Alapon

|| টাইম ম্যানেজমেন্ট পর্ব-(৩) ||



আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না;
◾------------------------------------------◾

সাদেকীন সাহেব তো মহা আনন্দে আছেন৷ তার কাজগুলো মোটামুটি টাইমলি হচ্ছে। কোন কিছু মিস হচ্ছে না৷ এরমধ্যে বউয়ের সাথে ঝগড়া মিটমাট হয়ে গেছে৷ এই ঝগড়া মিমাংসায় বেশি দেরি করা উচিত বলে মনে করেনি সে।

.

কিছু কাজে কালক্ষেপণ করা গেলেও
এই কাজে দেরি করা বুদ্ধিমানের কাজ না।

.

কারন মনোমালিন্যকে যত স্পেস দেয়া হয় সেটা তখন আরো বেশি জায়গা দখল করতে থাকে। তাই সাদেকীন সাহেব খুব দ্রুতই নিজের ভুল স্বীকার করে বউয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুললো এবং এতে সে বেশি সময় নিল না।

.

কিন্তু ক'দিন পর.........সে এখন পড়লো নতুন একটা সমস্যায়। বেশি দিন এই ভাবে তার চলতে ভালো লাগছে না। মানে রুটিন করাতো সহজ, কিন্তু প্রতিদিন টাইম টু টাইম সেটা মেনে চলতে আর ভালো লাগছে না। প্রথম প্রথম খুব উৎসাহ থাকে। সবকিছুতে নিজেকে পারফেক্ট লাগে।

.

কিন্তু এখন আর উৎসাহ আসতেছে না। কিছু মানা হচ্ছে কিছু মানতে ইচ্ছে করছে না। মাঝে মাঝে তো মনে হচ্ছে ভালোই লাগছে না এত নিয়ম কানুন। খুব আড়ম্বর করে শুরু করেছিলো সব কিন্তু এখন আর কাজ করতে ইচ্ছে করছে না৷ ঢিলেমি চলে এসেছে আবার৷

.

এই সমস্যাটা আমাদের সবার হয়। কদিন খুব মহাউৎসাহ নিয়ে সব রুটিন মেনে চলি আমরা কিন্তু কটা দিন যেতেই স্লো হয়ে যায় সব কিছু।

এই সমস্যার কারন হলো তিনটি
---------------------------------
|| অতিরিক্ত পারফেকশন খোঁজা ||

|| আকাশ চুম্বি রুটিন ||

|| হেল্পিং হ্যান্ড এর অভাব ||

.

অতিরিক্ত পারফেকশন খোঁজাঃ
----------------------------------◾

অতিরিক্ত পারফেকশন খুঁজতে গিয়ে বা নিজেদেরকে একদম পারফেক্ট বানাতে গিয়ে আমরা হতাশ হয়ে যাই। "এই এইটা ত ঠিক করে মানা হল না", "এইটা ত একটু এদিক সেদিক হলো"। ব্যছ হাল ছেড়ে দেই আমরা। ভাবি কিছু হবে না আমাকে দিয়ে।

এটা মাথায় রাখতে হবে এক মাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউই পারফেক্ট নয়। আর মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন দুর্বলভাবে (সূরা নিসা ২৮)। মানে আমাদের যেকোন কাজেই খুঁত, ভুল থাকবেই।

তবে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শ্রম নির্ভর ভাবেই সৃষ্টি করেছেন (সূরা বালাদ ০৪)। তাহলে আমরা কখনোই একদম পারফেক্ট না হতে পারলেও পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। রুটিনে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে ভুল হতেই পারে।

এক্ষেত্রে নিজেকে একজন সফল ম্যানেজার হিশেবে প্রমান করতে হবে। একজন ম্যানেজার যেভাবে সবকিছু দক্ষ ভাবে হ্যান্ডেল করেন আপনাকেও সেভাবেই সমস্যা ফেইস করতে হবে এবং সমাধানে এগিয়ে যেতে হবে। হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।

যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেবো, যা তারা করত। (সুরা আন নাহল, আয়াত: ৯৭)।

রুটিন পারফেক্ট হলেও আমরা হয়তো পুরোপুরি পারফেক্ট নই। এটা মানতে হবে। আমরা আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। পবিত্র জীবন ও উত্তম কাজের পুরুষ্কার আল্লাহ তায়ালা দিবেন।

.

