Alapon

অণুগল্পঃ শুদ্ধজীবন



হুরায়রা নতুন বাসায় উঠেছে। সুন্দর ফ্ল্যাট। ঢাকায় আজকাল ব্যাচেলর ভাড়া দিতেই চায়না। বাড়িওয়ালাকে হাতে পায়ে ধরে মা বাবার সাথে কথা বলিয়ে হুরায়রা এই বাসা ব্যবস্থা করেছে। সাথে গুনতে হয়েছে অনেক টাকার এডভান্স।

সে জানে ব্যাচেলরদের কেন ভাড়া দিতে চায় না বাড়িওয়ালারা। সে পড়াশুনা শেষ করে বিয়ে করবে। পাচ ওয়াক্ত সলাতে সে আল্লাহ তায়ালার কাছে উত্তম রিযিক আর চক্ষু শীতলকারী স্ত্রীর জন্য প্রার্থনা করে।

নতুন ঘর গুছানো শেষ। টিপটপ ছেলে হুরায়রা। আসরের সময় হয়ে গিয়েছে ঘর গুছাতে গুছাতে। গোসল শেষ করে সলাত আদায় করলো হুরায়রা। চারপাশ দেখার জন্য একটু জানালায় দাড়ালো। গিঞ্জির এই শহরে জানালাই দম ফালানোর জায়গা।

পাশের বাড়ির ছাদ খুব কাছে। হুরায়রার ফ্ল্যাট থেকে খুব ভালো ভাবেই পাশের অনেকগুলা ছাদ দেখা যায়। ঢাকা শহরে দেখা যায় না শুধু বিশাল আকাশ৷ আকাশটা ঢাকাই থাকে ইট কাঠ আর বালুর শহরে।

পাশের ছাদে অনেক মেয়ে উঠেছে। কেউ মোবাইল টিপছে। কেউ এদিক সেদিক ঘুরছে। একটা মেয়ে, দেখলে মনে হবে ইন্টার বা অনার্স পড়ে সে হুরায়রাকে জানালায় দেখে দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য বারবার তাকাচ্ছিলো। হুরায়রা জানালার পর্দা টেনে সরে পড়লো। বই নিয়ে বসলো। সামনে সেমিস্টার ফাইনাল।

মেয়েটির নাম হল তিথী। তিথী এবার অনার্স এ পড়ে। খুব স্মার্ট তরুনী। পাশে বাড়িতে নতুন ছেলে আসাতে সে খুব কৌতুহলী হলো। প্রায় ই সে ছাদে উঠলে জানালার দিকে উকি দেয় হুরায়রা কে দেখতে। ভাবে ছেলেটার এত ভাব কেন? দেখলেই পর্দা টানিয়ে সরে যায়।

তিথীর খুব বিরক্ত লাগলো। অপমান ইগো সব কাজ করলো। সে প্রায় ই বিকেলে হুরায়রাকে জানালায় খুজে। হুরায়রা জানালার কাছে তিথীকে দেখলেই উঠে গিয়ে পর্দা টেনে দেয়। একদিন পর্দা টানতে গেলে তিথী বলে বসলো, এত অহংকার কেন? কেউ তুলে নিয়ে যাবে নাকি আপনাকে?

হুরায়রা কিছু বলল না, বড় একটা আর্ট পেপারে কিছু একটা লিখে পর্দার অপাশ থেকে তিথীর দিকে ধরে রাখলো। তিথী পড়লো লিখাটা। লিখাটা পড়ে তিথী চুল কপাল থেকে সরিয়ে অবাক হয়ে পর্দার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর চলে গেলো। তিথী এরপর কখনো আর ছাদে উঠেনি।

হুরায়রা সেদিন বড় আর্ট পেপারে লিখেছিলো, "আমার রব! আমাকে কোন বেগানা নারীর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকার অনুমতি দেয় নাই।"

লেখাঃ সিফাত সাদেকীন চৌধুরী
-------------------------------------◾

পঠিত : ৮০৬ বার

মন্তব্য: ০