Alapon

মধ্যমপন্থী উম্মত

রাসূল (সল্লালাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরো জীবদ্দশায় সাহাবীদের (রাদিআল্লাহু আনহুম) খুব কঠোর হয়ে সর্বদা নিজের ব্যবহার প্রদর্শন করেননি। এমনটি হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওনার কাছে দ্বীন শিখতে সাহাবীরা আসতে চাইতেন না। রাসূল (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বরং একটা স্ট্রাটেজি ম্যান্টেইন করতেন। ওনি কঠোরতার স্থলে কঠোর হতেন, নম্রতার স্থলে সর্বোচ্চ নম্র হতেন। যখন জিহাদের জন্য সাহাবায়ে কিরামদেরকে নির্দেশ দিতেন তখন ছিল একটা ভঙ্গি আর যখন দ্বীনের নানান বিষয় শেখাতেন তখন ছিল আরেক রকম। সুবহানাল্লাহ।

কুরআনে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমাদের একটি ঘোষণা দিয়েছেন। ঘোষণাটি আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে, রাব্বুল ইজ্জাত ওয়া জালাল বলেন;

এমনি ভাবে আমি তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছি মধ্যমপন্থী উম্মাত হিশেবে।
(সূরাহ বারাকাহ : ১৪৩)

আল্লাহ আমাদের কুরানিক ভাষায় 'উম্মাতান অসাতান' হতে বলেছে। যার বাঙলা শাব্দিক অর্থ - 'মধ্যমপন্থী উম্মত'। মধ্যমপন্থা কী?

ঐ যে নবীজি (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় জীবনে একটা নির্দিষ্ট স্ট্রাটেজি ফলো করেছেন সেটা। দ্বীনের মধ্যে কোনরূপ বাড়াড়াড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি কোনটিই রাখেননি। বরং আল্লাহ কর্তৃক বিধানকেই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তারমানে বুঝা গেল আমাদের প্রিয় নবী (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি মধ্যমপন্থী নবী।

আপনি যদি কুরআন আর পবিত্র হাদীসের জিহাদ, কঠোরতা আর তেজস্বী ভাষ্যগুলোকে এক করে আমার সামনে উপস্থান করে বলেন, এই নিন আপনার দ্বীন তো আপনাকে এই এই পাঠ শিক্ষা দেয়! তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি আপনার সামনে প্রিয় নবীর নম্রতা, সহনশীলতা আর মিষ্টি ব্যবহারগুলো উপস্থাপন করে একই কথা আপনাকে বলব।

এখানে আপনি আমি দুইজনই ভুল! দুইজনই একটি ছেড়ে আরেকটি গ্রহণ করেছি। কিন্তু নাবী (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুরো জীবন দুটি গুনের সমন্বয় ছিল। আমাদের রোল মডেল খতামান নাবিয়্যিন (সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কঠোরতার স্থলে কঠোরতা আরোপ করেছিলেন আর নম্রতার স্থলে নম্রতা কিংবা শিথিলতা। এটাই মধ্যমপন্থা কিংবা 'ওয়াতিয়্যাহ'র পথ।

কিন্তু বড় আফসোসের ব্যাপার হল, ইদানীংকালে আমরা মধ্যমপন্থাকে অবজ্ঞাসূচক বাক্য হিশেবে ব্যবহার করছি। এই নীতি (মধ্যমপন্থা) অবলম্বনকারী আলেমদের নিজেদের মতো করে গালাগলি করছি, যাচ্ছেতাই বলে দিচ্ছি। উপরন্তু যারা মধ্যমপন্থার কথা বলে তাদের নানা ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। কিন্তু ইসলাম আমাদের 'মধ্যমপন্থা' শেখায়।

ভিন্নমতকে সহ্য করা, ভিন্নমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। ইসলামি সকল শাখাগত পার্থক্যকে ভুলে নিজেদের তাওহীদবাদী বানানোর চেষ্টা আমরা করি না। রবং পরস্পর গালাগালি, অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করা, কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি ইত্যাদিকে আমরা আমাদের দ্বীনে ঢুকিয়ে ফেলেছি।

মনে রাখতে হবে 'কট্টরপন্থীতা আমাদের অন্ধ বানিয়ে দেয়'।

[উম্মাতান অসাতা - মধ্যমপন্থী উম্মত]

পঠিত : ৫৬৮ বার

মন্তব্য: ০