Alapon

ইমাম আবু হানিফা: শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন অনন্য...


ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাল্লাহু। তিনি ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রাহিমাল্লাহুর বিখ্যাত ছাত্রদের একজন।

ছাত্র অবস্থায় একদিন আবু ইউসুফ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার অসুস্থতার কথা শুনে ইমাম আবু হানিফা চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং হন্তোদন্ত হয়ে তার বাড়ির পানে ছুটেন। এভাবে তিনি নিয়মিতই আবু ইউসুফের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন।

এর মাঝে একদিন আবু ইউসুফ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার অসুস্থতার মাত্রা দেখে ইমাম আবু হানিফা বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি ভীষণ আফসোসের সাথে বললেন, ‘আবু ইউসুফ! আমি ভেবেছিলাম তুমিই আমার স্থলাভিষিক্ত হবে। কিন্তু তোমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে মুসলিম উম্মাহ তোমার জ্ঞানের খিদমত থেকে বঞ্জিত হবে। উম্মাহ জ্ঞানের একটি বড়ো রত্ন হারাবে।

কিছুদিন পর আবু ইউসুফ আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে উঠলেন। সুস্থ হওয়ার পর ইমাম আবু হানিফা তার ব্যাপারে যে মন্তব্য করেছিল, সেগুলো তাকে বারবার ভাবাচ্ছিল। সেই ভাবনা থেকেই তার মনে আমিত্ববোধ জেগে ওঠে। আর সেই আমিত্ব থেকে আবু ইউসুফ ইমাম আবু হানিফার মজলিস ত্যাগ করে নিজেই মজলিস খুলে দারস দেওয়া শুরু করলেন।

এ কথা শোনার পর ইমাম আবু হানিফা কিছুটা ব্যাথিত হলেন। এরপর তিনি এক ব্যক্তিকে গোপনে ডেকে বললেন, তুমি আজ আবু ইউসুফের মজলিসে গিয়ে বসবে। তারপর তাকে একটা মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করবে। মাসয়ালাটা হল, ‘এক লোক ধোপাকে কাপড় পরিষ্কার করতে দিয়েছে। তারপর সেই কাপড় নিতে গেলে ধোপা কাপড় দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং কাপড়টি নিজের বলে দাবি করে। এর কিছুক্ষণ পর সে সেই কাপড়ের দাবি ছেড়ে দেয় এবং কাপড়টি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় ধোপাকে কি কাপড় ধোয়ার মজুরি পরিশোধ করতে হবে?
ইমাম আবু হানিফা আরও বলেন, ‘আবু ইউসুফ যা-ই উত্তর দিক না কেন, তুমি বলবে, আপনার উত্তরটি সঠিক নয়।’

এরপর সেই লোক আবু ইউসুফের মজলিসে চলে যান এবং উপরোক্ত প্রশ্ন করে মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করেন। আবু ইউসুফ বিষয়টা শুনে একটা উত্তর দেন, কিন্তু প্রশ্নকারী বলেন, আপনার উত্তরটি সঠিক নয়।
আবু ইউসুফ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেলেন। তারপর আবু ইউসুফ ইমাম আবু হানিফার মজলিসে উপস্থিত হয়ে, উক্ত বিষয়ে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করেন। তখন ইমাম আবু হানিফা মুচকি হেসে বলেন, ‘বড় আশ্চর্য লাগে এমন ব্যক্তির জন্য, যে দ্বীন বিষয়ে আলোচনা করে, দারস দেয়; অথচ ইজারা বিষয়ে ছোট্ট একটি মাসয়ালার সমাধান দিতে পারে না।

আবু ইউসুফ ইমাম আবু হানিফার কথা শুনে আড়ষ্ঠ হয়ে যান এবং মাথা নিঁচু করে ফেলেন। তারপর কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলেন, ‘শায়খ, এই মাসয়ালার সমাধান কী হবে?’
তখন ইমাম আবু হানিফা বলেন, ‘এই বিষয়ে সমাধানের জন্য লক্ষ্য করতে হবে, ধোপা কখন কাপড়ের মালিকানা দাবি করেছে! ধোপা যদি কাপড় পরিষ্কার করার পূর্বে মালিকানা দাবি করে, তবে সে নিজের কাপড় মনে করে পরিষ্কার করেছে। সেক্ষেত্রে মজুরি পরিশোধ করতে হবে না। আর যদি কাপড় পরিষ্কার করার পর নিজের মালিকানা দাবি করে, তবে মজুরি পরিশোধ করতে হবে। কারণ, সে খরিদারের কাপড় মনে করেই কাপড় পরিষ্কার করেছে।’

তারপর তিনি মজলিসে উপস্থিত সকল ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণে নিজেকে অন্যের মুখাপেক্ষি মনে করে না, সে যেন নিজের জন্যই দুঃখ আর আফসোস ডেকে আনে।’

সুবহানআল্লাহ! ইমাম আবু হানিফা এভাবেই আবু ইউসুফকে নিজের অহংকার আর অজ্ঞতার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। এরপর আবু ইউসুফ নিজের মজলিস ভেঙ্গে দিয়ে পুনরায় ইমাম আবু হানিফার ছাত্র হিসেবে শিক্ষা নিতে শুরু করেন। এবং এক পর্যায়ে ইমাম আবু হানিফার প্রত্যাশানুযায়ী তিনি ইমাম আবু হানিফার স্থলাভিষিক্ত হন। আর এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাল্লাহু।

ইমাম আবু হানিফা জ্ঞানের দিক থেকে যেমন ছিলেন শ্রেষ্ঠ, তেমনি শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন অনন্য।

পঠিত : ৭৪৩ বার

মন্তব্য: ০