Alapon

ইমাম আবু হানিফা: বস্ত্র ব্যাবসায়ী থেকে যুগশ্রেষ্ঠ আলিম!


ইমাম আবু হানিফা, বিশ্বজোড়া এক প্রসিদ্ধ নাম। তাঁর প্রকৃত নাম নুমান। উপনাম আবু হানিফা। পিতার নাম সাবিত। পুরো নাম নুমান ইবনু সাবিত ইবনি যুতি আল-মারযুবান।

ইমাম আবু হানিফার বাবা সাবিত ছিলেন একজন্য বস্ত্র ব্যাবসায়ী। ইমাম আবু হানিফা কিশোর বয়স থেকেই বাবাকে ব্যাবসায় সাহায্য করতেন। যখন ইমাম আবু হানিফার বয়স ১৬ বছর তখন তাঁর বাবা ইন্তেকাল করেন। বাবা ইন্তেকাল করার পর বস্ত্র ব্যাবসার পুরো দায়িত্ব ইমাম আবু হানিফার কাঁধে চলে আসে। এরপর খুব অল্প সময়ের মাঝেই ব্যাবসায় বেশ ভালো করেন।

একদিন ইমাম আবু হানিফা বাজার দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন, এমন সময় একজন বয়োবৃদ্ধ তাঁর পথ আটকে দাঁড়ালেন। সেই বৃদ্ধা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বৎস, তোমার পরিচয় কী? তোমাকে প্রায়শ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে দেখি? তুমি কী করো?’
ইমাম আবু হানিফা সেই বৃদ্ধের প্রশ্নের জবাবে বললেন, ‘আমি একজন বস্ত্র ব্যাবসায়ী। ব্যবসা করি আর এর ফাঁকে ফাঁকে কিছু ইলম চর্চা করি।’
তখন সেই বৃদ্ধ বললেন, ‘এটা তো জ্ঞান অর্জনের বয়স। তুমি কি কোনো আলিমের জ্ঞানের মজলিসে বসো না?’
ইমাম আবু হানিফা বললেন, ‘ব্যাবসার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তেমন কোথাও বসতে পারি না।’
তখন সেই বৃদ্ধ বললেন, ‘জ্ঞান অর্জনে মনোযোগি হও। আলিমদের মজলিসে যাতায়াত করো। তোমার চেহারায় আমি প্রতিভার স্ফুরণ দেখতে পাচ্ছি।’

ইমাম আবু হানিফাকে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহ যোগানো সেই বৃদ্ধ ছিলেন, বিখ্যাত আলিম ইমাম শাবি রাহমাল্লাহু। ইমাম শাবির পরামর্শে‍ ইমাম আবু হানিফা দারুণ প্রভাবিত হন। এরপর থেকে তিনি ব্যাবসার উদ্দেশ্যে বাজারে যাতায়াত কমিয়ে দিলেন এবং জ্ঞান চর্চায় মনোযোগি হলেন। তিনি জ্ঞানচর্চায় এতো বেশি মনোযোগি ছিলেন যে, মাত্র ২০ বছর বয়সে ধর্মতত্ব বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।

একবার ইমাম আবু হানিফা এবং তাঁর উস্তাদ ইমাম আমাশ রহ. মজলিসে বসে ছিলেন। এমন সময় সেখানে একজন ব্যক্তি আগমন করে এবং ফিকহি বিষয়ে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। তখন ইমাম আমাশ ইমাম আবু হানিফাকে পরীক্ষা করার জন্য বলেন, উত্তরটা তুমি দাও দেখি। ইমাম আবু হানিফা সেই প্রশ্নের যথোপযুক্ত জবাব দিয়ে দিলেন । তখন ইমাম আমাশ ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন। আর জিজ্ঞেস করলেন, এই প্রশ্নের উত্তর তুমি জানলে কীভাবে?
তখন ইমাম আবু হানিফা বললেন, ‘আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি।’
এরপর ইমাম আবু হানিফা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইমাম আমাশ বর্ণিত বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন। এতে ইমাম আমাশ রহ. অভিভূত হয়ে বলেন, ‘আমি গত এক বছরে যা বর্ণনা করেছি, আপনি তো এক মুহুর্তেই সব বলে দিলেন। আসলে আপনারা ফকিহরা হলেন ডাক্তার, আর আমরা হলাম ফার্মাসিস্ট।’

এরপর একদিন ইমাম আবু হানিফা নিজের মজলিসে বসা ছিলেন, এমন সময় একজন মহিলা এসে তালাকের বিধান জানতে চান। পাশেই ছিল ইমাম হাম্মাদের মজলিস। ইমাম আবু হানিফা বলেন, আপনি ইমাম হাম্মাদের কাছে এই প্রশ্ন করুন। তারপর তিনি কী উত্তর দেয়, আমাকেও জানাবেন।

তারপর সেই ইমাম হাম্মাদের মজলিসে গমন করে এবং উত্তর নিয়ে ফিরে আসে। সেই মহিলার মুখে ইমাম হাম্মাদ বর্ণিত ফতোয়া শুনে ইমাম আবু হানিফা বলেন, ‘ধর্মতত্ব বাদ দিয়ে এবার আমাকে ফিকহের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।’ এরপর থেকে তিনি ইমাম হাম্মাদের মজলিসে নিয়মিত ছাত্র হয়ে যান। তিনি ইমাম হাম্মাদের মজলিসে যখন ছাত্র হিসেবে জ্ঞান চর্চা শুরু করেন, তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর। ইমাম হাম্মাদ ছিলেন কুফার মসজিদের ইমাম। এরপর ইমাম আবু হানিফার বয়স যখন ৪০ বছর তখন ইমাম হাম্মাদ মৃত্যুবরণ করেন। ইমাম হাম্মাদের মৃত্যুর পর কুফার মসজিদের প্রধান ইমাম হন ইমাম আবু হানিফা রহ.।

এভাবেই ইমাম আবু হানিফা নিছোক একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী থেকে যুগশ্রেষ্ঠ আলিমে পরিণত হন।

পঠিত : ৫৯৩ বার

মন্তব্য: ০