আকাশ চুম্বি রুটিনঃ
------------------------◾

একদিনে সব করে ফেলবো এমন একটা ভাব থাকে আমাদের সবার মাঝে। যার ব্যতিক্রম সাদেকীন সাহেবও নন। একদিনে কখনো সব অভ্যাস হুট করে আয়ত্ত করা যায় না। আর বাস্তবতা বিবর্জিত রুটিন করলেও তার থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না।

আপনি রুটিন করবেন, সেখানে টাইম ম্যানেজমেন্টকে গুরুত্ব দিবেন। রুটিনের প্রতিটা জিনিস ধীরে ধীরে রপ্ত করবেন। একদিন সব মানা হয়ত পসিবল, কিন্তু বেশি দিন সেটা ধরে রাখতে পারবেন না৷ প্রথমে প্রডাক্টিভ সকালের অভ্যাস করতে হবে।

সেই অভ্যাস রপ্ত হলে ধীরে ধীরে বাকিগুলো করবেন। একদিনে আকাশ ছোয়া যায় না। ধীরে ধীরে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা মরিচা গুলো ভাংতে হলে আস্তে আস্তে অভ্যাস গুলো রপ্ত করতে হবে। বর্তমান অবস্থার সাথে মিল রেখে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হবে।

.

হেল্পিং হ্যান্ডের অভাবঃ
--------------------------◾

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে। এরকম একটা কথা বাংলা সমাজে প্রচলন আছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি আপনি যখন দীর্ঘদিনের অলস নিয়ম ভেংগে নতুন করে রুটিন করে পথ চলা শুরু করবেন তখন পাশে কেউ থাকলে উৎসাহ ও সাহস পাবেন।

এক্ষেত্রে সাদেকীন সাহেব ঠিক করলো তার বউয়ের সাহায্য নিবে। তাহাজ্জুদে উঠার জন্য সে বউয়ের সাহায্য চাইলো। দুজন মিলে তাহাজ্জুদ পড়ার পরিকল্পনা করলো। তাহাজ্জুদ থেকে সকালের নাস্তা করা পর্যন্ত প্রডাক্টিভ মর্নিং এর রুটিনে সে তার বউকে হেল্পিং হ্যান্ড হিশেবে পেয়ে গেলো।

এক্ষেত্রে আপনি আপনার একজন বন্ধুকে নিয়ে এই পরিকল্পনা করতে পারেন৷ সে আপনাকে তাহাজ্জুদে কল দিয়ে জাগিয়ে দিলো, কিংবা ফজরের সময় এক সাথে মসজিদে গেলেন, সকালে ব্যয়াম বা হাটাহাটির জন্যেও তাকে সংগী বানিয়ে নিলেন।

তাহলে কি হবে? আপনি কাজের উৎসাহ হারাবেন না। হারিয়ে ফেললেও আপনার সংগীকে পেয়ে আবার উৎসাহ ফিরে পাবেন। এক্ষেত্রে এই বিষয়টা পরিবারের মানুষকে নিয়ে করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। সবাই মিলে করলে দেখবেন আপনার আর হতাশ লাগছে না।

.

পরিশেষে বলতেই হয় একটা সুন্দর জীবন ও দীর্ঘদিনের আনপ্রডাক্টিভ অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে গেলে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। দৃঢ়তার সাথে কাজে লেগে থাকতে হবে। শুধু ঢাক ঢোল পিটিয়ে বসে থাকলে হবে না এবং মাঝপথে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, "হে ঈমানদানগণ, ধৈর্য্য ধারণ করো এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন করো। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ২০০)।

.

|| টপিকঃ লাইফ স্টাইল পর্বঃ (৩) ||
লেখাঃ সিফাত সাদেকীন চৌধুরী (রোদ)
--------------------------------------------◾

পঠিত : ১১৭৯ বার

মন্তব্য: ০