে,অহংকারের ছিঁটে-ফোঁটা থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।
এই যে অহংকার, এটা মানুষকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং চিরসবুজ জান্নাতের বাগানের খেজুর খাওয়ার আমাদের সুন্দর সোনালি যে স্বপ্ন-সাধ সেই স্বপ্ন-সাধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়! তা হলে আমরা কী করবো, অহংকারী হয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের সবুজ আঙিনায় বিচরণ করা হতে বঞ্চিত হবো নাকি অহংকারকে দুমড়ে মুচড়ে থেতলে ফেলে আমরা নিরহংকার একজন বিনয়ী বান্দা হবো? অবশ্যই বিনয়ের ভূষণের মালিক হবো। ইন শা আল্লাহ!
||অহংকার : জান্নাত পাওয়ার অন্তরায়- ০১||
-রেদওয়ান রাওয়াহা
মন্তব্য: ০